Apan Desh | আপন দেশ

ভারতের মদদে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের নৈরাজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ১৬:০৫, ২ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১৬:০৬, ২ অক্টোবর ২০২৫

ভারতের মদদে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের নৈরাজ্য

ফাইল ছবি

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর তৎপরতা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পাহাড়ি এলাকায় অগ্নিসংযোগ, গুলিবর্ষণ, লুটপাট ও বাঙালি-উপজাতি দাঙ্গা উসকে দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির পেছনে এ সংগঠনের মূল শক্তি হয়ে উঠেছে ভারতীয় মদদ।

নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম ও সীমান্তবর্তী এলাকায় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের অন্তত ছয়টি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে। এসব ক্যাম্পে অস্ত্র ও গেরিলা কৌশলের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে শত শত ক্যাডার। বিএসএফ তাদেরকে সীমান্তে অবাধ চলাচলের সুযোগও দিচ্ছে।

চাঁদাবাজি থেকে কোটি কোটি টাকা অস্ত্র কেনায় ব্যয়

তিন পার্বত্য জেলা থেকে বছরে আড়াইশ থেকে তিনশ কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় করছে ইউপিডিএফ। এর বড় অংশ অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনতেই ব্যবহার হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মাধ্যমেও ভারী অস্ত্র আসছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে এসব অস্ত্র পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভারতের মাটিতেই ইউপিডিএফের ঘাঁটি

সূত্রগুলো জানায়, ইউপিডিএফ মূলধারার অন্তত ৪০০ সশস্ত্র ক্যাডার বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ক্যাম্পগুলো রয়েছে—ত্রিপুরার ধলাই জেলার রতন নগর, টুইচামা, নারায়ণপুর, পঞ্চ রতন, ধলাই জেলার নারিকেল বাগান, পূর্ব সাবরুম (খাগড়াছড়ি-ফেনী সীমান্ত)।

শীর্ষ নেতাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ওপারে গড়ে তোলা হয়েছে। এরা বাংলাদেশের ভেতরে নাশকতা চালিয়ে আবার নিরাপদে ভারতে পালিয়ে যায়।

ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার নজির

যদিও বিএসএফ অনেক সময় সরাসরি সহযোগিতা করছে। তবে ভারতীয় পুলিশের কাছে ইউপিডিএফ সদস্যদের ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। গত ২২ জানুয়ারি আগরতলায় ইউপিডিএফ সশস্ত্র কমান্ডার সমাজ প্রিয় চাকমাকে আটক করে পুলিশ। তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ও কার্তুজ উদ্ধার হয়। একই মাসে অরুণাচল প্রদেশে ইউপিডিএফ সদস্য রাজু চাকমাকে একে-৪৭ ও গোলাবারুদসহ ধরা হয়। মিজোরামে বিশাল অস্ত্র চালান আটক হওয়ার ঘটনাও আলোচনায় আসে।

খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সহিংসতা

সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে এক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ নজিরবিহীন সহিংসতা চালায়। অবরোধের নামে পুরো জেলা অবরুদ্ধ করে রাখে তারা। বাঙালি গ্রামে অগ্নিসংযোগ, দোকানপাটে হামলা, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে তিন উপজাতি নিহত ও সেনা কর্মকর্তাসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেও দেখা গেছে ইউপিডিএফ সদস্যরা ভারী অস্ত্র হাতে গুলি ছুড়ছে। তবে মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের কোনো আলামত মেলেনি বলে জানা গেছে। স্থানীয় মারমা সম্প্রদায়ও ঘটনার রাজনৈতিক অপব্যবহার না করার আহবান জানিয়েছে।

ভারতের ভূমিকাই প্রশ্নবিদ্ধ

বিজিবি-বিএসএফ বৈঠকসহ নানা পর্যায়ে বিষয়টি ভারতের দৃষ্টিগোচর করা হলেও তারা কার্যত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে বাংলাদেশের সরকার ভারতের প্রতি অতিরিক্ত নমনীয় হওয়ায় এ সমস্যা সমাধান হয়নি। সাম্প্রতিক পরিবর্তনের পর ভারত নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে উল্টো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আরো উৎসাহিত করছে।

সামনে আরও সংঘাতের শঙ্কা

খাগড়াছড়িতে অবরোধ প্রত্যাহার হলেও ইউপিডিএফ আবারও নতুন সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে গোয়েন্দা তথ্য মিলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কথিত ধর্ষণ কেবল অজুহাত ছিল। আসল উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়কে অস্থিতিশীল করা ও বাঙালি-উপজাতি দাঙ্গা উসকে দেয়া। তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের দাবি তুলেছেন।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়