Apan Desh | আপন দেশ

ভারত থেকে আসছে জাল নোট

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:২৪, ২ অক্টোবর ২০২৫

ভারত থেকে আসছে জাল নোট

ছবি: সংগৃহীত

দেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন রুটে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ জাল নোট ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মদদে পতিত আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা এ অপচেষ্টা চালাচ্ছে। 

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাত ধ্বংস করতে এবং বিভিন্ন নাশকতামূলক কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্যে এসব নোট অত্যন্ত কম মূল্যে পৌঁছে দিচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এছাড়া বাংলাদেশের টাঁকশালে ব্যবহৃত মেশিন ও যন্ত্রাংশ পার্শ্ববর্তী ওই দেশেই তৈরি। সে মেশিনও এ কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে জাল মুদ্রায় ব্যবহৃত কাগজ এবং বাংলাদেশের নোটের কাগজ একই হওয়ায় সন্দেহ আরও বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের টাঁকশালে ছাপা নোটের আদলে নিখুঁতভাবে তৈরি কাগজের জাল মুদ্রাগুলো পার্শ্ববর্তী দেশে তৈরির পর গোয়েন্দারা চোরাপথে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এরপর বিভিন্ন হাত ঘুরে এগুলো চলে যাচ্ছে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। জাল নোট তৈরি এবং দেশে পাঠানো চক্রে গোয়েন্দাদের সঙ্গে ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগের কিছু নেতা সরাসরি জড়িত। 

দুপক্ষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা চক্রটি নতুন একটি চেইন তৈরি করেছে। সেখানে ডিলার থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সবাই তাদের আদর্শের লোক। 

জানা গেছে, বিশাল অঙ্কের জাল নোট তৈরিতে সন্দেহভাজনদের মধ্যে আছেন টাঁকশালে টাকা তৈরির সাবেক ডিজাইনারসহ আওয়ামী কারিগররা। এরা গোয়েন্দাদের তত্ত্বাবধানে লম্বা সময় নিয়ে জাল টাকা ছাপিয়েছে। এ ধরনের নোট নিজস্ব গোপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 

বুধবার (০১ অক্টোবর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান তার ফেসবুক আইডিতে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন। 

পোস্টে সতর্ক করে প্রবাসী এ সাংবাদিক লিখেছেন, এসকল টাকার কাগজ আর বাংলাদেশের নোটে ব‍্যবহৃত কাগজ একই হওয়ার কারণে খালি চোখে এমনকি ব‍্যাংকের যাচাই মেশিনেও এসব নোট জাল হিসেবে চিহ্নিত করা দুরূহ। নিরাপত্তা সুতা সহ হলোগ্রাম প্রিন্ট সবই অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় দেশটির নিজস্ব মুদ্রা ছাপানোর ফ‍্যাসিলিটিতে এসকল নোট প্রিন্ট করা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত মাধ্যমে জানা গেছে।

জুলকারনাইন আরও লেখেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাত একপ্রকারের ধ্বংস করতে এবং বিভিন্ন নাশকতামূলক কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্যে এসব নকল নোট অত্যন্ত কম মূল্যে দেশের জালনোট কারবারিদের কাছে বিশেষ ব্যবস্থায় পৌঁছে দিচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

আরও পড়ুন<<>>দুর্গাপূজাকে নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে: রিজভী

এটি ভাইরাল হওয়ার পর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসে। তারা এ অপতৎপরতা রুখতে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার জাল নোট দেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগ সত্য হলে এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তবে এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের খুব বেশি কিছু করার নেই। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। আর সাধারণ মানুষকেও অনেক সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে পুরোনো টাকা বাজারে ছাড়া হচ্ছে না। বাজারে শুধু নতুন টাকা দেওয়া হচ্ছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজটি করে থাকলে এটা ঠেকানো কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ, বিগত ১৫ বছরে টাঁকশালে নিয়োগ পাওয়া বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীই ছিলেন আওয়ামী আদর্শের অনুসারী। অনেক মেশিনারিজও নেয়া হয়েছে পার্শ্ববর্তী একটি দেশ থেকে। তিনি বলেন, টাকা ডিজাইনের কারিগর, যারা গত এক-দেড় বছরে অবসরে গেছেন; তাদের নজরদারির আওতায় আনা যেতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জাল নোট চক্রের সদস্যরা ফেসবুক, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের মতো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জাল নোট বেচাকেনার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। চটকদার অফার দিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। বিভিন্ন ‘সিক্রেট গ্রুপ’ তৈরি করে সেখানে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছে। এমন কিছু বিজ্ঞাপন দেখা গেছে, যেখানে ১ লাখ টাকার জাল নোট মাত্র ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকায় বিক্রির অফার দেয়া হচ্ছে। 

এমনকি তারা ক্রেতাদের আস্থা অর্জনের জন্য ‘মানি ব্যাক গ্যারান্টি’ বা ‘মানের নিশ্চয়তা’র মতো মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে। জালিয়াত চক্র তাদের পোস্টে এমন কিছু সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে, যাতে সাধারণের চোখে তা সহজে ধরা না পড়ে। যেমন, ‘নতুন মডেলের রঙিন প্রিন্ট’, ‘পুজোর বাজারের জন্য স্পেশাল অফার’, ‘ঈদ অফারের মতো দারুণ সুযোগ’, ‘উচ্চমানের রেপ্লিকা’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে জাল টাকাকে বৈধ পণ্য হিসাবে প্রচার করার চেষ্টা চালাচ্ছে। 

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়