ফাইল ছবি
আজ ২৪ নভেম্বর, সোমবার তাজরীন ট্র্যাজেডি দিবস। ২০১২ সালের এ দিনে সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১৭ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। আহত হয়েছিলেন অন্তত দুই শতাধিক। মর্মান্তি এ প্রাণহানির ঘটনায় করা মামলার বিচার ১৩ বছরেও শেষ হয়নি। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরাও পাননি কোনো ক্ষতিপূরণ।
নিহত শ্রমিকদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ভেঙে আহত শ্রমিকদের বাসস্থান, শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণ, নিহত ব্যক্তিদের এক জীবনে আয়ের সমপরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। সে সঙ্গে তারা আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার জন্য দায়ী মালিকসহ অন্যদের বিচার নিশ্চিত করা দাবি তুলেছেন। বেঁচে ফেরা অনেকে আর ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে। এখনও পুনর্বাসিত না হওয়ায় আক্ষেপ আছে আহতদের।
সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়ান ভুক্তভোগী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের স্বজনরা। আহত শ্রমিকরা অনেকে সাময়িক সহায়তা পেলেও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাননি। তাদের করা হয়নি পুনর্বাসন। পোড়া শরীর, পঙ্গু দেহ নিয়ে জীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। জীবিকা নির্বাহে অনেকে শুরু করেছেন নতুন পেশা। তাদের চাওয়া, কারখানাটি ফের চালু হোক। আহতদের বাসস্থান অথবা কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়া হোক।
আহতদের একজন সবিতা রানি। তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের সুইং অপারেটর ছিলেন। ভালো বেতন পেতেন। ঘটনার দিন তিনতলায় ছিলেন। সন্ধ্যায় হঠাৎ বেজে ওঠা কারখানার ফায়ার অ্যালার্ম শুনে আঁতকে ওঠেন। ততক্ষণে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে তার ফ্লোরে। এরপর অনেকের সঙ্গে তিনতলা থেকে লাফিয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে শুরু হয় তার অনিশ্চিত জীবনের পথচলা।
তিনি জানান, দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে পেটের দায়ে কাজে ফিরেছেন। তবে কারখানায় কাজ করার মতো শারীরিক ক্ষমতা হারিয়েছেন। অনেক কারখানায় ঘুরেও কাজ না পেয়ে আহত শ্রমিকদের মধ্যে কয়জনকে নিয়ে একটি কারখানা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুঁজির অভাবে সেটা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন<<>>শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন কি এখানেই শেষ?
সবিতা বলেন, এরপর অনেক কষ্টে একটা সেলাই মেশিন কিনে বাসায় টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করছি। আমার দিন খুব কষ্টে যাচ্ছে। ভারী কোনও কাজ করতে পারি না। ব্যথা-যন্ত্রণায় প্রতিদিন রাতে কান্না করে ঘুমাই। ঘুম নেই। পরিবারের ওপর বোঝা হয়ে আছি। এ জীবন থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর সরকার যে সাহায্য করেছে তা চিকিৎসার পেছনেই শেষ হয়ে গেছে। আমরা সাহায্য চাই না, ক্ষতিপূরণ চাই। কোনও ধরনের ক্ষতিপূরণ পাইনি। সরকার ও বিজিএমইএ যেন একটা ব্যবস্থা করে দেয়। সরকার আশ্বাস দিয়েছে, এগুলো বাস্তবায়ন করলে তাও একটু বাঁচতে পারবো। যারা মরে গেছে তারাই বেঁচে গেছে। আমরা যারা বেঁচে আছি, ধুঁকে ধুঁকে মরছি। ১৩ বছর চলে গেলো, কিছুই পেলাম না।’
সীমা আক্তার নামে আরেক শ্রমিক বলেন, কারখানার জায়গাটি ১৩ বছর ধরে এভাবে ফেলে রেখেছে। এটি হয় চালু করুক, না হয় আমাদের থাকার জায়গা করে দিক। আমরা তো কাজ করতে পারছি না। কোনও সহযোগিতা পাইনি। কিছু টাকা পেয়েছি। কিন্তু আর কাজ করতে পারি না। আমরা কী মানুষ না, আমাদের কী বাঁচার অধিকার নাই। আমাদের দেখার কেউ নাই। নতুন সরকারের কাছে আশা এটাই যে, তারা আমাদের দিকে তাকাবে। আমাদের বিচারের দাবি পূরণ করবে। নভেম্বর এলে ডাকাডাকি করে অনেকে। কিন্তু কিছু পাই না। ঘর ভাড়া, দোকানে বাকি দিতে পারি না। ওষুধের টাকা নাই। আগুনে জীবনটাই শেষ হয়ে গেলো।
অধিকাংশ আহত শ্রমিক পাননি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ বা পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুযোগ। শারীরিক জটিলতা ও কাজ করতে অক্ষমতার কারণে অনেকেই এখন দারিদ্র্য ও মানসিক চাপে দিন কাটাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলছেন।
হতাহতদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে শ্রমিক নেতারা নতুন করে ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও দায়ীদের শাস্তির দাবি তুলেছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের আইন বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই। এ ছাড়া এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।
১৩ বছর পরও তাজরীন ট্র্যাজেডি রয়ে গেছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে শ্রমিক নিরাপত্তাহীনতার এক বেদনাদায়ক প্রতীক হয়ে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































