বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া
গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ‘স্পেশাল কেয়ারে’ রাখা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, সোমবার (০২ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৩টার দিকে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর অবস্থার হঠাৎ অবনতি হয়। তারপরই তাকে ‘স্পেশাল কেয়ারে’ নেয়া হয়েছে।
মেডিকেল বোর্ডের ওই সূত্র এ বিষয়ে আর বিস্তারিত বলতে চাননি। তবে তিনি বলেছেন, বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ইতোমধ্যে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অনুকূল হলে তাকে বিদেশেও নেয়া হতে পারে।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে সরকার ইতোমধ্যে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করেছে, যাতে তার নিরাপত্তায় বিশেষায়িত বাহিনী এসএসএফ মোতায়েন করা যায়। সোমবার রাতে এ বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, বসুন্ধরার যে বেসরকারি হাসপাতালে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন, সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে এসএসএফ সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা গত কয়েক দিন ধরেই হাসপাতালের বাইরে ভিড় করছেন, এসএসএফ দায়িত্ব নিলে সেই সুযোগ আর থাকবে না।
এভারকেয়ার হাসপাতালের চতুর্থ তলার একটি কেবিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া। নিরাপত্তাজনিত কারণে ওই তলার বাকি কেবিন খালি করে দেয়া হয়েছে।
চীনের পাঁচ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল ইতোমধ্যে ঢাকায় এসেছে। সোমবার রাতে তাদের এভারকেয়ার হাসপাতালে দেখা গেছে। চীনা চিকিৎসকরা কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছিলেন বলে জানান হাসপাতালের কর্মকর্তারা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, চীন ও সিঙ্গাপুর থেকে মঙ্গলবার আরো কয়েকজন চিকিৎসকের আসার কথা রয়েছে।
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকেও একদল জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক বসুন্ধরার ওই বেসরকারি হাসপাতালে এসেছেন, যেখানে সাবেক সেনাপ্রধান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার জন্য একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিতে সম্মত হয়েছে চীন। তারা তাকে চীনে নেয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে। তবে খালেদা জিয়ার পরিবার, বিশেষ করে ছেলে তারেক রহমান তাকে যুক্তরাজ্যে নিতে চান। গত ১৭ বছর ধরে সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি।
চীন থেকে আসা মেডিকেল টিম খালেদা জিয়ার বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন ও মেডিকেল নথি দেখে বলেছেন, তাকে ‘বিপদমুক্ত করা অসম্ভব নয়’। চীনা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যদি পাওয়া যায়, তাহলে মাঝে জ্বালানি নিতে দুবাই বা অন্য কোনো বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি করতে হবে।
আরও পড়ুন<<>>খালেদা জিয়াকে ভিআইপি ঘোষণা, নিরাপত্তায় পাবেন এসএসএফ
চলতি বছরের শুরুতে কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়াকে সরাসরি লন্ডনে নেয়া হয়েছিল, সে সুবিধা এখানে পাওয়া যাবে না।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল, কিন্তু বুকে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে ভর্তি করে নেয়া হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, তাদের চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ‘সংকটময়’। এরপর প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা খালেদা জিয়ার জন্য দেশবাসীর দোয়া চেয়ে বিবৃতি দিতে থাকেন।
দেশি–বিদেশি চিকিৎসকরা সোমবার রাতে যখন খালেদা জিয়ার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছিলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতারা তখন গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক করছিলেন।
খালেদা জিয়ার পাশের কক্ষে বসে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন দলের স্থায়ী কমিটিকে ব্রিফ করছিলেন; বৈঠকে সভাপতিত্ব করছিলেন লন্ডনপ্রবাসী তারেক রহমান।
বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, তারেক রহমান ঢাকায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং তার জন্য শিগগিরই নতুন বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু হবে বলে তারা আশা করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইতোমধ্যে বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে এক দিনের মধ্যেই ট্রাভেল পাস দেবে সরকার।
তবে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, উপদেষ্টা এককালীন ট্রাভেল পাসের কথা বললেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়েই ফিরতে চান।
সরকার ও বিএনপি সূত্র বলছে, খালেদা জিয়া পরিবারের নিকটতম সদস্য হিসেবে তারেক রহমানও এসএসএফের নিরাপত্তা পেতে পারেন।
এখন চিকিৎসকরা যদি মনে করেন যে তার মায়ের অবস্থা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার উপযোগী, তাহলে তারেককে হয়ত আপাতত আর ঢাকায় ফিরতেই হবে না।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































