ছবি: আপন দেশ
প্রায় ১৮ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এমন এক সময়ে তার এ প্রত্যাবর্তন, যখন বাংলাদেশ আবারও অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এবং নির্বাচন ও গণতন্ত্রে ফেরার প্রত্যাশা জনমনে প্রবল। প্রশ্ন উঠছে, এ প্রত্যাবর্তন কি কেবল বিএনপিকে চাঙা করবে, নাকি দেশের রাজনীতির গতিপথই বদলে দেবে?
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরেন তারেক রহমান। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জুবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান এবং তাদের পোষা বিড়াল ‘জেবু’।
এদিকে, তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নজিরবিহীন উদ্দীপনা দেখা গেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানাতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মীরা ঢাকায় জড়ো হয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে বড় ধরনের সংবর্ধনার। যা নির্বাচনের আগে শক্তি প্রদর্শনের রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতার হয়ে কারামুক্তির পর ২০০৮ সালে দেশ ছাড়েন তারেক রহমান। তখন বলা হয়েছিল, তিনি আর রাজনীতি করবেন না। কিন্তু বাস্তবে গত ১৮ বছর তিনি প্রবাস থেকেই বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ সময়ে বাংলাদেশ রাজনীতি, অর্থনীতি ও অবকাঠামোয় আমূল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। বিশেষ করে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির সামনে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার দরজা খুলেছে।

বিএনপির কাছে তারেক রহমান প্রত্যাশার প্রতীক।
জামালপুর থেকে আসা কর্মী আরিফুল হক বলেন, ‘লিডার দেশ বদলাইয়া দেবে, এ বিশ্বাসই আমাদের এখানে আনছে।’
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রত্যাশা আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘোছানোই হবে তারেক রহমানের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।
রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক আখলাকুর রহমান বলেন, ‘তার (তারেক রহমান) সামনে রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠার সুযোগ আছে। কিন্তু তিনি যদি বিভাজনের রাজনীতি বেছে নেন, তাহলে তা নতুন সংকট তৈরি করবে।’
দীর্ঘ নির্বাসন, বদলে যাওয়া রাজনীতি
২০০৭ সালের ৭ মার্চ জরুরি অবস্থার মধ্যে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হন এবং চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ নির্বাসন। এ সময়ে দেশে বিএনপি সংসদের বাইরে চলে যায়, আন্দোলন করেও ক্ষমতার পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আরও মামলা ও সাজা হয়। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি এসব মামলা থেকে খালাস পান, যা দেশে ফেরার পথ সুগম করে।
নির্বাচন সামনে, নেতৃত্বের পরীক্ষা
বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে প্রার্থী হবেন। দেশে ফিরে তিনি গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয় ও নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দল পরিচালনা করবেন। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আলাদা অফিস, গবেষণা সেল ও কৌশলগত টিম।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এ নির্বাচনে তারেক রহমানই আমাদের নেতা। তার নেতৃত্বেই আমরা জনগণের রায় নিতে চাই।’
ঐক্য না নতুন বিভাজন?
চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ স্পষ্ট। আওয়ামী লীগ মাঠের বাইরে, জামায়াতে ইসলামী নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিএনপির ভেতরেও নেতৃত্বে প্রজন্ম পরিবর্তনের চাপ রয়েছে। এমন বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠছে, তারেক রহমান কি দলীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের বার্তা দিতে পারবেন?
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক সংস্কার, আইনের শাসন এবং সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে তিনি যদি স্পষ্ট ও কঠোর অবস্থান নেন, তবে তা নির্বাচন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘তার (তারেক রহমান) প্রত্যাবর্তন শুধু বিএনপির নয়, পুরো দেশের রাজনীতির জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ।’
প্রায় ১৮ বছরের নির্বাসন শেষে তারেক রহমানের দেশে ফেরা ব্যক্তিগত প্রত্যাবর্তনের চেয়েও বেশি কিছু। এখন প্রশ্ন একটাই, এ ফেরা কি বাংলাদেশকে ঐক্য ও গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেবে, নাকি নতুন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার জন্ম দেবে?
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































