Apan Desh | আপন দেশ

জয়েন্টের ব্যথা কমাতে কালিজিরা তেলের উপকারিতা

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:১৮, ২১ জুন ২০২৫

জয়েন্টের ব্যথা কমাতে কালিজিরা তেলের উপকারিতা

কালিজিরার তেল

বাঙালির রান্নাঘরের একটি অপরিহার্য উপাদান হলো- কালিজিরা। মাছ-মাংস, নিরামিষ তরকারি থেকে শুরু করে সব রান্নাতেই স্বাদ বাড়াতে কালিজিরার ব্যবহার বহুদিনের। তবে শুধু স্বাদ ও গন্ধের জন্য নয়, ছোট এ কালো দানার রয়েছে অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতাও।

প্রতি গ্রাম কালিজিরায় রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। যেমন- প্রোটিন, নিয়াসিন, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, কপার, ফসফরাস ও ফোলেট।

প্রাচীনকাল থেকেই কালিজিরা মহৌষধ নামে পরিচিত। বিশেষ করে জয়েন্টের ব্যথা, বাত, আর পিঠের অস্বস্তির মতো সমস্যা দূর করতে প্রাকৃতিক প্রতিকারের মধ্যে অন্যতম বলে ধরা হয় কালিজিরার তেল। এ তেলে থাকা থাইমোকুইনোন নামক উপাদান শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা উপশমে, জয়েন্ট শক্ত করতে এবং তরুণাস্থির ক্ষয় রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

নিয়মিত কালিজিরা তেল মালিশ করলে হাঁটুর আর্থ্রাইটিস, পিঠের নিচের অংশে ব্যথা বা জয়েন্ট ফুলে যাওয়ার সমস্যায়ও মিলতে পারে আরাম। এছাড়া কালিজিরার আরও নানা স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে:

উচ্চ রক্তচাপ কমায়: কালোজিরার তেল রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দৈনিক দুইবেলা অধাচামাচ করে কালোজিরার তেল খেলে রক্তচাপে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। তবে কালোজিরার তেল রক্তচাপ কমায় কেন তা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিতভাবে জানেন না। তারা ধারণা করছেন যে, এ তেলের উচ্চ থাইমোকুইনোন রক্তচাপ কমানোর নায়ক হতে পারে। অনলাইন মেডিক্যাল প্র্যাকটিস পালোমা হেলথের পুষ্টিবিদ আরিকা হোশেট বলেন, থাইমোকুইনোন প্রদাহ কমাতে পারে। এটাই হয়তো রক্তচাপ ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখে।

আরওপড়ুন<<>>জামের বীজের গুঁড়া খাওয়ার ৫ উপকারিতা

কোলেস্টেরল কমায়: নিউবারি স্ট্রিট নিউট্রিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও পুষ্টিবিদ স্কাইলার গ্রিগস বলেন, কালোজিরার তেলে প্রচুর পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা আমাদের শরীরে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে আনে: একটি গবেষণায়ও ওজন কমানোতে কালোজিরা তেলের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে- গড়ে ৪.৪ পাউন্ড বা ২.১ কিলোগ্রাম ওজন কমেছে।

ব্রণ সারায়: ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে ব্রণ সারাতেও কালোজিরার তেল প্রয়োগ করতে পারেন। ব্রণের স্থানে ২০ শতাংশ কালো জিরার তেল সমৃদ্ধ ক্রিম মেখে চমকপ্রদ ফল পাওয়া গেছে। 

ত্বকে আদ্রতা আনে: কালোজিরার তেল মাখলে ত্বকে আর্দ্রতা আসে ও কিছু চর্মরোগ (যেমন- একজিমা) প্রশমিত হয়। তবে এ বিষয়ে গবেষণা এখনো সীমিত। একটি গবেষণায় দিনে দু’বার করে চার সপ্তাহ কালোজিরার তেল প্রয়োগে হাতের একজিমা কমে এসেছে।

চুল গজাতে সাহায্য করে: অনেকেই জানান যে, কালোজিরার তেল ব্যবহারে চুল আরো ঘন হয়েছে ও চুল পড়া কমেছে। তবে এ দাবিকে সত্যায়নের জন্য এখনো পর্যন্ত বলিষ্ঠ গবেষণা নেই। গবেষকদের মতে, কালোজিরার তেলে বিদ্যমান প্রোটিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড রক্ত চলাচল বাড়িয়ে চুল গজাতে বা বিকাশসাধনে উদ্দীপনা যোগায়। 

শুক্রাণু বাড়ায়: কিছু গবেষণা ধারণা দিচ্ছে, কালোজিরার তেল সেবন করলে অনুর্বর পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়তে পারে। একটি গবেষণায় অনুর্বর পুরুষদের একটি গ্রুপকে প্রতিদিন ২.৫ মিলি কালোজিরার তেল এবং আরেকটি গ্রুপকে প্লাসেবো দেয়া হয়। আড়াই মাস পর দেখা গেছে, যারা কালোজিরার তেল খেয়েছেন তাদের শুক্রাণুর সংখ্যা তুলনামূলক বেড়েছে। এমনকি শুক্রাণুগুলোর গতিশীলতাও বেড়েছে।

যারা কালোজিরার তেল ব্যবহার করবেন না: অধিকাংশ সুস্থ মানুষের জন্য কালোজিরার তেল নিরাপদ। কিন্তু কিছু লোকের ক্ষেত্রে হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ। এ তেল কিছু ওষুধের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া করতে পারে। যেমন- বিটা ব্লকার্স। তাই ওষুধের ওপর থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা উচিত।কিডনিতে সমস্যা থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন আছে। এ তেল ব্যবহারে কিডনি ফেইলিউরের মতো ঘটনা ঘটেছে।

সীমিত গবেষণার কারণে কালোজিরার তেল গর্ভবতী ও স্তন্যপান করানো নারীদের জন্য সুপারিশকৃত নয়। এ তেল ব্যবহারে কিছু মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন- জ্বালাপোড়া বা চুলকানি (যখন ত্বকে ব্যবহার করা হয়), কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি, বমিভাব ও পেটফাঁপা। তবে স্বল্পমেয়াদে (তিন থেকে চার মাস) কালোজিরা তেল ব্যবহারে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

আপন দেশ/এমএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়