ছবি : আপন দেশ
কখনও খরা, কখনও অতি বৃষ্টি কিম্বা বন্যার অজুহাতে দফায় দফায় বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। সরবরাহ ঘাটতির কথা বলে বাড়ানো হয়েছে সব ধরনের সবজির মূল্য। ফলে গত কয়েক মাস কাঁচাবাজারে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। বিক্রেতারা তখন জানিয়েছিলেন শীতকালীন সবজি আসলে নাগালের মধ্যে আসবে দাম।
হেমন্তের দ্বিতীয়ার্ধে সারাদেশে বইছে শীতের হিমেল হাওয়া। বাড়ছে শীতের তীব্রতা। কাঁচাবাজারে শীতের সবজির সরবরাহও বেড়েছে। কিন্তু দামে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। এখনো বেশিরভাগ সবজি চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। ফলে বাজারে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসছেন ক্রেতারা।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানে থরে থরে সাজানো ফুলকপি, বাঁধাকপি, নতুন আলু, শিম, বেগুনসহ নানা জাতের সবজি। গত প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে সরবরাহও বেড়েছে এসব সবজির। তবে দাম সেভাবে কমেনি।
ফুলকপি, বাঁধাকপি যখন বাজারে আসতে শুরু করে তখন তা ছিল ছোট আকারের। এক সপ্তাহের মধ্যেই বড় আকারের ফুলকপি-বাঁধাকপি বাজারে আসতে শুরু করে। তবে তখনো এসব সবজির প্রতিটির দাম ছিল ৪০-৫০ টাকা, বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার পরও একইরকম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে ছোট আকারের ফুলকপি-বাঁধাকপি ৩০-৩৫ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
শীতের সবজি শিমের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি, উল্টো বেড়েছে। প্রতি কেজি শিম সপ্তাহ দুয়েক ধরে যেখানে ৫০-৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে, সেখানে এখন শিম ৯০-১০০ টাকায় উঠেছে। প্রতি কেজি বেগুনের দাম খানিকটা কমলেও এখনো ভোক্তার জন্য সহনীয় পর্যায়ে আসেনি।
বাজারে মানভেদে ফুলকপি প্রতিপিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও পটোল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আর প্রতি কেজি পেঁপে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, শিম ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শালগম ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। একই সঙ্গে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা গুণতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
আরও পড়ুন<<>>সরবরাহ বাড়লেও বেগুনে আগুন, আলুর দাম বাড়তি
বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পুঁইশাক ২০-৩০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০, কলমি শাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতিপিচ লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লেবু ৬০ টাকা ডজন, আলু ২০ থোকে ২৫ টাকা কেজি, ধনে পাতা ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, শীতের মৌসুমে দেশে সর্বোচ্চ পরিমাণ সবজির উৎপাদন হয়। প্রায় ৩৫ লাখ টনের মতো। তবে আলুর পুরো বছরের চাহিদার উৎপাদনটাও এ মৌসুমেই হয়। এক কোটি টনের বেশি আলু উৎপাদিত হয়, যা সারা বছরের চাহিদা মেটায়।
তবে সবজির বাজার চড়া হলেও উল্টো চিত্র রয়েছে ডিমের বাজারে। গত সপ্তাহে ফার্মের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৩০ টাকা দরে। ডজনে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। মুরগির বাজার গত সপ্তাহের মতো স্থির রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৬০ থেকে ১৭০ এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৬০ থেকে ২৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছ-মাংসের বাজারে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি। প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে সপ্তাহ দুয়েক আগে অস্থির হয়ে ওঠা পেঁয়াজের বাজারে কিছুটা শিথিলতা দেখা গেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে আরও পাঁচ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে। বাজারে পাতাযুক্ত পেঁয়াজ এসেছে। প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
আদা-রসুনের দামে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি। বাজারে দেশি রসুনের কেজি ১০০ থেকে ১৪০ এবং আমদানি করা রসুনের কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে আদা কিনতে কেজিতে খরচ হবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার আমদানির অনুমোদন দেওয়ার পদক্ষেপ নেয়ার কারণে পেঁয়াজের বাজার কমতির দিকে। নয়তো দাম আরও বাড়ত। এ ছাড়া আগের মতোই স্বাভাবিক দেখা গেছে চাল, ডাল, তেল ও চিনির বাজার।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































