
ছবি সংগৃহীত
গুলি, বোমা আর অনাহারে এক মৃত্যুপুরীতে পরিনত হয়েছে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা। অসহায় গাজাবাসীর ওপর অমানবিক নিপীড়ন চালিয়ে মানবতার চরম লঙ্ঘন করে চলেছে ইসরায়েল। দলখদারদের নির্মমতা যেন জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
রোববার (১৭ আগস্ট) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে যে গত ২৪ ঘন্টায় ইসরায়েল-সৃষ্ট অনাহারে আরও ১১ জন মারা গেছে, যার ফলে মৃতের সংখ্যা ২৫১ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১০৮ জন শিশু রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় ৭০ জন নিহত হয়েছেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে আটটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৩৮৫ জন আহত হয়েছে, যার ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের গণহত্যামূলক অভিযানে মোট আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাাজার ৬৬০ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনাহার ও অপুষ্টিতে ১১ জন নতুন মৃত্যুর খবর দিয়েছে, যার মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। এর ফলে দুর্ভিক্ষজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ২৫১ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১০৮ জন শিশু।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক ভুক্তভোগী এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে বা রাস্তায় আটকে আছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী মানবিক সাহায্য নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ২৬ জন নিহত এবং ১৭৫ জন আহত হয়েছে। গত ২৭ মে থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ১ হাজার ৯২৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং ১৪ হাজার ২৮৮ জন আহত হয়েছে।
আরও পড়ুন<<>> ২৬০ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘অ্যারিন’
আল জাজিরার সাংবাদিকদের হত্যার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায়, গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ এবং হামাস কর্তৃক বন্দীদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে তেল আবিবে হাজার হাজার ইসরায়েলি সমাবেশ করেছে।
গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধে কমপক্ষে ৬১,৮২৭ জন নিহত এবং ১,৫৫,২৭৫ জন আহত হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলায় ইসরায়েলে আনুমানিক ১,১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশিকে বন্দী করা হয়েছিল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের যোদ্ধারা। এদিন ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।
হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ।
এছাড়া গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পাশাপাশি উপত্যকাটিতে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও রয়েছে ইসরায়েল।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।