Apan Desh | আপন দেশ

পদ্মাসেতুর তিনবছর পূর্তি: সদরঘাটের লঞ্চ ব্যবসায় ধস

মো. ইমরান

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ২৫ জুন ২০২৫

আপডেট: ২১:৪৭, ২৫ জুন ২০২৫

পদ্মাসেতুর তিনবছর পূর্তি: সদরঘাটের লঞ্চ ব্যবসায় ধস

ছবি: আপন দেশ

নদীপথে যাতায়াত ব্যবস্থা মানব সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশের নৌপথে সদরঘাট দাঁড়িয়ে আছে তারই সাক্ষ্য নিয়ে। কিন্তু পদ্মাসেতু চালুর পর থেকেই বিরূপ প্রভাব পড়েছে সদরঘাটের লঞ্চ ব্যবসায়। সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ৪৩টি নৌরুটের চিরচেনা রূপ বদলে গেছে রাতারাতি। একসময় কুলিদের হাঁকডাক ও যাত্রীদের ভিড়ে মুখর থাকলেও সদরঘাট এখন অনেকটাই ফাঁকা।

পদ্মাসেতুর সুবাদে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা এখন সড়কপথে স্বল্প খরচ ও কম সময়ে পৌঁছে যান গন্তব্যে। ফলে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে লঞ্চযাত্রা। দেশের নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে  জ্বালানি তেলের দাম কমানোসহ সদরঘাট পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর দাবি লঞ্চ মালিক সমিতির।

পদ্মাসেতুর তিনবছর পূর্তি আজ (২৫ জুন)। ২০২৩ সালে আজকের এ দিনে জমকালো আয়োজনে উদ্ভোধন করা হয়েছিল দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মাসেতু। এর সুফলও ভোগ করছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা। অপরদিকে, পদ্মাসেতুর এ সুফলের বিরূপ প্রভাব পড়েছে সদরঘাটের লঞ্চ ব্যবসায়। যাত্রীর অপ্রতুলতা, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ নানামুখী সংকটে দেশের প্রধান নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে ধারাবাহিক লোকসানের মুখে বাধ্য হয়ে কমানো হয়েছে লঞ্চ ও রুট সংখ্যা।

সুন্দরবন লঞ্চ সার্ভিসের এক কোয়ার্টার মাস্টার বলেন, এখন ডাল সিজন, যাত্রী নেই বললেই চলে। দুই ঈদে যাত্রীর চাপ থাকে। পদ্মাসেতু হওয়ার পর লঞ্চে যাত্রী কমেছে। আগে সদরঘাটে যে ভীড় থাকত, তার তুলনায় এখন কিছুই নেই।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, একসময় ঢাকা থেকে ৪৩টি নৌরুটে চলাচল করত প্রায় ২২০টি লঞ্চ । বর্তমানে যাত্রী সংকটে ৩৭টি রুটে চলাচল করে ১৭০টি লঞ্চ। আগে প্রতিদিন সদরঘাট ছেড়ে যেত ৯০ থেকে ৯৫টি লঞ্চ , এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬০ থেকে ৬৫টি। সরেজমিনে দেখা যায়, রুট কমেছে দক্ষিণাঞ্চলে, লঞ্চ কমেছে সকল রুটে।

বিআইডাব্লিউটিএ'র সদরঘাট ট্রাফিক ইনচার্জ হুমায়ুন কবির জানান, পদ্মসেতুর বিরূপ প্রভাবে নৌরুট কমেছে ৬টি। এরমধ্যে বরিশাল বেল্টের নৌরুট কমেছে ৫টি। তরকি, মাদারীপুর, ঘুমা, পাতাবুনিয়া, দেওয়ানবাড়ী, তুষখালিসহ বেশ কয়েকটি রুটে লঞ্চ চলাচল একেবারেই বন্ধ করা হয়েছে। পদ্মাসেতু চালুর আগে বরিশালের উদ্দেশ্যে শিডিউল অনুযায়ী লঞ্চ চলত ৮টি, এখন চালু রয়েছে মাত্র ২টি। পটুয়াখালীতে ৫টি লঞ্চ চলাচল করলেও এখন চলছে ২টি, বরগুনাতে ৪টি থেকে কমে দাঁড়িয়েছে একটিতে। এছাড়া চাঁদপুর ও ভোলা রুটেও কিছু সংখ্যক লঞ্চ কমেছে।

লঞ্চ মালিক সমিতির দাবি, তেলের উচ্চমূল্যের কারণে যাত্রী কমলেও ভাড়া কমানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি লিটার তেলের দাম ৯০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৩০ টাকা পৌঁছেছে। বর্তমানে প্রতি লিটার তেলের দাম ১১৫ টাকা। ফলে ঢাকা-বরিশাল রুটের একটি ট্রিপে( যাওয়া- আসা) গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা খরচ হয়। অথচ যাত্রী সংকটের কারণে সে খরচও ওঠে না। ডাল সিজনে আমরা প্রতি ট্রিপেই লসে থাকি। লঞ্চ ব্যবসার এ মন্দা প্রভাব পড়েছে লঞ্চে কর্মরত শত শত কর্মচারীর জীবিকায়। জীবিকার তাগিদে তারা বেছে নিচ্ছেন বিকল্প পেশা।

ট্রাফিক ইনচার্জ হুমায়ুন কবিরের দাবি, অধিকাংশ  লঞ্চকর্মী জীবিকার তাগিদে বাল্কহেড, অয়েল ট্যাংকার, বালুবাহী কার্গোসহ বিভিন্ন ধরণের নৌযানে কাজ নিচ্ছেন। লঞ্চ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে বিকল্প জ্বালানির চিন্তা করতে হবে। ভারতের মতো সোলার প্যানেলের সাহায্যে লঞ্চ চালানোর ব্যবস্থা গড়ে তুললে এ ব্যবসা বাঁচানো সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি। 

নদীপথে লঞ্চ যোগাযোগ টিকিয়ে রাখতে তেলের মূল্য কমানোর দাবি জানায় লঞ্চ মালিক সমিতি। পাশাপাশি পুরান ঢাকাকে মেট্রোরেল প্রকল্পে যুক্ত করার দাবিও জানান তারা।

লঞ্চ মালিক সমিতির হিসাবরক্ষক মো.হান্নান খান বলেন, ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সদরঘাট আসতে যানজটের কারণে যাত্রীদের অনেক সময় লেগে যায়। গুলিস্তান থেকে সদরঘাট সড়কে অবৈধ হকারি দোকানের কারণে তীব্র যানজট থাকে। যাত্রীরা এ ভোগান্তি সহ্য না করে বাসে যাতায়াত করে। তাই আমাদের দাবি, সদরঘাটকে মেট্রোরেল প্রকল্পে যুক্ত করে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করা। অথবা সরকারকে পুরান ঢাকার যানজট কমানোর উদ্যোগ নেয়া।

তিনি আরও বলেন, সদরঘাটে এসেও যাত্রীরা বিরক্ত হন। এখানকার কুলিরা মাল পরিবহনের বিনিময়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। যাত্রীদের হেনস্থা করে। আসলে কুলিদেরও উপায় নেই। সরকার ইজারা দিয়ে কুলি হাট বিক্রি করে। তাই আমরা সরকারের কাছে ইজারা প্রথা বাতিলের দাবি জানাই। হয়রানি ও ভোগান্তি কমলে যাত্রীরা লঞ্চে যাতায়াত করবে আর এতে যাত্রীও বাড়বে।

আপন দেশ/এমএইচ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়