ফাইল ছবি
প্রথম বারের মতো দেশের কোনো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে রায় ঘোষণা হবে সোমবার (১৭ নভেম্বর)। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করবেন। রায় ঘিরে সবার নজর এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) চূড়ান্ত রায় দেবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিষয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় রায় ঘোষণা করা হবে। যেটি বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে। এছাড়া বিদেশি একটি বার্তাসংস্থা সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি চেয়েছে।
আরও পড়ুন<<>>শেখ হাসিনার মামলার রায় সোমবার, বিশ্বজুড়ে সরাসরি সম্প্রচার হবে
অপরদিকে ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেন। পট পরিবর্তনের পর বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে দেয়া বাতিলের রায় পুর্নবিবেচনা চেয়ে আবেদন করে বিএনপি, জামায়াত এবং ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ ৫ ব্যক্তি। সেই আবেদন আপিলে রূপান্তরিত হয়। এখন ওই আপিলের ওপর ২০ নভেম্বর রায় ঘোষণা করবেন আপিল বিভাগ।
শেখ হাসিনার মামলা
২৩ অক্টোবর শুনানি শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণের জন্য ১৩ নভেম্বর দিন রাখা হয়। এদিন রায় ঘোষণার জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ঠিক করা হয়। শেষ দিনে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ১৭ নভেম্বর আদালত তার সুবিবেচনা, প্রজ্ঞা প্রয়োগ করবেন। এ জাতির বিচারের জন্য যে আকাঙ্ক্ষা, যে তৃষ্ণা সেটার প্রতি তারা সুবিচার করবেন। একটি সঠিক রায়ের মাধ্যমে সংঘঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি ইতি ঘটাবেন এবং ভবিষ্যতের জন্য রায়টি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তেমন একটি রায় প্রত্যাশা করছি।
আর রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের খালাস প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, সব কিছু মিলিয়ে দালিলিক সাক্ষী বির্তক সৃষ্টি (কন্টোভার্সি ক্রিয়েট) করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন সময় দালিলিক সাক্ষীর ওপর বির্তক সৃষ্টি হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি। সব কিছু মিলিয়ে আমি বিশ্বাস করি আমার আসামিদ্বয় খালাস পাবেন।
প্রথমবারের মতো এ মামলার বিচারের অধিকাংশ শুনানির দিনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
আদালতে পলাতক দুই আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। আর প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম।
আরও পড়ুন<<>>শেখ হাসিনার মামলার রায় জাতীয় রাজনীতি কাঁপাচ্ছে
এর আগে গত ১০ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সাবেক আইজিপি মামুন নিজেকে অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হিসাবে যে আবেদন করেছেন, তা মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।
মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের রাজাকারের বাচ্চা ও রাজাকারের নাতিপুতি উল্লেখ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। গুলি করে দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। আহত হন প্রায় ২৫ হাজার।
দ্বিতীয় অভিযোগ, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ও অধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন। গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামাল এবং ১৮ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। দুজনের সঙ্গে কথোপকথনের পৃথক অডিও রেকর্ড থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে মারণাস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনার সেই নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে সব বাহিনীর কাছে দেয়া হয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও তার অন্যান্য অঙ্গসংগঠন এবং ১৪-দলীয় জোটের কাছেও এ নির্দেশ চলে যায়। সেই নির্দেশের আলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। এর দায়ে তাদের (হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুন) বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (সর্বোচ্চ দায়) আওতায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
তৃতীয় অভিযোগ, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
চতুর্থ অভিযোগ, রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও শেখ হাসিনার পাশাপাশি ওই দুজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
পঞ্চম অভিযোগ, শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনের বিরুদ্ধে আশুলিয়ায় নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায়ও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আপন দেশ/এসআর/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।





































