Apan Desh | আপন দেশ

কম খরচে লবণ ছাড়া পশুর চামড়া সংরক্ষণে রাবির সাফল্য

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৪৯, ২৪ জুন ২০২৫

কম খরচে লবণ ছাড়া পশুর চামড়া সংরক্ষণে রাবির সাফল্য

প্রধান গবেষক রাবির ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম

পশুর চামড়া সংরক্ষণে যুগান্তকারী, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার উপযোগী করে তুলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গবেষকরা। নতুন এ পদ্ধতিতে লবণের পরিবর্তে পারএসিটিক এসিড (PAA) ব্যবহার করে চামড়া এক মাসেরও বেশি সময় সংরক্ষণ করা সম্ভব। এতে শ্রমিকের প্রয়োজন কম হয় ও খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।

গবেষণার প্রধান গবেষক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য এবং রাবির ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের ‘রিসার্চ ল্যাবরেটরি’-তে ২০২৩ সাল থেকে এ গবেষণা শুরু হয়। সহ-গবেষক হিসেবে ছিলেন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স শিক্ষার্থী মো. নাদিম হাসান।

গবেষণাটি আন্তর্জাতিক জার্নালে ‘সল্ট ফ্রি প্রিজারভেশন অব অ্যানিমেল স্কিন: অ্যান ইকো ফ্রেন্ডলি অ্যাপ্রোচ’ শিরোনামে জমা দেয়া হয়েছে। গবেষণার মূল লক্ষ্য, পরিবেশে লবণজনিত দূষণ কমিয়ে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে চামড়া সংরক্ষণের কার্যকর উপায় নির্ধারণ।

লবণের বিকল্প হিসেবে পারএসিটিক এসিড:

পারএসিটিক এসিড একটি শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ারোধী পদার্থ। যা চামড়ার চর্বি, অর্গানিক ম্যাটার ও ময়লা দূর করে ফাঁকা জায়গা সৃষ্টি করে। এতে ট্যানিংয়ের সময় চামড়ার মধ্যে বেশি পরিমাণে ক্রোমিয়াম প্রবেশ করতে পারে এবং কোলাজেন প্রোটিনের সঙ্গে শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে। ফলে তুলনামূলকভাবে কম ক্রোমিয়াম ব্যবহার করেও কার্যকর ট্যানিং সম্ভব হয় এবং চামড়ার গুণগত মানও উন্নত হয়।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, এ পদ্ধতিতে ১১ গুণ কম ক্রোমিয়াম পরিবেশে নির্গত হয়। যা পরিবেশ দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়। পাশাপাশি পারএসিটিক এসিড ব্যবহারে সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকছে না। ট্যানিং সময় পরিবেশে কম পরিমাণে ক্রোমিয়াম নির্গত হয়। এতে মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ভারী ধাতু ক্রোমিয়াম প্রবেশের সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।

পরীক্ষামূলক সাফল্য:

গবেষক দলের তথ্য অনুযায়ী, গরু ও ছাগলের চামড়া ২ গ্রাম/লিটার ঘনমাত্রার পারএসিটিক এসিডে ডুবিয়ে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে চামড়ায় কোনো পঁচন বা গঠনগত ক্ষতি দেখা যায়নি।

পরিবেশ ও অর্থনৈতিক দিক:

প্রচলিত পদ্ধতিতে একটি খাসির চামড়া সংরক্ষণে ৩০০-৫০০ গ্রাম লবণ লাগে, যা পরবর্তীতে নদী-নালা, খাল-বিলের পানিতে মিশে জলজ পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, পারএসিটিক এসিড ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ ও শ্রম দুটোই সাশ্রয় হয়। এছাড়া আনুষঙ্গিক ব্যয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।

প্রধান গবেষক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হলো— ট্যানিংয়ের আগপর্যন্ত চামড়াটি যাতে পঁচে না যায়, সেটি নিশ্চিত করা। লবণের কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে পারএসিটিক এসিড একটি চমৎকার সমাধান।

চামড়া ব্যবসায়ীদের আগ্রহ:

গবেষকরা জানান, পরীক্ষামূলক সাফল্যের কারণে চামড়া সংরক্ষণের এ পদ্ধতি বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হতে পারে। বিশেষ করে যারা পরিবেশ-সচেতন এবং কম খরচে চামড়া সংরক্ষণ করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি টেকসই বিকল্প হতে পারে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্ধতিটির উদ্ভাবক ড. তৌফিক আলম জানান, এ পদ্ধতি যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি ব্যয়-সাশ্রয়ীও। কোরবানির পর চামড়া ছাড়ানোর ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম পারএসিটিক এসিড মিশিয়ে এক মিনিট ডুবিয়ে নিয়ে বাতাসবিরোধী (এয়ারটাইট) অবস্থায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করলে সহজেই এক মাস পর্যন্ত চামড়া ভালো থাকে।

ববি উপাচার্য প্রধান এ গবেষক মনে করেন,নতুন এ পদ্ধতিটি আরও বড় পরিসরে ব্যবহারের জন্য সরকারের সহযোগিতা দরকার। কোরবানির সময় পরীক্ষামূলকভাবে কিছু এলাকায় এ পদ্ধতিতে চামড়া সংরক্ষণ করলে এর উপকারিতা আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে। এজন্য সরকার চামড়া সংরক্ষণকারীদের প্রশিক্ষণ দিতে পারে এবং পারএসিটিক এসিড সহজলভ্য করতে উদ্যোগ নিতে পারে। জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ অফিস একসঙ্গে কাজ করলে এটি বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে পরিবেশের ক্ষতি কম হবে এবং খরচও বাঁচবে। যা দেশের চামড়া শিল্পের জন্য ভালো দিক হতে পারে।

আপন দেশ/এমএইচ
 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়