
সংগৃহীত ছবি
ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনা শেষ হলো। প্রায় আট মাস ধরে এ আলোচনা চলেছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বৈঠক হয়। মোট ১৬৬টি প্রস্তাবের ওপর সব দলের মতামত নেয়া হয়।
এর মধ্যে ৭৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। আরও ৯টি বিষয়ে দলগুলোর সম্মতি আছে। তবে এ ৯টি প্রস্তাবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমতও যুক্ত করা হয়েছে। দীর্ঘ আট মাসের আলোচনার পরও কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেল। এ মতপার্থক্য নিয়েই শেষ হলো কমিশনের বৈঠক।
বিশ্লেষকরা এ ঐকমত্যকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, ৭৫টি বিষয়ে সর্বসম্মত হওয়া খুবই ইতিবাচক। আমাদের দেশে রাজনৈতিক বিরোধের একটি সংস্কৃতি আছে। এমন পরিবেশে এ ঐকমত্য একটি শুভ সূচনা। এটি অবশ্যই উল্লেখ করার মতো একটি অর্জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, এটি ঐকমত্য কমিশনের একটি বিরাট সফলতা। তিনি বলেন, আমরা মনে করতাম, ১০টি বিষয়ে একমত হলেই যথেষ্ট। কিন্তু তারা এখন বড়-ছোট মিলে অনেক বেশি বিষয়ে একমত হয়েছে।
আরও পড়ুন>>>হাসিনাসহ ৩০ জনের গ্রেফতারি পরোয়ানা গেল ১২ দফতরে
আলোচনায় কয়েকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এছাড়াও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের প্রস্তাব ছিল। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) রাখার বিষয়েও কথা হয়। একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন নিয়েও মতামত চাওয়া হয়েছিল।
ঐকমত্য হলেও সনদ বাস্তবায়ন সহজ নয়। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট হতে পারে। কিন্তু গণভোটের মাধ্যমে যে পরিবর্তন আসবে, সে সিদ্ধান্ত আবার পরবর্তী সংসদের ওপর নির্ভর করবে।
ড. কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, কোনো কিছুই চূড়ান্ত নয়। যেই গণভোটের মাধ্যমে একটি পরিবর্তন আনা যাবে, অন্য কেউ সে গণভোটের মাধ্যমে আবার তা পরিবর্তন করতে পারবে। পরবর্তী সময়ে যে দল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। তারা তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে জুলাই সনদকেও পরিবর্তন করতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়াও একই কথা বলেছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি গণভোটের সিদ্ধান্ত আবার পরবর্তী নির্বাচিত সংসদকেই নিতে হয়, তাহলে সরাসরি নির্বাচিত সংসদেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত কেন নেয়া যাবে না?
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, জুলাই আন্দোলনের পর কোনো বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়নি। বর্তমানে সরকারি কার্যক্রম চলছে দেশের বিদ্যমান সংবিধান মেনেই। ফলে, ঐকমত্য কমিশন যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, তা বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী সংসদের মুখাপেক্ষী হতে হবে। গণভোট শুধু পরবর্তী সরকারকে সংবিধানে বড় পরিবর্তন আনার জন্য একটি বিশেষ ম্যান্ডেট দিতে পারে।
ঐকমত্যের পরও কিছু বিশ্লেষক চূড়ান্ত সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, দলগুলো রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের জন্য সদিচ্ছা দেখাতে পারেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দলীয় স্বার্থই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার মতে, গণঅভ্যুত্থানের পরে জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল, তা অর্জন করা যায়নি। ঐকমত্য কমিশনের এই কাজগুলো আসলে খুব সফল হয়েছে বলে মনে করছি না।
অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের ওপর আস্থার অভাবের কথাও বলেন।
ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ এ মাসের ১৫ তারিখ শেষ হবে। এর আগেই তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাদের সব সুপারিশ জমা দেবে। আশা করা হচ্ছে, জুলাই সনদ সাক্ষর হতে পারে আগামী ১৬ কিংবা ১৭ অক্টোবরের মধ্যে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।