
ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান ও সেনাপ্রধানের সরাসরি অবস্থান তার জন্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে—প্রফেসর ইউনূস কি অবস্থান বদলে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াবেন। নাকি সবকিছু ছেড়ে নিজের অবস্থান বদল করবেন?
সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সরকারের একাধিক নীতির সঙ্গে মতানৈক্যের কথা প্রকাশ্যে এনেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হতে হবে—যা নিয়ে ইউনূস বরাবরই দ্বিধায় ছিলেন। তার উপদেষ্টারা বিষয়টি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
রাখাইনে প্রস্তাবিত মানবিক করিডোর নিয়েও সরকারের ভেতরে ও বাইরে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। জাতিসংঘ মহাসচিবের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়ার চেষ্টা করা হলেও রাজনৈতিক দলগুলো একে ‘অন্ধকারে রাখার কৌশল’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। সেনাপ্রধান একে জাতির জন্য আত্মঘাতী আখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী করিডোরের বিপক্ষে।
আরও পড়ুন>>>ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত: সেনাপ্রধান
সাম্প্রতিক ‘মবতন্ত্র’ পরিস্থিতি। যেখানে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে, তা নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য ছিল কঠোর। তিনি জানান, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি আর বরদাশত করা হবে না। চট্টগ্রাম বন্দরের সম্ভাব্য বিদেশি হস্তান্তর ও এ বিষয়ে সরকারের একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়েও তিনি সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন।
এর মধ্যেই আলোচিত দরবার বৈঠকে সেনাবাহিনী তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। সরকারঘনিষ্ঠ একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা সেনাপ্রধানকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেও বাস্তবতা হলো—এ অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল কেন্দ্রীয়।
নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুক পোস্টে সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে ঘিরে তার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের সাব-কনশাস মাইন্ডে আর্মিকে রাজনৈতিক সালিসের ক্ষমতা দিয়ে দেয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অথচ বিএনপি ঐতিহাসিকভাবে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ভুক্তভোগী একটি দল। আমরা এখনো ওয়ান-ইলেভেনের ইতিহাস ভুলে যাইনি। এখনো তারেক রহমানের নির্যাতনের ঘটনা আমাদের স্মরণে রয়েছে।
আরও পড়ুন>>>‘আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের পথ তৈরি হচ্ছে, সতর্ক থাকুন’
তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পাহারাদার। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকার ও সুষ্ঠু ক্ষমতা হস্তান্তরের যে আকাঙ্ক্ষা থেকে ২০২৪-এর অভ্যুত্থান ঘটেছে, সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে আমরা মেনে নেব না। রাজনৈতিক সালিসের সুযোগ দিয়ে আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের পথ কেউ প্রশস্ত করছে কি না—তা নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সমঝোতার আহবান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ। সংগঠনটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসকে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহবান জানাই। জাতীয় ঐক্য ছাড়া এ সংকট উত্তরণ সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন>>>সর্বদলীয় বৈঠক চায় জামায়াত
এদিকে প্রফেসর ইউনূসের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হয় তিনি বর্তমান বাস্তবতা মেনে দায়িত্বে থাকবেন, নতুবা পদত্যাগ করে তার পুরোনো জীবনে ফিরে যাবেন। অতীতে দল গঠন ও বিলুপ্তির নজিরও রয়েছে তার। অতএব, তার সিদ্ধান্ত পূর্বাভাস দেয়া কঠিন।
একই সঙ্গে সরকারে থাকা কিছু উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, এরা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দিতে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি চালিয়েছেন। এনসিপি প্রকাশ্যে দাবি জানিয়েছে, অন্তত তিনজন উপদেষ্টাকে এখনই সরিয়ে দেয়া উচিত—তাদের মধ্যে রয়েছেন ড. সালেহউদ্দিন, ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও ড. আসিফ নজরুল।
আবার বিএনপি বলছে, সরকারে থাকা এনসিপি-ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদেরও সরানো দরকার। বিশেষ করে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমকে।
এ সব উত্তেজনার মাঝেও দেশের সাধারণ মানুষ একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে —এ সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন কতটা স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করছে নির্বাচনী পদক্ষেপের ওপর।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।