Apan Desh | আপন দেশ

শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি লোপাট করে কোটিপতি মাদরাসার অফিস সহকারি মিরাজ

ভোলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:০৮, ৯ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১৬:১১, ৯ অক্টোবর ২০২৫

শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি লোপাট করে কোটিপতি মাদরাসার অফিস সহকারি মিরাজ

কামাল উদ্দিন (মিরাজ)।

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী হাকিমুদ্দিন ফাজিল মাদ্রাসা। এ মাদরাসার অফিস সহকারি কামাল উদ্দিন (মিরাজ)। তিনি তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

মিরাজ উপবৃত্তির অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

২০২১ সালের শেষ দিকে মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতনে অফিস সহকারি হিসেবে যোগ দেন কামাল উদ্দিন। তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী হওয়ায় মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল তার হাতে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তুলে দেন। শিক্ষার্থীর ভর্তি ও উপবৃত্তি তথ্য তিনি সিস্টেমে এন্ট্রি করলেও অনুমোদনের জন্য প্রিন্সিপালের মোবাইল ফোনে OTP কোড যেত। এ সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে কামাল উদ্দিন তৈরি করেন শত শত ভুয়া শিক্ষার্থী। প্রতারক চক্রের সহায়তায় নকল নথি ব্যবহার করে সেগুলোকে বৈধ প্রমাণ করেন।

পরিদর্শনে দেখা যায়, আলিম প্রথম বর্ষে প্রকৃত শিক্ষার্থী ছিলেন ৭৩ জন, কিন্তু সরকারি ওয়েবসাইটে দেখানো হয়েছে ১৩৩ জন। উপবৃত্তি পেয়েছেন ৯৫ জন। শুধু এ শ্রেণিতেই চার বছরে প্রায় ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। একইভাবে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বাড়িয়ে তোলা হয় আরও ১৮ লাখ টাকা। নবম ও দশম শ্রেণিতে ভুয়া নাম যোগ করে আত্মসাৎ করা হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে তিন শতাধিক ভুয়া শিক্ষার্থীর নামে তোলা হয় প্রায় ৫০–৫৫ লাখ টাকা।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেজাউল করিম বলেন, ঢাকা থেকে আসা পরিদর্শক দল মাদ্রাসার উপবৃত্তি সংক্রান্ত অনিয়ম ধরেছে। প্রিন্সিপাল স্বীকার করেছেন পাসওয়ার্ড তার দায়িত্বে থাকার কথা, তবে অফিস সহকারির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন।

তিনি আরও বলেন, নকল শিক্ষার্থীর নামে রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও অভিভাবকের তথ্য ব্যবহার করার পেছনে একটি প্রতারক চক্র সক্রিয় ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত আগস্টে ঢাকার পরিদর্শক দল আসার খবর পেয়ে কামাল উদ্দিন তড়িঘড়ি করে ভুয়া নাম মুছে ফেলতে যান। কিন্তু তাড়াহুড়োতে প্রকৃত শিক্ষার্থীদেরও নাম মুছে ফেলেন, ফলে শতাধিক শিক্ষার্থী উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়। তদন্তকারীরা সরেজমিনে গিয়ে দেখেন, সরকারি ওয়েবসাইটে উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ৭৫০ জন, অথচ বাস্তবে ছিলেন মাত্র ৪৫০ জন।

মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আল আমিন বলেন, কামাল উদ্দিন আইটিতে দক্ষ হওয়ায় তার হাতে কাজ দেওয়া হয়েছিল। OTP আমার ফোনে আসতো, প্রয়োজনে তাকে দিতাম। দুর্নীতির সুযোগ ছিল বুঝিনি।

তবে তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে, অনুমোদন কোড ব্যবহারের বিষয়টি প্রিন্সিপালের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ফলে নৈতিকভাবেও তিনি দায় এড়াতে পারেন না।

মাত্র ১২ হাজার টাকায় চাকরি শুরু করা কামাল উদ্দিন এখন এলাকায় পরিচিত কোটিপতি। বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তার একটি দোতলা বাড়ি (বাজারমূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা) ও ৩০ শতাংশ জমি রয়েছে। এর আগে তিনি বীমা কোম্পানি ও গ্রাম আদালতে কাজ করার সময়ও অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন। সাংবাদিকরা যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোনে সাড়া দেননি।

তদন্ত কমিটির সুপারিশে কামাল উদ্দিনকে সাময়িকভাবে দু’মাসের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ক্ষোভ কমেনি। তাদের প্রশ্ন—একজন অফিস সহকারি বছরের পর বছর কোটি টাকার অনিয়ম করলেন, অথচ মাদ্রাসার প্রধান জানলেন না, এটা কীভাবে সম্ভব?

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়