 
										ফাইল ছবি
দিনকে দিন মানবাধিকার ভুলণ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশে। বিভিন্ন জেলায় কারাবন্দিদের হাতে-পায়ে বেড়ি পরানোর ইস্যু বিশ্বের নজর কেড়েছে। আঁচ পড়েছে দেশের উচ্চ আদালতের বিচারকদের মনেও। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) আদালতের একটি বেঞ্জ ডাণ্ডাবেড়ি ইস্যুতে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, একের পর এক এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত থাকলে আমরা অসভ্য জাতিতে পরিণত হতে পারি। ইতোমধ্যে দেশের মানবাধিকার নিয়ে কড়া বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও।
গত দুই বছরে একাধিক ব্যক্তি প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন। তবে তাদেরকে হাতে-পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর নজির রয়েছে। আপন দেশের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যমতে, ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর একজন, ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর দুজন এবং চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি একজনকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তাদের কারো মা, কারো বাবার মৃত্যুজনিত কারণে কয়েক ঘণ্টার জন্য মুক্তি মেলে। এরা সবাই বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শের।
শোকাবহ পরিবেশকে আরও শোকাতুর করে তুলে হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছে। সংবাদপত্রে বিস্তৃর্ণ জায়গা পেয়েছে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো ছবি। এ নিয়ে জেল সুপারদের বক্তব্য হলো- সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বন্দিদেরকে নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। তবে জেল আইন প্রতিপালন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>> ডান্ডাবেড়ি পরেই মায়ের জানাজায় ইমামতি
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর বেঞ্চে প্রতিবেদন উপস্থান করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কায়সার কামাল। তাতে উল্লেখ করা হয়, বাবার জানাজায় অংশ নিতে প্যারোলে মুক্তি পান পটুয়াখালীর ছাত্রদল নেতা নাজমুল মৃধা। অংশও নেন, তবে ডাণ্ডাবেড়ি পরিহিত অবস্থায়।
উত্থাপিত প্রতিবেদন পড়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। বেঞ্জ বলেন, ‘একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে আমরা অসভ্য জাতিতে পরিণত হতে পারি’।
হাতকড়া-ডাণ্ডাবেড়ি
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল মৃধা। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন। গত শনিবার দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাবার জানাজায় অংশ নিতে তাকে প্যারোলে মুক্তি দেন আদালত। মুক্তি পর ডাণ্ডাবেড়ি পড়া অবস্থায় বাবার জানাজায় অংশ নেন নাজমুল। পরে দাফন শেষ হওয়ার আগেই তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়।
২০২৩ সালের ৩ জুন। খুলনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান রুনু প্যারোলে মুক্তি পান। তবে হাতকড়া পরেই বাবার জানাজায় অংশ নিতে হয়। দাফন শেষে তাকে আবারও জেলা কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ।
ওই বছর ২১ ডিসেম্বর। ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় মায়ের জানাজায় অংশ নেন সাইদুল ইসলাম। প্যারোলে ৬ ঘণ্টার জন্য মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি। ডাণ্ডাবেড়ি পরে ৫৬ কিলোমিটার দূরে নওগাঁর গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয় তাকে।
আরও পড়ুন>> বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষায় অ্যামনেস্টির ১০ দফা
একই দিনে হাতকড়া পড়ে মায়ের জানাজায় অংশ নেন সায়েম আহমদ চয়ন। তিনি হবিগঞ্জের আলিফ সোবহান চৌধুরী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক। মায়ের জানাজায় অংশ নিতে দুই ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পান।
২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বরই। হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি পরে মায়ের জানাজায় অংশ নেন আলী আজম। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তিনি। ওই সময় জেলা সুপার মোহাম্মদ বজলুর রশিদ জানান, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপি নেতা আলী আজমকে তার বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। তবে জেল আইন প্রতিপালন করা হয়।
মানবাধিকার সংস্থা
বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ১০ দফা পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটি এটিকে ‘মানবাধিকার সনদ’ বলেও উল্লেখ করেছে। তাতে রয়েছে- মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো, প্রতিবাদকে সুরক্ষা দেয়া, রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে দায়মুক্তির অবসান, নারীর অধিকার রক্ষা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার রক্ষা, মৃত্যুদণ্ড বিলোপ, জলবায়ুসংকট মোকাবেলায় অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পদক্ষেপ, পুলিশ-কারা হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতনের ক্ষেত্রে দায়মুক্তির অবসান এবং কর্পোরেট দায়বদ্ধতা ও শ্রম অধিকার সমুন্নত রাখা।
আরও পড়ুন>> নির্বাচন নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন
এছাড়াও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশকে উদ্দেশ্য করে বলেছে, বিরোধী রাজনৈতিক মত দমনে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারাবন্দি অবস্থায় নেতাকর্মীদের মৃত্যু উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। একইসঙ্গে সকলের মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
ক্যাপশন- 
১- হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি পরে মায়ের জানাজায় অংশ নেন গাজীপুরের বিএনপি নেতা আলী আজম।
২- ডান্ডাবেড়ি পরেই মায়ের জানাজায় ইমামতি করেন নওগাঁর জামায়াত কর্মী সাইদুল ইসলাম।
৩- হাতকড়া হাতে মায়ের জানাজায় হবিগঞ্জের ছাত্রদল নেতা সায়েম আহমদ চয়ন। 
৪ ও ৫- খুলনার রূপসায় হাতকড়া হাতে বাবার জানাজায় আতাউর রহমান রুনু।
৬. ডান্ডাবেড়ি পরে বাবার জানাজায় পটুয়াখালীর ছাত্রদল নেতা নাজমুল মৃধা।
আপন দেশ/এসএমএ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































