
ছবি : আপন দেশ
ঈদুল আজহার পর হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠে চালের বাজার। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে বাজারে চালের ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এ সময়ে সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম স্থিতিশীল ছিল। এবার সে সবজির দামও বাড়তি। বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির বেড়েছে। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তবে মাছ, মাংস, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (২৭ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বর্তমানে চলছে বোরো ধানের ভরা মৌসুম। কিছুদিন আগেই মাঠ থেকে বোরো ধান কেটেছেন কৃষকেরা। অধিকাংশ জমি থেকে ধান কাটা শেষে সরবরাহ করা হয়েছে মিলে। এরই মধ্যে নতুন চাল ঢুকছে বাজারে। তবুও ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার।
বিক্রেতারা জানান, চলতি মাসের শুরুর দিকে উৎপাদনস্থলে হঠাৎ ধানের দাম বেড়ে যায়। এর প্রভাবে তখন পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মিনিকেট চালের দাম বেড়ে যায়। এর আগে গত মে মাসের শুরুতে বাজারে বোরো ধানের চাল আসার পর মিনিকেটের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা কমেছিল।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার খুচরা দোকানগুলোতে ডায়মন্ড, মঞ্জুর, সাগর, রসিদ প্রভৃতি ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে এসব চালের দাম ছিল ৭৫-৭৬ টাকা কেজি। অর্থাৎ কেজিতে দাম বেড়েছে ৫-৬ টাকা। অন্যদিকে মোজাম্মেল মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকা কেজি, যা ঈদের আগে ৮০ টাকার আশপাশে ছিল। কারণ, চালের দাম বেশি বাড়লে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বাড়তে দেখা যায়।
চালের দাম বাড়লেও কাঁচা বাজারে স্বস্তিই ছিল। এবার সে সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম বাড়ায়, প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও। কমলাপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা জহুরুল ইসলাম বলেন, বর্ষা শুরু হয়ে গেছে। একে বৃষ্টিপাত বাড়ায় দেশের অনেক এলাকায় সবজি ক্ষেতে পানি ঢুকে ফসল নষ্ট হচ্ছে। ফলে সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে কোনো কোনো সবজির। দাম সামনে আরও বাড়তে পারে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি টমেটো ১২০-১৮০ টাকা, বরবটি, কাঁকরোল ও কাঁচা মরিচ ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এগুলোর দাম সপ্তাহখানেক আগে কেজিতে ১০-২০ টাকা কম ছিল। এ ছাড়া প্রতি কেজি পটোল, ধুন্দল, চিচিঙ্গা ও ঢ্যাঁড়স ৪০-৫০ টাকা এবং বেগুন ৬০-১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। পেঁপে ৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পটোল ৪০-৫০ টাকা। এছাড়া সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। আলুর দাম বাড়তি রয়েছে। প্রতি কেজি আলু এখন ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ঈদের আগে কেজিতে ৫ টাকা কম ছিল।
বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম এখনো স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে আদা ও রসুনের দাম। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। তবে এক সপ্তাহ আগের তুলনায় আদা ও রসুনের দাম কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে, যেখানে এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল ৯০ থেকে ১৭০ টাকা। অন্যদিকে দেশি রসুনের কেজি এখন ১১০ থেকে ১৪০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৯০ থেকে ১৪০ টাকা।
চাল ও সবজির দাম বাড়লেও বাজারে মুরগির দাম অনেকটা আগের সপ্তাহের মতো রয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়, যা ঈদের আগেও ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২৫ থেকে ২৩৫ টাকা কেজিতে। লাল লেয়ার ও সাদা লেয়ার বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ২৪০ এবং ২৩০ টাকা দরে। দেশি মুরগির দাম এখনও তুলনামূলক বেশি, কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। হাঁস বিক্রি হচ্ছে জাতভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা প্রতি পিস দরে।
এছাড়া বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দামও। বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি দরে, খাসি ১১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস ১০০০ টাকা কেজি। তবে বিক্রেতারা বলছেন, এই দামে কেউ আসছে না। ঈদের পর যাদের ঘরে কোরবানির মাংস আছে, তারা নতুন করে বাজার করছেন না।
ডিমের দামেও ঈদের পর থেকে ক্রমাগত কমতির ধারা চলছে। পাইকারি বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৮ থেকে ১২০ টাকায় আর খুচরা পর্যায়ে এসব ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকায়, যেখানে কয়েক সপ্তাহ আগেও এটি ছিল ১৩৫–১৪০ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানগুলোতে এখনো ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের সময় মাছের বাজারে যে খরা ছিল, এখন তা অনেকটাই কেটে গেছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে এখন রুই, কাতল, পাবদা, চিংড়ি, টেংরা, শিংসহ সবধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। সরবরাহ বেশি থাকায় দামেও নেই বড় কোনো ঊর্ধ্বগতি।
বড় আকারের রুই ও কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি দরে। পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৬০০–৭০০ টাকা, শিং ৪০০–৪৫০ টাকা এবং কৈ ২০০–২২০ টাকায়। এছাড়া সাধারণ তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস পাওয়া যাচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। দেশি জাতের শিং ও কৈ মাছ এখনও দুষ্প্রাপ্য, যার দর যথাক্রমে ১২০০ ও ১০০০ টাকা কেজি।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।