Apan Desh | আপন দেশ

ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার আমল 

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:১৭, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার আমল 

ফাইল ছবি

যুগে যুগে পৃথিবীতে ভূমিকম্পসহ নানা ধরনের বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনেকে মারা যান এর কারণে। ভূমিকম্প মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক সতর্কবার্তা। এমন দুর্ঘটনার সময় মানুষের উচিত মহান আল্লাহর কাছে অতি দ্রুত তাওবা করা। তাঁর কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা। মহান আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘জনপদের অধিবাসীরা কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে যে আমার আজাব (নিঝুম) রাতে তাদের কাছে আসবে না, যখন তারা (গভীর) ঘুমে (বিভোর হয়ে) থাকবে! (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৭)

আল্লাহ বলেন, যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন। (সুরা শুরা : ৩০)

হাদিসে এসেছে, অশ্লীলতা, মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপকতাই এর মূল কারণ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথরবর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, কখন সেটা হবে হে আল্লাহ রাসুল? তিনি বলেন, যখন গায়িকা এবং বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে এবং মদপানের সয়লাব হবে। (তিরমিজি: ২২১২)

ভূমিকম্প ও নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক প্রকার সতর্কবার্তা। এমন পরিস্থিতিতে একজন মুসলমানের কর্তব্য হলো আতঙ্কিত না হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়া এবং ধৈর্য ধারণ করা। ভূমিকম্প, মেঘের গর্জন, ঝড়-তুফান, শিলাবৃষ্টি—প্রকৃতির এসব পরিবর্তন মহান আল্লাহ তাআলার অসীম ক্ষমতা ও মহাশক্তির (Almighty Power) ক্ষুদ্র নিদর্শন মাত্র। এসব প্রাকৃতিক ঘটনা সমগ্র সৃষ্টির ওপর আল্লাহর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন—

قُلۡ هُوَ الۡقَادِرُ عَلٰۤی اَنۡ یَّبۡعَثَ عَلَیۡكُمۡ عَذَابًا مِّنۡ فَوۡقِكُمۡ اَوۡ مِنۡ تَحۡتِ اَرۡجُلِكُمۡ اَوۡ یَلۡبِسَكُمۡ شِیَعًا وَّ یُذِیۡقَ بَعۡضَكُمۡ بَاۡسَ بَعۡضٍ ؕ اُنۡظُرۡ كَیۡفَ نُصَرِّفُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّهُمۡ یَفۡقَهُوۡنَ

অর্থ: বলুন, তিনি তোমাদের উপর থেকে অথবা পদতল থেকে আজাব পাঠাতে (সক্ষম) অথবা তোমাদেরকে দলে দলে বিভক্ত করার মাধ্যমে একদলকে অন্যদলের সংঘাত সংঘর্ষ ও হিংসা হানাহানির আস্বাদ গ্রহণ করাতে সক্ষম। লক্ষ্য কর, আমি নিদর্শনাবলী কেমন বিস্তারিত বর্ণনা করছি যাতে তারা উপলব্ধি করতে পারে।’ (সুরা আন’আম: আয়াত ৬৫)

আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন— وَ مَا نُرۡسِلُ بِالۡاٰیٰتِ اِلَّا تَخۡوِیۡفًا

অর্থ: আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই। (সুরা বনি ইসরাইল: আয়াত ৫৯)

এ আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা আকাশ (যেমন—শিলাবৃষ্টি, ঝড়) অথবা জমিন (যেমন—ভূমিকম্প) উভয় দিক থেকেই মানবজাতির ওপর বিপর্যয় পাঠাতে সক্ষম। প্রকৃতির বুকে ঘটে যাওয়া যেকোনো ভয়াবহ ঘটনা, যেমন—ভূমিকম্প, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য একটি সতর্কতা ও ভীতি প্রদর্শন। এ নিদর্শনগুলোর উদ্দেশ্য হলো বান্দারা যেন পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে, আল্লাহর দিকে ফিরে আসে এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।

সরাসরি ভূমিকম্পের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বিশেষ কোনো দোয়া বর্ণিত হয়নি, তাই বিশেষজ্ঞরা এ সময় সর্বাধিক শক্তিশালী কয়েকটি দোয়া পড়ার পরামর্শ দেন। যে দোয়া ও ছোট ছোট আমলগুলো সর্বাবস্থায় আল্লাহর রহমত, সাহায্য ও বিপদ থেকে মুক্তি নিশ্চিত করে। আর তাহলো— 

১.  اللَّهُمَّ لَا تُؤَاخِذْنَا بِذُنُوبِنَا، وَلَا تُهْلِكْنَا بِغَضَبِكَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তুআখিজনা বিজুনুবিনা, ওয়া তুহলিকনা বিগাদাবিকা।

আরও পড়ুন<<>>জুমার দিনের ফযীলত-আমল

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের গুনাহের কারণে আমাদের পাকড়াও করো না এবং তোমার গজবে আমাদের ধ্বংস করো না।

২. হজরত ইউনুস (আ.)-এর দোয়া

لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলিমিন।

অর্থ: তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তুমি পবিত্র সুমহান; আমি জালিমদের দলভুক্ত। (সুরা আম্বিয়া: আয়াত ৮৭)

৩. বিপদ থেকে সার্বক্ষণিক সুরক্ষার দোয়া

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়ুন ফিল আরদি, ওয়ালা ফিস সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।

অর্থ: আল্লাহ তাআলার নামে, যার নামের বরকতে আকাশ ও মাটির কোনো কিছুই কোনো অনিষ্টতা করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। (আবু দাউদ, তিরমিজি)

৪. অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা—

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَدْمِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّي وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْغَرَقِ وَالْحَرَقِ وَالْهَرَمِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ يَتَخَبَّطَنِي الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ فِي سَبِيلِكَ مُدْبِرًا وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ لَدِيغًا

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাদমি ওয়া-আউজুবিকা মিনাত তারাদ্দি, ওয়া-আউজুবিকা মিনাল গারাকি ওয়াল-হারাকি ওয়াল-হারাম, ওয়া-আউজুবিকা আন-ইয়াতাখব্বাতানিশ শাইতনু ইনদাল মাওতি, ওয়া-আউজুবিকা আন আমুতা ফি সাবিলিকা মুদবিরান ওয়া-আউজুবিকা আন-আমুতা লাদি-গান।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাপা পড়ে বা গহ্বরে পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করা থেকে আশ্রয় চাই, পানিতে ডুবে ও আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আপনার কাছে শয়তানের প্ররোচনায় মৃত্যু থেকে আশ্রয় চাই এবং আপনার পথে পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারী হয়ে মৃত্যুবরণ করা থেকে আশ্রয় চাই এবং আমার যেন শেষ বয়সেও (বৃদ্ধাবস্থায়) মৃত্যু না হয়, সে বিষয়েও আশ্রয় চাই। (আবু দাউদ ১৫৫২)

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়