
ছবি: আপন দেশ
শিক্ষকদের নিয়ে অমালীন মন্তব্য করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদলের এক নেতার বিভাগীয় চারিত্রিক সনদপদত্র ও প্রশংসাপত্র বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করেছে বিভাগীয় অ্যাকাডেমিক কমিটি।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে উর্দু বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় অ্যাকাডেমিক কমিটিতে এমন সিদ্ধান্ত নেন বিভাগের শিক্ষকরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ হাসান নকীবকে জড়িয়ে উর্দু বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম ও প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করায় ছাত্রদল নেতার প্রশংসাপত্র ও চারিত্রিক সনদপত্র বাতিল করল উর্দু বিভাগ।
অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা হলেন বুলবুল রহমান। তিনি উর্দু বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমারে রাবি ছাত্রদলের সহ-সভাপতি। অপরদিকে, ভুক্তভোগী শিক্ষকরা হলেন- উর্দু বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম ও একই বিভাগের প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দিন।
এদিকে, গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে ‘বিভাগের দুই কুলাঙ্গার শিক্ষক ভিসি নকিবের অনুগত কুকুর বর্তমান চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর নাসির উদ্দিনের বেহাল অবস্থা। এ দুই কুকুর ছাত্র-ছাত্রীদের মার্ক করে খাতায় কম নম্বার দিত যার প্রমাণ স্বয়ং আমি। তাদের হায়া লজ্জা ঘৃণা বলে কি কিছুই নেই?’ এমন পোস্ট করতে দেখা যায় ওই ছাত্রদল নেতাকে।
আরওপড়ুন<<>>স্বাস্থ্য ক্যাডারের ২১ জনের সুপারিশ স্থগিত
বিভাগীয় অ্যাকাডেমিক কমিটির সূত্র থেকে জানা যায়, উর্দু বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে বুলবুল রহমান যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও (বিজ্ঞপ্তির শর্ত ছিল ৩.৫০ পেতে হবে কিন্তু তার অনার্সে প্রাপ্ত সিজিপিএ ৩.৩৫) আবেদন করেন। বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না করায় আবেদনপত্র বাছাইকালে তার আবেদন বাতিল হলে তিনি ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে বিভাগীয় সভাপতিসহ পরিকল্পনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা, অসদাচরণ এবং বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি প্রদান করেন।
এছাড়া উর্দু বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বন্ধ করতে গত ১১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভা চলাকালীন উপাচার্যের বাসভবনের মূলফটকে তালা লাগিয়ে দেন ছাত্রদলের এ নেতা। এতে উর্দু বিভাগের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়। তিনি একটি বৃহৎ ছাত্রসংগঠনের পদে থাকায় তার ফেসবুক পোস্ট ও হুমকির কারণে উর্দু বিভাগের শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
বিভিন্ন ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় অ্যাকাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তে বুলবুল রহমানকে উর্দু বিভাগ থেকে তার প্রশংসাপত্র, চারিত্রিক সনদপত্র ও সকল প্রত্যয়নপত্র বাতিল করা হলো এবং ভবিষ্যতে বিভাগ থেকে তাকে কোনো প্রকার প্রত্যয়নপত্র দেয়া হবে না। উর্দু বিভাগে তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয় এবং ভবিষ্যতে তিনি বিভাগের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। শৃঙ্খলা বিরোধী, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অসত্য, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় পোষ্ট করায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে উপাচার্যের কাছে আহবান জানায় বিভাগীয় অ্যাকাডেমিক কমিটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা বুলবুল রহমান বলেন, চারিত্রিক সনদ বাতিলের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে তারা মনগড়া কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তো আর হবেনা। আমাকে এ বিষয়ে কেউ ডাকেনি এবং কেউ জানতেও চায়নি। তবে আমি বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে পোস্ট দিয়েছি, তারা আমাকে মার্কস কম দিয়েছেন। এছাড়া অ্যাকাডেমিক মিটিংয়ে সকল শিক্ষক উপস্থিতও ছিলেন না বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের নিয়ে এমন বাজে মন্তব্য তা কোনোভাবেই কাম্য না। অবৈধভাবে নিজের স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হয়ে তিনি শিক্ষকদেরকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যা শুধু আমাদের জন্য নয়, বরং সকল শিক্ষকদের জন্য অবমাননাকর। আমরা প্রশাসন থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
আপন দেশ/এমএইচ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।