Apan Desh | আপন দেশ

জবিতে জুলাই বর্ষপূর্তি উদযাপনে দাওয়াত পায়নি জুলাই যোদ্ধারা

জবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:২১, ৫ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ২১:৪০, ৫ আগস্ট ২০২৫

জবিতে জুলাই বর্ষপূর্তি উদযাপনে দাওয়াত পায়নি জুলাই যোদ্ধারা

ছবি: আপন দেশ

ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তি পালন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। তবে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’-এর অনুষ্ঠানে সে আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা ও আহত শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ না জানানোয় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকে। বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. রইছ উদ্দিন বলেছেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। পরবর্তীতে সবাইকে নিয়ে প্রোগ্রাম করবো।

মঙ্গলবার (০৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায়  বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ মাঠে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শহীদ শিক্ষার্থী ইকরামুল হক সাজিদের মাতা মোছা. নাজমা খাতুন লিপি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যেসব সংগঠন ও শিক্ষার্থী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আহত হয়েছেন কিংবা সামনের সারিতে থেকে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের পুরোপুরি উপেক্ষা করে এ আয়োজন করা হয়েছে। এতে আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জবি শাখার সভাপতি ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থী ইভান তাহসিব বলেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক পট পরিবর্তন হলেও বর্ষপূর্তি আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর মতামত না নিয়ে একতরফাভাবে অনুষ্ঠান করা হয়েছে। যারা রক্ত দিয়েছিলেন, তারাই আজ উপেক্ষিত।

ছাত্র অধিকার পরিষদের জবি শাখার সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, আজ যেসব শিক্ষক ‘জুলাইয়ের চেতনা’ ধারণের কথা বলেন, তারা জানেন—হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকতেন, তাহলে তারাই হয়তো স্বৈরাচারের পক্ষেই দাঁড়াতেন। কিন্তু আমাদের জীবন? তা মুছে দিত সে রাষ্ট্রযন্ত্র। এ আত্মবিস্মৃত প্রশাসনের প্রতি ধিক!

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য সচিব শাহীন মিয়া বলেন, যারা একসময় স্বৈরাচারী শাসনের পক্ষে ছিলেন, তাদের নিয়েই আজকের আয়োজন। প্রকৃত যোদ্ধাদের বাদ দিয়ে এ উদযাপন দুঃখজনক এবং অপমানজনক।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, জুলাই আন্দোলনের মূল যোদ্ধাদের বাদ দিয়ে এমন আয়োজন প্রশাসনের দুর্বলতা ও গাফিলতির বহিঃপ্রকাশ। শুধু রাজনৈতিক সংগঠন নয়, সাধারণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরও জানানো হয়নি।

ছাত্রদলের জবি শাখার আহবায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, আমাদেরকে অনুষ্ঠান সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। সম্মুখসারির যোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্তি না থাকায় আমরা মর্মাহত।

অনুষ্ঠান সঞ্চালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, তবে আমাদের ভুল হয়ে গেছে। পরবর্তীতে আমরা সবাইকে নিয়ে প্রোগ্রাম করবো। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রাম হিসেবে আমরা সকল প্রশাসনিক দফতর প্রধান ও বিভাগের প্রধানদের দাওয়াত দিয়েছি। তবে শিক্ষার্থীদের দাওয়াত দেয়ার ব্যাপারে আমাদের একটা কথা উঠেছিল। পরে আর হয়ে উঠেনি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, আমরা একটি কমিটি গঠন করেছিলাম, যারা সবকিছু যাচাই-বাছাই করেছে। সবার অবদান মূল্যায়ন করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাস্তবতার ভিত্তিতেই অনুষ্ঠান হয়েছে। এ নিয়ে অতিরিক্ত বিতর্ক অনুচিত।

তবে উপাচার্যের এ বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও ত্যাগ স্বীকারকারীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ভাষ্য হচ্ছে, যারা রক্ত দিয়েছিলেন, তাদের বাদ দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো মানেই ইতিহাসকে অপমান করা। আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে উদযাপন না হয়ে, বরং তা যেন ইতিহাসের বিকৃতি ও ত্যাগের প্রতি অবহেলায় পরিণত হয়েছে।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়