ফাইল ছবি
৭৩-এর অধ্যাদেশ সংস্কার ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার।
তিনি বলেন, আমি যদি না থাকি, আপনারা অন্তত ৭৩-এর অধ্যাদেশ পরিবর্তনের ডাক দিন। এ দেশে পরিবর্তন হতে তো রক্ত লাগে। আমার রক্ত ঝরার পর যদি শাহবাগে ভিড় জমিয়ে ৭৩-এর অধ্যাদেশ নিয়ে আওয়াজ তোলেন, তাহলে আগামী ২০ বছরে কোন মানের শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হবে তা বোঝা যাবে।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এসব মন্তব্য করেন তিনি।
স্ট্যাটাসে রাকসু জিএস বলেন, ফ্যাসিস্টের মুরাল রাখব না, নাম রাখব না, এ প্রশ্নে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তখন পর্যন্ত কিছু বলবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের স্বার্থে আঘাত না লাগে। আপনারা এখন মুজিবের সময়ে করা ৭৩-এর অধ্যাদেশের অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা ও সুবিধা বাতিলের কথা বলুন, তখনই আগুন লেগে যাবে। মুজিবের ছবি বা নাম না রাখার দাবি তোলা হয়, কিন্তু তার দেয়া সুবিধা ভোগ করা হয়। এটাই আজকের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নামক পদে বেতনভুক্ত কর্মচারীদের বাস্তবতা।
আরও পড়ুন<<>>‘রাকসু জিএস আম্মারের আচরণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শামিল’
তিনি আরও বলেন, কাজী কাদের নেওয়াজের শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা দিয়ে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিচার করা যাবে না। কারণ এখানে প্রকৃত শিক্ষক কম, শিক্ষক নামক পদে বেতনভুক্ত কর্মচারীর সংখ্যাই বেশি।
৭৩-এর অধ্যাদেশের কয়েকটি ধারা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ওনারা ছাত্রজীবনে হয়তো নির্দিষ্ট দলের রাজনীতি করবে বা ক্ষমতাসীন দলের নেতার পা চেটে সে রেফারেন্সে ভার্সিটির টিচার হবে সে পর্যন্ত ঠিক আছে ধরে নিলাম কিন্তু এরপর শুরু হয় আসল খেলা।
তিনি আরও বলেন, ৭৩-এর অধ্যাদেশের সেকশন ৫৫ (২) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি বা প্রচার চালানো যাবে না, শিক্ষক সমিতিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না, শিক্ষার্থী রাজনীতিকে প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা যাবে না, দলীয় স্বার্থে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলা যাবে না, সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, ক্যাম্পাসের বাইরে চাইলে যে কেউ বৈধ রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড করতে পারবে, কিন্তু ক্যাম্পাসের ভেতরে এসব নিষিদ্ধ। অথচ এ চারটি নিষেধাজ্ঞাই বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষক নিয়মিতভাবে লঙ্ঘন করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শিক্ষক নিয়োগ প্রসঙ্গে রাকসু জিএস বলেন, ক্যাম্পাসে যে নিয়োগগুলো হচ্ছে সেগুলো প্রকৃত অর্থে শিক্ষক নিয়োগ নয়, বরং ভোটার নিয়োগ। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে একজন ভোটার পাওয়া মানেই সেখানে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হয়। তিনি আরও বলেন, ৭৩-এর অধ্যাদেশের সেকশন ৫৫ (৩) অনুযায়ী একজন শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে কেবল নৈতিক স্খলন ও অদক্ষতার কারণে বরখাস্ত করা যাবে। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, বুকে হাত দিয়ে বলুন, ক্যাম্পাসের ১৫ শতাংশ শিক্ষকও কি দক্ষ। বা কয়জন শিক্ষক নৈতিকতার সঙ্গে টিকে আছেন।
সালাহউদ্দিন আম্মার আরও বলেন, নারী কেলেঙ্কারি, অর্থ আত্মসাৎ এবং অধ্যাদেশ লঙ্ঘন এ তিনটি মানদণ্ডেই ৯৯ শতাংশ শিক্ষক কোনো না কোনোভাবে যুক্ত। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আওয়ামীপন্থী, বিএনপিপন্থী বা জামায়াতপন্থী শিক্ষক ছাড়া শিক্ষাপন্থী কয়জন সম্মানিত শিক্ষক আছেন, তালিকা দিন। আল্লাহর কসম, আমি নিজে গিয়ে তাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে দোয়া নিয়ে আসব।
তিনি বলেন, যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেরাই এ অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা ও অযৌক্তিক সুবিধা প্রত্যাখ্যান করবেন, সেদিন তিনি ক্যাম্পাসের সবচেয়ে ভদ্র ছাত্র হয়ে উঠবেন। তিনি আরও বলেন, আমি বেয়াদব হয়েই পুরো জীবন কাটাতে চাই, কারণ আমার উদ্দেশ্য আমি জানি।
আপন দেশ/এসআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































