Apan Desh | আপন দেশ

রেল লাগেজ ভ্যান কেনায় ৩৫৮ কোটি টাকা দুর্নীতির মামলা, ডিজিসব ৫ কর্মকর্তাকে তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

রেল লাগেজ ভ্যান কেনায় ৩৫৮ কোটি টাকা দুর্নীতির মামলা, ডিজিসব ৫ কর্মকর্তাকে তলব

ফাইল ছবি

কৃষিপণ্য ও অন্যান্য মালামাল পরিবহনের জন্য ট্রেনের লাগেজ ভ্যান কেনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ৩৫৮ কোটি টাকা ‘ক্ষতি’ করার অভিযোগে রেলের সাবেক মহাপরিচালকসহ ছয়জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান রোববার (১৬ নভেম্বর) সংস্থার ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন।

পরে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের মামলা দায়েরের তথ্য জানান। তিনি বলেন, অভিযুক্তরা ক্ষমতার অপব্যবহার, মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন, আর্থিক অনিয়ম এবং অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষতি করেছেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘রোলিং স্টক অপারেশনস ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ এর অধীনে ১২৫টি লাগেজ ভ্যান কেনার জন্য দরপত্র আহবান করা হয় ২০১৮ সালে। প্রকল্প প্রস্তাবে ৭৫টি মিটার গেজ লাগেজ ভ্যান কেনায় ব্যয় ধরা হয় ১৭৬ কোটি টাকা এবং ৫০টি ব্রড গেজ লাগেজ ভ্যান কেনায় ১৫২.৬ কোটি টাকা অর্থাৎ, মোট ৩২৮.৬ কোটি টাকা। সেখানে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ আয় দেখিয়ে প্রকল্পটিকে ‘অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক’ হিসেবে তুলে ধরা হয়।

গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের দেড় দশকের শাসনামলে বিভিন্ন খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। তারই ধারাবাহিকতায় রেলওয়ের এই কেনাকাটায় দুর্নীতি অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হল।

মামলার এজাহারে প্রথমেই নাম রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ মাহবুব চৌধুরী এবং রেলওয়ের পরিচালক মৃণাল কান্তি বণিকের। দুজনই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই-সংক্রান্ত প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন।

আসামীর তালিকায় আছেন আব্দুল মতিন চৌধুরী, যিনি প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন। প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব পালন করা রেলওয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. হারুন-অর-রশীদ-এর নামও এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও রেলওয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান এবং সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরও পড়ুন<<>> ন্যাশনাল লাইফের তদন্তে দুদক: ২১শ’ অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেন, ৭১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ-পাচার

এজাহারে বলা হয়েছে, প্রকল্প অনুমোদন থেকে শুরু করে ক্রয়-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভিন্ন ধাপে তারা ‘অনিয়ম, অবহেলা এবং উদ্দেশ্যমূলক’ পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা রাষ্ট্রীয় অর্থের বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে এনেছে।

দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্তরা ‘পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় গুরুতর অসদাচরণে’ জড়িত ছিলেন।

লাগেজ ভ্যানগুলো ক্রয়ে ‘প্রকিউরমেন্ট অব ফিফটি বিডি অ্যান্ড সেভেন্টি-ফাইভ এমজি লাগেজ ভ্যানস’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহবান করা হয়েছিল।

প্রকল্প প্রস্তাবে কৃষকদের শাকসবজি, ফলমূল, খাদ্যশস্য, দুধ, মাংস ও মৌসুমি ফল পরিবহনের প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে লাগেজ ভ্যান কেনার যৌক্তিকতা উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩২.৪৬ কোটি টাকার মুনাফা দেখানো হলেও ২০২৪ সালের প্রথম আট মাসে প্রকৃত আয় হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগের বছর একই সময়ে আয় ছিল প্রায় ৯ কোটি টাকা।

পর্যবেক্ষণের বরাতে দুদক বলছে, এ আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকল্প অনুমোদনের সময় ‘অবাস্তব ও বিকৃত’ তথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল।

সংস্থার অভিযোগ, বাজার সমীক্ষা, কৃষক বা ব্যবসায়ীদের প্রকৃত চাহিদা যাচাই, স্টেশন পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা মূল্যায়ন- এসব মৌলিক বিষয় ‘যথাযথভাবে’ সম্পন্ন করা হয়নি। বরং প্রকৃত প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ লাগেজ ভ্যান ক্রয়ের বিষয়টি প্রকল্প প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর ফলে ১২৫টি লাগেজ ভ্যান কেনার সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রের ৩৫৮ কোটি টাকার ‘ক্ষতি’ হয়েছে বলে দুদকের মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৭৭ক/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭–এর ৫(২) ধারায় এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ
SS Power

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়