Apan Desh | আপন দেশ

শীতে সুস্থ থাকার উপায়

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:২০, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৮:২১, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

শীতে সুস্থ থাকার উপায়

সংগৃহীত ছবি

শীতকাল শুরু হয়েছে। প্রথম ঠান্ডা হাওয়া এখন অনুভূত হচ্ছে। এ সময়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি, গলা চুলকানো বা জ্বর হওয়া স্বাভাবিক। অন্যদিকে, মশার উপদ্রবও এখনও পুরোপুরি কমেনি।

এ পরিবর্তনশীল আবহাওয়ায় ঝুঁকি বাড়ে। শিশু থেকে বয়স্ক, সবাই অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। তাই কিছু বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। খাওয়া-দাওয়া, পোশাক, ত্বকের যত্ন, ঘুম— সবকিছুর দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। মন ভালো রাখার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

গাজীপুর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কনসালট্যান্ট ডা. ফাহমিদা হক কনক পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি শীতে সুস্থ থাকার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিয়েছেন।

শীত মানেই উৎসবের মৌসুম। এ সময় পিঠে-পুলি আর বিয়ে-পার্বণ থাকে। পেট ভরে খাওয়া হয়ই। তবে অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তেল-মসলাযুক্ত খাবার শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। কাঁচা খেজুরের রস একদম খাওয়া যাবে না। এ কাঁচা রস নিপা ভাইরাসের প্রধান উৎস। এটি খুবই মারাত্মক হতে পারে।

প্রতিদিন তাজা ফল খেতে হবে। পেয়ারা, কমলা, আমলকি, লেবু খুব উপকারী। এই ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।

মনে রাখতে হবে ভিটামিন সি তাপে নষ্ট হয়ে যায়। তাই আচার বা চাটনি করে খেলে ভিটামিন সি-এর উপকারিতা কম পাওয়া যায়।

পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস গড়তে হবে। শীতে তেষ্টা কম লাগে। তবে শরীরের পানির চাহিদা কমে না। পানিশূন্যতা দেখা দিলে ত্বক ফাটবে। ঠোঁটও ফাটতে পারে।

পোশাক পরার ক্ষেত্রে ‘লেয়ারিং’ পদ্ধতি অনুসরণ করুন। অর্থাৎ, একটার ওপর আরেকটা পোশাক পরতে হবে। ঠাণ্ডা বাড়লে আরেকটি পোশাক যোগ করুন। ঘেমে গেলে একটি পোশাক খুলে নিন। এতে শরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

মাথা, কান ও গলা ঢেকে রাখতে হবে। মাথা খোলা রাখলে শরীরের তাপ দ্রুত বেরিয়ে যায়। বাইরে বেরোনোর সময় মাস্ক ব্যবহার করুন। শহরের শুষ্ক ধুলা ও দূষণ ফুসফুসে প্রবেশ করে। এটি কাশি বা শ্বাসকষ্ট বাড়াতে পারে।

হাঁচি-কাশির সময় সাবধান থাকুন। মুখ ঢাকার জন্য টিস্যু ব্যবহার করুন। টিস্যু না থাকলে কনুই দিয়ে মুখ ঢাকুন। মশারি ব্যবহার করা ছাড়বেন না। শীতেও ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি থাকে।

শীতকালে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বক চটা, ফাটা ও চুলকানি হতে পারে। এটি খুবই সাধারণ সমস্যা। প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরি। গোসলের পর ত্বক ভেজা থাকতেই ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।

গোসল বন্ধ করা যাবে না। গোসলের জন্য অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করবেন না। অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে দেয়। রোদে বেরোনোর আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের ক্ষতি কমাবে।

তবে দিনে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সানস্ক্রিন ছাড়া রোদে থাকুন। হাত ও মুখে রোদ লাগান। শীতের কোমল রোদেই শরীর ভিটামিন ডি পায়।

কিছু টিকা শীতকালে বিশেষ সুরক্ষা দেয়। ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের জন্য এই টিকাগুলো প্রয়োজন। যাদের শ্বাসকষ্ট বা ডায়াবেটিস আছে, তাদেরও টিকা নিতে হবে। ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) টিকা: এটি প্রতি বছর নিতে হবে। নিউমোনিয়ার টিকা: এটি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নেওয়া দরকার। শীত শুরুর আগেই এ টিকা নেয়া উচিত।

নবজাতক ও ছোট বাচ্চাদের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। তাদের মাথা সবসময় ঢেকে রাখতে হবে। সুতির টুপি বা কাপড় ব্যবহারই যথেষ্ট। পোশাকের স্তর বেশি দেবেন না। অতিরিক্ত পোশাকে শিশু ঘেমে যেতে পারে। শিশুর ঘাড় বা পিঠে হাত দিয়ে দেখুন। ঘামছে কি না তা পরীক্ষা করুন। ঘামলে তৎক্ষণাৎ একটি কাপড় কমিয়ে দিন।

ঠাণ্ডা মেঝেতে খালি পায়ে হাঁটতে দেবেন না। মোজা বা বুটি পরিয়ে দিন। গোসল দু-তিন দিন পরপর করালেও সমস্যা নেই। তবে গোসলের সময় বেশিক্ষণ গরম পানিতে রাখা যাবে না।

ধূসর আকাশ আর ঘন কুয়াশায় অনেকের মন খারাপ লাগে। একে সিজনাল ডিপ্রেশন বলে। এ সমস্যাকে অবহেলা করবেন না। মন ভালো রাখতে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটান। বই পড়ুন, গান শুনুন, অথবা হালকা ব্যায়াম করুন। প্রতিদিন ঘুমের একটি সঠিক রুটিন মেনে চলুন।

যা একদমই করা যাবে না-

  • কাঁচা খেজুরের রস খাওয়া যাবে না।

  • গোসল বন্ধ করা যাবে না।

  • অতিরিক্ত গরম পানির পাত্র সরাসরি বাথরুমে নেবেন না। বাষ্প যেন না জমে।

  • অতিরিক্ত চা-কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন।

  • গিজার বা হিটার চালিয়ে ঘর বন্ধ করে ঘুমাবেন না। এতে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

শীতকাল উপভোগ করুন। তবে সাবধানতা মেনে চলতে হবে। আপনার সামান্য যত্নই আপনাকে সুস্থ রাখবে।

আপন দেশ/এমবি

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়