Apan Desh | আপন দেশ

প্রবাসে ঈদের হাসির চেয়ে ক্লান্তি বেশি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক    

প্রকাশিত: ২১:০৩, ২৬ মে ২০২৫

প্রবাসে ঈদের হাসির চেয়ে ক্লান্তি বেশি

ফাইল ছবি

ভালো ভবিষ্যতের আশায় প্রিয়জন থেকে দূরে, ঈদেও নেই একদিনের অবসর। ভোরে নামাজের সুযোগ নেই, নেই নতুন জামা, নেই খুশির খাবার। আর তাই প্রবাসীদের ঈদ—আসলে এক গভীর বিষাদ।

ভালো জীবনের স্বপ্নে, পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর আশায় লাখ লাখ বাংলাদেশি প্রতি বছর পাড়ি জমায় বিদেশে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক জনশুমারি ও গৃহগণনা–২০২২ অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে অবস্থান করছেন। যাদের মধ্যে শুধু সৌদি আরবেই আছেন ২১ লাখের বেশি। তবে প্রবাসে এ মানুষেরা যেভাবে দিনরাত খাটেন, তাতে ঈদ আসে না আনন্দ হয়ে—বরং রূপ নেয় ক্লান্তির উৎসবে।

ঈদের দিন যেখানে দেশে হয় আত্মীয়-পরিজনের মিলনমেলা, কোলাকুলি, গল্প-আড্ডা, সেমাই-পায়েস আর ঈদ সালামির উৎসব—প্রবাসে সেটা কেবল স্মৃতির মতোই রয়ে যায়।

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে কর্মরত মোহাম্মদ মহসিন জানান, ঈদের আগের দিন ছিল তার নাইট ডিউটি। ক্লান্ত শরীরে সকালে বাসায় ফিরতেই সুপারভাইজারের বার্তা—ঈদের দিন সকাল ৭টায় পুনরায় কাজে যোগ দিতে হবে। কোনো ছুটি নেই, কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।

মহসিন বলেন, দেশ থেকে আনা প্রিয় মানুষের পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে ঈদের নামাজ পড়ার স্বপ্ন ছিল, ভোরে উঠে মিষ্টান্ন খাবার খেয়ে নামাজ শেষে বন্ধুদের সঙ্গে কোলাকুলি করার স্বপ্ন ছিল—সব স্বপ্ন ভেঙে গেল এক ডাকে।

ঈদের দিন সকাল থেকে দুপুর, এমনকি বিকেল গড়ালেও কাজ শেষে বাসায় ফেরার অনুমতি মেলেনি। বেশিরভাগ দোকানও বন্ধ, খাবার জোটেনি—এমনকি এক ফোঁটা পানি পর্যন্তও না খেয়ে ছিলেন মহসিন।

তিনি বলেন, ঈদের দিনে আমি ছিলাম এক রকম রোজা অবস্থায়। আনন্দ তো দূরের কথা, খাবার পর্যন্ত মিলেনি। এমন পরিস্থিতি শুধু আমার নয়, অসংখ্য প্রবাসীর জীবন এমনই।

এমন বহু প্রবাসী আছেন, যারা বিদেশে ঈদের দিনেও কাজের খোঁজে দৌড়ান, শুধু একটা কাজ পেলে সেটাকেই তারা ঈদের আনন্দ হিসেবে ভাবেন। তাদের কাছে ঈদ মানে চাকরি পাওয়া, ঈদ মানে পরিবারের জন্য টাকা পাঠানো।

সৌদিতে কর্মরত হাসিব ভাই, সাত বছর ধরে দেশে ফেরেননি। প্রতি ঈদে তিনি পরিবারের জন্য লাখ টাকা পাঠান। অথচ নিজের জন্য কিছু রাখেন না। তিনি বলেন, পরিবার ভালো থাকলেই আমার ঈদ।

অনেকে আছেন যাদের ছুটি মেলে, নামাজে যান, ঘুরতে যান। কিন্তু তাদেরও চোখে পূর্ণ ঈদের হাসি নেই। কারণ, তারা জানেন—ঈদের প্রকৃত আনন্দ পরিবারের সান্নিধ্যেই। বিদেশে উট জবাই করেও যে ঈদের আনন্দ অনুভব হয় না, সেটা দশমিক শুন্যের মতো শূন্যই থেকে যায়।

মাহে রমজানের কথা মনে করে মহসিন বলেন, দেশে মা জোর করে খাইয়ে দিতো। আর এখানে ইফতারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা, মসজিদের বাইরের ফুটপাথে। চাইলেই প্রতিদিন ২০-২২ রিয়াল দিয়ে খেতে পারি। কিন্তু সে টাকা বাঁচিয়ে দেশে পাঠাতে পারলে মনে হয়, এটাই ঈদ।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়