
ছবি : আপন দেশ
মাদক বিরোধী অভিযানের নামে লুটপাট ও জব্দকৃত বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আত্মসাতের অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা প্রধানসহ চার গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক প্রশাসন মো. মাসুদ হোসেন পিএএ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাদের প্রধান কার্যালয় সংযুক্তির আদেশ দেয়া হয়।
আদেশে বলা হযয়েছে, প্রশাসনিক কারণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মারফিয়া আফরোজ, একই কার্যালয়ের উপ পরিদর্শক জান্নাতুল ফেরদাউস, সহকারী উপ পরিদর্শক আতাউল হক ও সিপাহী সোহেল রানাকে অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্তি করা হলো। বর্ণিত কর্মকর্তাগ ৯ জুলাই অপরাহ্নে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হবেন এবং ১০ জুলাই পূর্বাহ্নে প্রধান কার্যালয় যোগদান করবেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন কমে এ আদেশ কার্যকর করা হবে।
ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের গোয়েন্দা প্রধান সহকারী পরিচালক মারফিয়া আফরোজের নেতৃত্বে টঙ্গীতে এক মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে অভিযানের নামে লুটপাট ও আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে কদিন ধরেই নজরদারিতে রাখা হচ্ছিল এ টিমকে। বিষয়টি বুঝতে পেরে আত্মগোপনে চলে যাযন সহকারি পরিচালক মরফিয়া আফরোজ। সুনির্দিষ্ট তথ্য ও গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগে মহাপরিচলকের নির্দেশে ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা সহকারি পরিচালকের অফিস কক্ষটি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ প্রথমে সিলগালা করে দেয়।
সহকারী পরিচালকের কোন হদিস না পাওয়ায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক অপারেশন অতিরিক্ত ডিআইজি বশির আহমদ, অতিরিক্ত পরিচালক গোয়েন্দা বদরুদ্দিন, বিভাগীয় পরিচালক ও উপ-পরিচালকের এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সিলগালা করা অফিস কক্ষটি বুধবার (০৯ জুলাই) বিকেলে খোলা হয়। অফিসের প্রতিটি কাগজ পত্র ও দ্রব্যাদি ইনভেন্টরি করে উদ্ধার করে আবার সিলগালা করে দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে ২৩ লক্ষ টাকার চেক, নগদ ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, ও ৫ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও অন্যান্য সূত্র জানায় গত ২২ জুন সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় ঢাকা বিভাগীয় সহকারী পরিচালক গোয়েন্দা মারফিয়া আফরোজের নেতৃত্বে টঙ্গী থানার ৭৩ /৪ দক্ষিণপাড়া জুয়েল হুসাইনের বাসার তৃতীয় তলার উত্তর পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া রমিজ উদ্দিনের বসত ঘরে তল্লাশি চালায়। টঙ্গী পশ্চিম থানার মামলার এজাহারে বাদী সহকারি পরিচালক মারফিয়া উল্লেখ করেন সেখানে অভিযানের সময় তিন প্যাকেট থেকে ১৫ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে আসামি রমিজ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে টঙ্গী থানায় সোপর্দ করা হয়। রমিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ইয়াবা ট্যাবলেট সংরক্ষণ ও বহন করে বিক্রির অভিযোগ আনা হয়। সহকারী পরিচালক উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য ও অন্যান্য মালামাল জব্দ করে অফিসে নিয়ে যায়। ঘটনার পরপরই আসামি পক্ষ ও পরিবারের সদস্যরা মামলার এজাহার দেখে অভিযানের সময় উদ্ধারকৃত সব মালামালের অনেক কিছুই এজাহারে উল্লেখ করেনি। সহকারি পরিচালক উদ্ধারকৃত চেক ও অন্যান্য মালামাল আত্মসাৎ এর উদ্দেশ্যে নিজ জিমায় অফিসে জমা রেখেছে।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবরে ভুক্তভোগী ও টিমের অন্যান্য সদস্যগণ কতৃক অভিযোগ দেয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে সহকারী পরিচালক গোয়েন্দার অফিস কক্ষটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গিয়ে সিলগালা করেন। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক প্রশাসন অতিরিক্ত ডিআইজি বশির আহমদের নেতৃত্বে সিনিয়র কর্মকর্তারা তল্লাশি করেন।
অফিস কক্ষটির তল্লাশির পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আবার সিলগালা করে রাখা হয়। এ সময় অতিরিক্ত পরিচালক গোয়েন্দা বদর উদ্দিন, অতিরিক্ত পরিচালক ঢাকা বিভাগ, উপ-পরিচালক গোয়েন্দা খুরশিদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া সহকারী পরিচালক গোয়েন্দা মারফিয়া আফরোদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে উদ্ধার করা এক কোটি টাকার মোটা অংকের চেক ও বিপুলসংখ্যক উদ্ধারের মালামাল মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানার পরেই সহকারী পরিচালকের অফিসটি সিলগালা করার খবরে আত্মগোপনে চলে যায় মারফিয়া আফরোজ।
একটি সূত্র জানায় অসুস্থতার কথা বলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সহকারী পরিচালক। টঙ্গীর ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া অন্যান্য কর্মকর্তারা হলেন পরিদর্শক সাহরিয়া শারমিন, উপ পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সহকারী উপ পরিদর্শক দর্শক মোহাম্মদ জান্নাতুল ফেরদাউস ৷ আতাবুল হক সিপাহী সোহেল রানা, সাইমুম হাসান গান ও লুৎফর রহমান৷
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হাসান মারুফের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তারও জবাব দেননি।
প্রসঙ্গত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে কর্মকর্তাদের মাদকবিরোধী অভিযানের নামে লুট পার্ট ও আত্মসাতের ঘটনা সম্প্রতি ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছে। কয়েক দিন আগেও টাঙ্গাইল অভিজানের নামে লুটপাটের ঘটনায় তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।