
ছবি: আপন দেশ
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোটের দৌড়ে এগিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামী।
সোমবার (১১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও সংস্কারবিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম যৌথভাবে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়ন, সংস্কার, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা নিয়ে’ জরিপের ফল প্রকাশ করে। বিআইজিডি পালস সার্ভে-৩ নামক এ জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ১২ শতাংশ মানুষ বিএনপির কথা বলেছেন। ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ২ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ।
গত অক্টোবরে একই ধরনের জরিপ করা হয়েছিল, যেখানে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে, ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ জামায়াতকে ও ২ শতাংশ মানুষ এনসিপিকে ভোট দিতে চেয়েছিলেন। অর্থাৎ, আট মাস পর বিএনপি ও জামায়াতের ভোট সামান্য কমেছে। কিন্তু এনসিপির ভোট কিছুটা বেড়েছে।
আওয়ামী লীগকে (যার কার্যক্রম বর্তমানে নিষিদ্ধ) ভোট দেয়ার কথা বলেছেন ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ মানুষ। যা গত অক্টোবরে ছিল ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। জাতীয় পার্টির ভোট শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ হয়েছে। অন্যান্য ইসলামিক দলের ভোটও ২ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশে নেমে এসেছে।
প্রার্থী জেতার সম্ভাবনা
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল, আপনার নির্বাচনী এলাকায় কোন দলের প্রার্থী জিতবে বলে মনে হয়? এ প্রশ্নে, ৩৮ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন বিএনপির প্রার্থী জয়ী হবে। ১৩ শতাংশ মানুষ জামায়াতের প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন। ১ শতাংশ মানুষ এনসিপির কথা বলেছেন, আর ৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিততে পারেন।
সিদ্ধান্তহীনতার হার বেড়েছে
আগামী নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতার হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত বছরের অক্টোবরে ৩৮ শতাংশ মানুষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্তহীন ছিলেন। ৮ মাস পর, বর্তমানে ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ বলছেন যে তারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। এর পাশাপাশি, ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ মানুষ তাঁদের পছন্দের দল সম্পর্কে বলতে রাজি হননি। ১ দশমিক ৭০ শতাংশ বলেছেন যে তাঁরা ভোট দেবেন না।
জরিপের পদ্ধতি ও সময়কাল
বিআইজিডির ফেলো অব প্র্যাক্টিস সৈয়দা সেলিনা আজিজ জরিপের ফল তুলে ধরেন। তিনি জানান, এ জরিপের জন্য গ্রাম ও শহরের নানা শ্রেণি-পেশার ৫ হাজার ৪৮৯ জন মানুষের মতামত নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ ও ৪৭ শতাংশ নারী ছিলেন। জরিপে অংশ নেয়াদের ৭৩ শতাংশ গ্রামের ও ২৭ শতাংশ শহরের বাসিন্দা। ১ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত টেলিফোনে এ জরিপ চালানো হয়, যেখানে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, চলমান সমস্যা, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। এর আগে গত অক্টোবরে তথ্যের ভিত্তিতে ডিসেম্বরে বিআইজিডির দ্বিতীয় পালস সার্ভের ফল প্রকাশিত হয়েছিল।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
-
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আশাবাদ: ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। আর ৪৫ শতাংশ মনে করেন অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। গত অক্টোবরের তুলনায় রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের আশাবাদ কমেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সামান্য বেড়েছে।
-
অন্তর্বর্তী সরকার: অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমকে উত্তরদাতারা ১০০-তে ৬৩ নম্বর দিয়েছেন। যা গত অক্টোবরে ছিল ৬৮।
-
নির্বাচনের আগে সংস্কার: ৫১ শতাংশ মানুষ মনে করেন ভালোভাবে সংস্কার করে তারপর নির্বাচন দেয়া উচিত। ১৭ শতাংশ জরুরি সংস্কারের পর নির্বাচন চান ও ১৪ শতাংশ সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন চান।
-
প্রয়োজনীয় সংস্কার: ৩০ শতাংশ মানুষ আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, ১৬ শতাংশ আইন ও বিচারব্যবস্থার উন্নতি, ১৩ শতাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো ও ১৭ শতাংশ দুর্নীতি দমনের কথা বলেছেন। ১৯ শতাংশ মানুষ রাজনৈতিক অস্থিরতা কমানো ও নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের কথা উল্লেখ করেছেন।
-
নির্বাচনের সময়: ৩২ শতাংশ মানুষ আগামী ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন চান। ২৫ শতাংশ মানুষ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর বা তার পরে নির্বাচন চান।
-
সুষ্ঠু নির্বাচন: ৭০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। ১৫ শতাংশ মনে করেন সুষ্ঠু হবে না, আর ১৪ শতাংশ এ বিষয়ে জানেন না।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহবায়ক এ কে এম ফাহিম মাশরুর।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।