ছবি: সংগৃহীত
২০০৮ সালের কোন এক বৃষ্টিমুখর দিনে বোনের বাড়ি থেকে আইসক্রিম কিনতে গিয়ে পথ হারিয়েছিল ১০ বছর বয়সী কিরণ। তারপর কেটে গেছে দেড় দশকেরও বেশি সময়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার ও স্বজনেরা। অবশেষে নিখোঁজের ১৭ বছর পর বাড়ি ফিরেছেন এ তরুণী। ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে।
বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের কাসুর জেলার একটি ছোট্ট গ্রামে থাকত কিরণ। পরিবারে ছিলেন বাবা-মা এবং ভাইবোন। কিন্তু পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের থেকে অনেক দূরে করাচির ইধি সেন্টারে দিন কেটেছে তার।
ইধি ফাউন্ডেশন পাকিস্তানের একটি অলাভজনক সংস্থা যারা বিভিন্ন ধরনের সামাজকল্যাণমূলক কাজ করে। তাদেরই একটি হোমে বড় হয়েছে কিরণ। বাবা-মা, এবং তার ভাই বোনেরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেও হতাশাই মিলেছে। তবে দীর্ঘ ১৭ বছরের অপেক্ষার পর তাদের এ হতাশাই আনন্দের রূপ নেয়। যখন পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ‘সেফ সিটি প্রজেক্ট‘-এর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা কিরণ সম্পর্কে একটি সূত্রের খোঁজ পান।
কিরণের বাড়ি ফেরা নিয়ে বাবা আব্দুল মাজিদ বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কথা বলতে চাননি। তবে কিরণের চাচা আসাদ মুনির এ বিষয়ে অনেক তথ্য দিয়েছেন। আসাদ মুনির কাসুর জেলার বাগরি গ্রামের বাসিন্দা।
তিনি বলেন, ১৭ বছর আগে, কিরণের বয়স যখন মাত্র ১০ বছর, তখন সে ইসলামাবাদের জি-১০ এলাকায় আমার বোন, মানে তার পিসির বাড়িতে থাকত। বাড়ির ঠিক সামনেই জি-১০ সেন্টার। সেখানে আইসক্রিম কিনতে গিয়েছিল ও। এটি ২০০৮ সালের কথা। সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল।
আসাদ মুনির বলেন, সময় পেরিয়ে গেলেও কিরণ বাড়ি না ফেরায় তাকে খোঁজাখুঁজি করা শুরু হয়। কিন্তু তার আর খোঁজ মেলেনি। সে সময়, তাকে সব জায়গায় খোঁজা হয়েছিল, একটা কোণাও বাদ যায়নি। কিন্তু কিরণের খোঁজ মেলেনি।
সে দিনের কথা মনে করে কিরণ বলেছেন, প্রথমে আমাকে ইসলামাবাদের ইধি সেন্টারে রাখা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পর বিলকিস ইধি আমাকে আমাকে করাচির ইধি সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে আমি ১৭ বছর ছিলাম।
আরও পড়ুন<<>>নেতানিয়াহুকে নিয়ে তেল আবিবে ব্যাপক বিক্ষোভ
করাচির ইধি সেন্টারের কর্মরত শাবানা ফয়সল বলেন, ১৭ বছর আগে কিরণ ইসলামাবাদের ইধি সেন্টারে এসেছিল। সম্ভবত রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিল। আমাদের জানিয়েছিল যে কেউ ওকে সেখানে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছিলেন। কিছু সময়ের জন্য ইসলামাবাদের ইধি সেন্টারেই ছিল। সে সময়ে, বিলকিস ইধি ইসলামাবাদ ইধি সেন্টার পরিদর্শনে এসেছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেন, কিরণের শরীর ভালো নেই। তাই তিনি তাকে করাচির ইধি সেন্টারে নিয়ে যান।
শাবানা ফয়সাল জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে, পাঞ্জাব পুলিশের ‘সেফ সিটি প্রজেক্ট‘ প্রকল্পের অন্তর্গত ‘মেরা প্যায়ারা‘ নামকর একটি দল করাচির ইধি সেন্টারে গিয়েছিল। সে সময় ওই দলের সদস্যরা কিরণের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন এবং তার পরিবারকে খুঁজে বার করার দায়িত্ব নেন।
লাহোরের ‘মেরা প্যায়ারা‘ প্রকল্পের একজন সিনিয়র পুলিশ কমিউনিকেশন অফিসারের পদে রয়েছেন সিদরা ইকরাম। তিনি বলেন, ‘মেরা প্যায়ারা‘ প্রকল্পটি পাঞ্জাব পুলিশের সেফ সিটি প্রোগ্রামের আওতায় শুরু করা হয়েছে, যার লক্ষ্য হল হারানো শিশুদের তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুনর্মিলন ঘটানো।
তার কথায়, ‘আমাদের দলগুলি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাসরত শিশুদের ইন্টারভিউ নেয়। তারপর সে সাক্ষাৎকারে পাওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে শিশুর পরিবারের বিষয়ে খোঁজ চালানো হয়।
তিনি জানিয়েছেন কিরণের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। সিদরা ইকরাম বলেন, আমাদের একটি দল করাচির ইধি সেন্টার পরিদর্শন করেছিল যেখানে অন্যান্য দুঃস্থ শিশুদের সঙ্গে কিরণের সাক্ষাৎকার নেয়া হয় এবং তার সম্পর্কে তথ্যও সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিরণের খুব বেশি কিছু মনে ছিল না। এইটুকু বলতে পেরেছিল যে সে মূলত কাসুর জেলার বাসিন্দা এবং ইসলামাবাদে তার আত্মীয়দের সঙ্গে থাকত।
সিদরা ইকরম বলেন যে, কিরণ তার বাবার নাম আব্দুল মাজিদ এবং তার গ্রামের নামও মনে রেখেছে। এ তথ্য আমরা আমাদের কাসুরস্থিত অফিসে পৌঁছে দিয়ে তাদের অনুরোধ করি যাতে কিরণের আত্মীয়দের খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
আসাদ মুনির জানান, যখন আব্দুল মাজিদ তার মেয়েকে শনাক্ত করেন তখন সে কথা আমকেই প্রথম জানিয়েছিল। আমি লক্ষ্য করেছি ওর চোখের পানি ধরছিল না। তবে এর আগে চোখের পানির পিছনে কষ্ট ছিল আর এখন তা আনন্দাশ্রু।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































