ছবি: আপন দেশ
বাংলাদেশের রাজনীতির মঞ্চে মাঝে মাঝে এমন দৃশ্য দেখা যায়, যা বাস্তবতার সঙ্গে হাস্যরসের এক অদ্ভুত মিশ্রণ তৈরি করে। এবার সেই নাটকের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
রোববার (০২ নভেম্বর) রাজধানীর আল ফালাহ মিলনায়তনে ‘চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানালেন, বিএনপির সঙ্গে কোনো ঝগড়ায় লিপ্ত হতে চায় না তারা। বরং তাদের নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে চায় জামায়াত।
সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, ‘যা-ই করতেছেন এবার বন্ধ করুন। আসুন আমরা একসঙ্গে বসি।’ পরোক্ষভাবে বোঝানো হচ্ছে-যার কাছে বসার কথা ছিল, সেইকেই এবার নিজের সাজানো টেবিলে ডাকছে জামায়াত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ইতোমধ্যে এটিকে ‘ছোট দল বড় দলকে নিজের টেবিলে ডাকছে’ বলে ব্যঙ্গ করে দেখাচ্ছেন।
তরী উজান বায়
জামায়াতের এ উদ্যোগ শুধু রাজনৈতিক কৌশল নয়; এতে রয়েছে গোপন স্বার্থ, হালকা আত্মবিশ্বাস, আর সামান্য নাটকীয়তা। সাধারণত বড় দলের কাছে সমঝোতার দরজা খোলা হয়। কিন্তু এবার উল্টো পরিস্থিতি- ছোট দল নিজের মতো করে টেবিল সাজাল, চেয়ার বসাল, এবং বড় দলের প্রতীক্ষায় থাকল।
তাহের সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন,‘রাজনীতির অনেক খেলা আছে, আমরা খেলতে চাই না। দেশের ভবিষ্যৎ, মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে খোলামেলা আলোচনা জরুরি।’ বলা যায়, কথাগুলো শুনে ভোটাররা হয়তো মনে মনে হাসছেন- রাজনীতির নাটকের এ পর্বে বড় দল অপেক্ষা করছে ছোট দলের আমন্ত্রণের জন্য।
আরও পড়ুন<<>> বাংলাদেশের দুর্নীতি এখন পাকিস্তান আমলের চেয়েও ভয়াবহ: জামায়াত আমীর
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, দলটি ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে প্রস্তুত। বিএনপিকে প্রয়োজনে ১০০ আসন ছাড় দেয়ার কথাও বলেছেন। আর এ প্রস্তুতি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেবল নির্বাচনের কৌশল নয়- এটি দলের আত্মবিশ্বাস দেখানোর নাটকীয় কৌশল।
বেতারে-মিডিয়ার মাধ্যমে আহবান
সাংবাদিকদের প্রশ্ন আসে, বিএনপিকে কি আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে? তাহের জানান, ‘আমরা এখন মিডিয়ার মাধ্যমে আহবান দিচ্ছি। দেখি তারা কাল কী প্রতিক্রিয়া দেখায়।’ অর্থাৎ আনুষ্ঠানিক চিঠি নেই, বরং জনসমক্ষে নাটকীয় বার্তা।
একই সঙ্গে তিনি জানান, সোমবার (০৩ নভেম্বর) দলীয় বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি ও আলোচনা নির্ধারণ হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বিএনপির প্রতিক্রিয়ার জন্য এক ধরনের চাপ সৃষ্টির কৌশল- ছোট দল বড় দলকে টেবিলে ডেকেও নিজের গুরুত্ব প্রমাণের চেষ্টা।
রাজনীতির রসিকতা
রাজনৈতিক মঞ্চে এ দৃশ্য ইতোমধ্যেই হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষক ড. আমিনূল ইসলাম মন্তব্য করেন, ‘যার কাছে গিয়ে বসার কথা ছিল, তাকেই নিজের টেবিলে ডাক- এটাই বাংলাদেশের রাজনীতির রসিকতা।’ একদিকে আগ্রাসন দেখাতে চায়, অন্যদিকে নিজেদের কৌশলগত স্বার্থের কারণে ‘বড় দলকে কাছে ডাকা’ অভিনয় চালাচ্ছে।
এখানেই দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে ব্যঙ্গের মিশ্রণ। বিএনপি এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। ভোট ও আসন ভাগাভাগির দিকে নজর রেখে অনেকেই আগ্রহভরে দেখছেন, এ উল্টো নাটক কতদূর গড়ায়।
শেষ পর্যন্ত, এ আলোচনা শুধু একটি রাজনৈতিক আহবান নয়, বরং বিরোধী রাজনীতির নতুন অধ্যায়ের সূচনা। ভোটের মাঠে আসল দৃশ্যাবলী হয়তো আরও নাটকীয় হবে। তবে এটাই নিশ্চিত- যার কাছে যাওয়া উচিত ছিল বা কথা ছিল, সেইকেই নিজের টেবিলে ডাকার কৌশল এখন সবাইকে দেখতে হচ্ছে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































