Apan Desh | আপন দেশ

‘এই শহরে মানুষ মরে, দায় কেউ নেয় না’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:২৮, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১২:১৪, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

‘এই শহরে মানুষ মরে, দায় কেউ নেয় না’

ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু ঘটার পর আবারও প্রশ্ন উঠেছে- এ শহরে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? সোমবার সকালে ফার্মগেটে মেট্রোরেলের পিলারের নিচ দিয়ে হাঁটার সময় বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত হন আবুল কালাম, নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা ও দুই সন্তানের জনক। ঘটনার পর মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

সরকার নিহতের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। তবে নগর পরিকল্পনাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কোনও দুর্ঘটনা নয়, বরং ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা জনিত হত্যাকাণ্ড।

ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে অনেকে লিখেছেন- “এ শহরে মানুষের জীবনই সবচেয়ে সস্তা”, “ঢাকায় যে কোনও মুহূর্তে মৃত্যু এসে হাজির হতে পারে।” নাগরিকদের অভিযোগ- ঢাকায় কেউ বিয়ারিং প্যাড পড়ে, কেউ ইট পড়ে, কেউবা ময়লার গাড়ি বা অটোরিকশার ধাক্কায় মারা যাচ্ছেন। অথচ কোনও ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না।

আরও পড়ুন<<>> মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড মাথায় পড়ে পথচারীর মৃত্যু

ঢাকায় এর আগেও এমন বহু আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালের আগস্টে উত্তরায় ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে এক নবদম্পতিও ছিলেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মগবাজারে হাঁটার সময় ওপর থেকে ইট পড়ে ব্যাংক কর্মকর্তা দীপান্বিতা বিশ্বাস দীপুর মৃত্যু হয়। ঢাকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাগুলোর একটি হলো উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩৫ জনের মৃত্যু। চলতি বছরের এপ্রিলে মানিকনগরে অটোরিকশার ধাক্কায় সুমি নামে এক নারী নিহত হন। সম্প্রতি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ও হানিফ ফ্লাইওভারে পুলিশের রেকার গাড়ির চাপায় কাওছার আহামেদ মারা যান। এসব ঘটনার কোনোটিতেই দায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন,‘যাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এসব ঘটে, তাদের কখনোই শাস্তি হয় না বলেই এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। এগুলো হত্যা, দুর্ঘটনা নয়।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক আপন দেশকে বলেন, ‘ঢাকা এখন মানুষের জন্য এক মৃত্যু ফাঁদের শহর। এখানে পথচারী, যাত্রী-কারও জীবনের নিশ্চয়তা নেই। প্রতিটি ঘটনা বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা বলে ধামাচাপা দেয়া হয়।’

আরও পড়ুন<<>> উত্তরায় স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত, আরও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু

নিত্যদিনের জীবনে আতঙ্ক নিয়ে চলছেন সাধারণ মানুষও। পথচারী আমিনুল ইসলাম বলেন,‘ফুটপাতে হাঁটলেও ভয় লাগে-কখন কি মাথায় পড়ে কে জানে।’ নির্মাণ শ্রমিক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘সবসময় মনে হয় কিছু একটা ঘটবে। এ শহরে বাঁচাটাই ভয়।’

বিশ্লেষকদের মতে, দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি, ক্ষতিপূরণ আর সাময়িক আলোচনার মধ্যেই বিষয়গুলো হারিয়ে যায়। যতদিন পর্যন্ত দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করা হবে, ততদিন ঢাকায় আকস্মিক মৃত্যুর এ চক্র থামবে না।

ঢাকা এখন এমন এক শহর, যেখানে ফুটপাতে হাঁটা, রাস্তা পার হওয়া বা ভবনের নিচ দিয়ে যাওয়া- সবকিছুই অনিশ্চিত। ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা ঢাকাকে পরিণত করেছে এক মৃত্যু ফাঁদের নগরে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়