Apan Desh | আপন দেশ

আজ পহেলা আষাঢ়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ১৫ জুন ২০২৫

আজ পহেলা আষাঢ়

কদম ফুল হাতে দুই শিশু

‘নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে’। বর্ষার আগমনী আষাঢ়স্য প্রথম দিবস আজ। পুষ্প-বৃক্ষে, পত্রপল্লবে, সবুজের সমারোহে এসেছে বর্ষা।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে, আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে। এ পুরাতন হৃদয় আমার আজি, পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি।’ অথবা ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে নব যৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা...।’

বর্ষা বাংলা সনের তৃতীয় মাস। এটি বর্ষা মৌসুমের অন্তর্ভুক্ত দুই মাসের প্রথম মাস। আর নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। বর্ষায় গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। নদীতে উপচে পড়া জল, আকাশে থাকে ঘন মেঘের ঘনঘটা। গ্রীষ্মের দাবদাহে মানুষ যখন পুড়ে তখন বর্ষার ঝুম ঝুম বৃষ্টির বরণডালা প্রশান্তি এনে দেয় মানুষের মনে।

বর্ষার সতেজ বাতাসে জুঁই, কামিনি, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা আরো কত ফুলের সুবাস। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। উপচে পড়া পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ফোটে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি।

অনেকেই মনে করেন বর্ষা যেমন আনন্দের, তেমনি হঠাৎ বিষাদে ভরিয়ে তোলে জনপদ। তবুও বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুনের আবাহন। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে আনে জীবনেরই বারতা। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা বাঙলা মায়ের নবজন্ম এই বর্ষাতেই। সারা বছরের খাদ্যশস্য-বীজের উন্মেষ তো ঘটবে বর্ষার ফেলে যাওয়া অফুরন্ত সম্ভাবনার পলিমাটি থেকে।

বাংলা ক্যালেন্ডারে আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস নিয়ে বর্ষাকাল। বর্ষা নিয়ে কবি-সাহিত্যিকদের রচনায় আছে হাজারো ছোঁয়া। বর্ষার প্রথম দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়ায় রবীন্দ্রনাথের গান, বর্ষার ছবি, আর স্মৃতির বর্ণনা। বর্ষায় শুধু বকুল-কদমই ফোটে না, বেলি, জুঁই, দোলনচাঁপা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনাসহ প্রায় সব সাদা ফুলের ঘ্রাণে ভরে ওঠে চারপাশ।

আষাঢ়ের প্রথম দিন উন্নয়নের নামে চলমান প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি নিয়ে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিতে ‘বর্ষা উৎসব’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। রোববার (১৫ জুন) বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ৭টায় সুর-সংগীতে প্রকৃতি-বন্দনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে উৎসবের কর্মসূচি।

এ ছাড়া নাচ, গান, আবৃত্তি ও কথনসহ বরাবরের মতো এবারও নানান আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় বর্ষা উদ্‌যাপন করবে বর্ষা উদ্‌যাপন পরিষদ। সেতারে ‘রাগ আহীর ভৈরব’ পরিবেশনের মধ্যদিয়ে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে নবীন শিল্পী সোহানী মজমুদার আয়োজনের উদ্বোধন করবেন।

এরপর বর্ষা কথন পর্বের আলোচনায় অংশ নেবেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান এবং ঘোষণা পাঠ করবেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী।

উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করবেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা, অনিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন, ফেরদৌসী কাকলি, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায়, এস এম মেজবাহ, রত্না সরকারসহ অন্যরা। 

একক আবৃত্তি করবেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি, আহসান উল্লাহ তমাল। দলীয় আবৃত্তি, সংগীত ও নৃত্য কোলাজে অংশ নেবে শিশু-কিশোর সংগঠন শিল্পবৃত্ত। 

দলীয় সংগীত পরিবেশন করবে সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন, সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেনুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অব আর্টস, নৃত্যম।

ধরিত্রীকে সবুজ করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের মাঝে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা বিতরণ করা হবে। অনুষ্ঠানটি সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়