
ছবি: আপন দেশ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ৬ ঘণ্টা ধরে জুবেরী ভবনে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে তাদের অবরুদ্ধ করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (রাত ১০টা) জুবেরী ভবনে উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও জনসংযোগ দফতরের প্রশাসকসহ কয়েকজন শিক্ষক অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব তার নিজ বাসভবনে শিক্ষকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে,রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) পূর্ণদিন কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। শিক্ষক অপদস্তের বিচার না হলে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবে তারা। আজ রাত সাড়ে ৯টায় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম, রাবি শাখার সভাপতি অধ্যাপক মো. আব্দুল আলিম এ ঘোষণা দেন।
পূর্ণদিন কর্মবিরতি ঘোষণার পরই অনশনরত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের গেইটে ভাঙচুর চালায়। এর আগে, দিনভর ধরে অনশন করছেন ৭-৮ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও জুবেরী ভবনের কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ক্যাম্পাসে। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে এ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন ছাত্রশিবির-ছাত্রদলসহ বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
রাবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, আর মাত্র চার দিন পর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটি মীমাংসিত ইস্যু—পোষ্য কোটাকে সামনে এনে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আজ এখানে দলমত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে এসেছে। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য— এ অযৌক্তিক পোষ্য কোটাকে আর ফিরতে দেয়া যাবে না।
রাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সরদার জহুরুল বলেন, নির্বাচনের একটা সুন্দর পরিবেশ ছিল। আমাদের শিক্ষকরা সেটাকে বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে গেছেন। তারা যেন মীমাংসার মাধ্যমে পোষ্য কোটা বাতিল করে রাকসু নির্বাচন দেন। ২৫ তারিখেই রাকসু দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে যেন বিশ্ববিদ্যালয় চলে। এটাই আমাদের দাবি থাকবে।
রাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল শাহরিয়ার (শুভ) বলেন, প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি ছিল ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু আজ আমাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে যে হামলা চালানো হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা ঘোষণা করছি যে, পোষ্য কোটা বাতিল ও আমাদের ন্যায্য অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ ভবন ছাড়ব না। পাশাপাশি আমাদের ওপর যে সহিংসতা হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার হওয়া প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য স্যারকে অবরুদ্ধ করে তার বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে আমরা জুবেরি ভবনের লাউঞ্জে বসি। সেখানে শিক্ষার্থীরা আবারও আমাদের বাধা দেয়। আমরা ফিরে গিয়ে পুনরায় আসার পর ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে তারা আবারও বাধা দেয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই আমার হাতের ঘড়ি ও সঙ্গে থাকা ১০ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। ধাক্কাধাক্কি হতে পারে, কিন্তু আমার হাতের ঘড়ি ও ১০ হাজার টাকা হারিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়।
আপন দেশ/এমএইচ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।