Apan Desh | আপন দেশ

বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:১৩, ২ জুন ২০২৫

বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে

ছবি : আপন দেশ

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সোমবার (০২ জুন) বিকেলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নতুন বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর অতীতের সব সরকারের ধারাবাহিকতা ভেঙে এবারই প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার কমছে।

এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর অতিরিক্ত চাপ কমিয়ে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানো। বাজেটের আকার কমলেও রাজস্ব বাড়াতে বেশ কিছু পণ্যে উৎস কর, শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ বাড়ানো হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পাশাপাশি ভোক্তার স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক ও মূসক (ভ্যাট) বাড়ানো বা কমানোর প্রস্তাব আসতে পারে, যার ফলে কিছু পণ্যের দাম কমে আসতে পারে। আবার কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, বাজেট ঘাটতি ধারণযোগ্য পর্যায়ে রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় গতবারের চেয়ে ছোট বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বা মোট ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এবারই প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার কমছে।

নতুন বাজেটের আকার কমলেও পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। তবে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) চলতি অর্থবছরের ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে যা ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম নতুন বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো এবং বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য করতেই আকার কমানো হচ্ছে।

যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে

দাম বাড়বে এসি-ফ্রিজে: বাজেটের প্রভাবে এসি ও ফ্রিজ কিনতে গ্রাহকের খরচ আরও বাড়তে পারে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ফ্রিজ ও এসির ওপর দ্বিগুণ হারে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপের প্রস্তাব থাকতে পারে। এসি ও ফ্রিজে বর্তমানে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এই ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকতে পারে।

বাজেটে বাড়তে পারে দেশীয় মোবাইলফোনের দাম: মোবাইলফোন উৎপাদন ও সংযোজনে হ্রাসকৃত ভ্যাটহার বাড়ানোর প্রস্তাব থাকতে পারে। উৎপাদনের ক্যাটাগরি ভেদে ২ থেকে আড়াই শতাংশ ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এর ফলে দেশে তৈরি মোবাইলফোনের দাম বাড়তে পারে।

মোটরসাইকেলের দাম বাড়তে পারে: মোটরসাইকেল ও মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব থাকতে পারে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে ৩ শতাংশের অতিরিক্ত সব আমদানি, নিয়ন্ত্রণমূলক ও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু এতে মোটরসাইকেলের দাম সেই অর্থে কমতে দেখা যায়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক-ভ্যাট কিছুটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

দাম বাড়বে বিদেশি কসমেটিক্সে: নারীদের সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যবহৃত লিপস্টিক, লিপলাইনার, আইলাইনার, ফেসওয়াশ, মেকআপের সরঞ্জাম আমদানির ন্যূনতম মূল্য বিভিন্ন হারে বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি লিপস্টিক আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য ২০ ডলার আছে। সেটি বাড়িয়ে ৪০ ডলার করা হতে পারে। একইভাবে অন্য সব কসমেটিক্সের ন্যূনতম মূল্য বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বাড়তে পারে বিদেশি খেলনা ও চকলেট: স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশি খেলনার ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। এতে বিদেশি খেলনার দাম বাড়বে। চকলেট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের চকলেটের শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য চার ডলার। এটি বাড়িয়ে ১০ ডলার করা হচ্ছে। এতে আমদানি করা সব ধরনের চকলেটের দাম বাড়তে পারে।

দাম বাড়বে প্লাস্টিক পণ্যের: একবার ব্যবহারযোগ্য (ওয়ান টাইম) প্লাস্টিক পণ্যের ওপর ভ্যাট দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে চা-কফি কাপ, প্লাস্টিক প্লেট ও বাটির মতো পণ্যের ওপর ভ্যাট বেড়ে ১৫ শতাংশে পৌঁছাবে।

এছাড়া দাম বাড়তে পারে ব্লেড, নির্মাণ শিল্পের অন্যতম উপাদান হলো রড, তামাক শিল্পে ব্যবহৃত সিগারেটের পেপার, ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি, টেবিলওয়্যারদেশে তৈরি সুতা, আমদানিকৃত হেলিকপ্টার, মার্বেল-গ্রানাইট, তারকাঁটা, সব ধরনের স্ক্রু, নাট-বল্টু, ইলেকট্রিক লাইন হার্ডওয়্যার, পোল ফিটিংস, ইলেকট্রিক লাইন হার্ডওয়্যার, পোল ফিটিংস, সেল্ফ কপি পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড/কোটেড পেপার, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের ফুড সাপ্লিমেন্ট, বেভারেজ আইটেম, দরজার তালা ইত্যাদি।

এদিকে, কনভেনশন হল ও কনফারেন্স সেন্টারের সেবার ক্ষেত্রে উৎসে কর দ্বিগুণ করার প্রস্তাব থাকবে। বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত মোটরযানের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর বাড়ানোর প্রস্তাব থাকবে। ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে সারচার্জ বাড়বে। প্রস্তাবিত বাজেটে এসব প্রস্তাব থাকতে পারে। একইসঙ্গে কোনো সেলুলার মোবাইলফোন অপারেটর এর ন্যায় টাওয়ার শেয়ারিং কোম্পানি ইত্যাদি কর্তৃক পরিশোধিত আয় বণ্টন বা কোনো লাইসেন্স ফি বা অন্য কোনো ফি বা চার্জ হতে ২০ শতাংশ হারে কর কর্তন করার প্রস্তাব থাকতে পারে। ফলে এসব সেবার ক্ষেত্রেও দাম বাড়তে পারে।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়