
ছবি : আপন দেশ
দেশের ডেইরি শিল্প দেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দুধ ও মাংসের চাহিদা বাড়ছে, যা দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ এবং সঠিক নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে এ শিল্পের ভিত্তি শক্তিশালী করা সম্ভব।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডেইরি শিল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব ইফতেখার ইসলাম।
বর্তমানে দেশে দুধের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৬২ লাখ মেট্রিক টন, যেখানে উৎপাদন প্রায় ১ কোটি ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। এর ফলে দুধের একটি সামান্য ঘাটতি রয়েছে। মাথাপিছু দৈনিক দুধ গ্রহণের পরিমাণ প্রায় ২২০-২২২ মিলিলিটার, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত ২৫০ মিলিলিটারের চেয়ে কিছুটা কম। এ ঘাটতি পূরণের জন্য বাংলাদেশকে দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি করতে হয়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপ সৃষ্টি করে।
গরুর মাংসের ক্ষেত্রে চাহিদা ও উৎপাদনের ব্যবধান রয়েছে। ২০২৬ সালের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মাংসের বাৎসরিক চাহিদা প্রায় ১ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন এবং উৎপাদন প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন।মাংসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলছে।
আরও পড়ুন<<>>গকসু ভিপি ইয়াছিন, জিএস রায়হান
বাংলাদেশে প্রধানত স্থানীয় জাতের পাশাপাশি পাবনা, সিন্ধি এবং রেড চিটাগং ক্যাটল জাতের গরু পালন করা হয়। তবে দুধের উৎপাদন বাড়াতে সংকর জাতের গরুর প্রতি খামারিদের আগ্রহ বাড়ছে। দুধের গুণগত মান ও জাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। জেনেটিক্স ও বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করে উন্নত দেশগুলো গবাদিপশুর উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে, যা বাংলাদেশেও প্রয়োগ করা জরুরি।
জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে গবাদিপশুর ডিএনএ বিশ্লেষণ করে উন্নত প্রজনন কৌশল নির্ধারণ করা সম্ভব। বায়োলজিক্যাল মার্কার ব্যবহার করে দুধ উৎপাদন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী জিনগুলো শনাক্ত করা যায়। ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন ও ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চ উৎপাদনশীল গাভী তৈরি করে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
ডেইরি শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত তথ্যভান্ডার বা ডাটাবেজ তৈরি করা প্রয়োজন, যেখানে গবাদিপশুর বংশ, উৎপাদন, রোগ এবং প্রজনন সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। এর পাশাপাশি, খামারিদের সক্ষমতা বাড়াতে সরকারি ভর্তুকি, ঋণের সুবিধা এবং ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা জরুরি।
আধুনিক প্রযুক্তি যেমন: পিসিআর, ডিএনএ প্রোফাইলিং ইত্যাদি বিষয়ে তরুণদের প্রশিক্ষণ দিলে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে, যা এ শিল্পের বৈজ্ঞানিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করবে।
প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে অনুসরণ করে বাংলাদেশও নিজস্ব উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে। দেশে পাবনা ও মিরকাদেম জাতের উন্নয়ন হলে দুধ উৎপাদন সহজেই দ্বিগুণ হতে পারে। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল মাংসের ঘাটতি পূরণে গুরুত্ব রাখবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠা ১০০টির বেশি সমবায় খামার প্রতি বছর ৫ থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত দুধ উৎপাদনে সহায়ক হবে এবং এ শিল্প দেশের জিডিপিকে ৫ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারবে।
বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতি এ উন্নয়নের সুফল উপভোগ করবে, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিপুল ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার সুষম খাদ্য হিসেবে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, মান নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ, বাজারজাতকরণ এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেছে। এ বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে এটি কার্যকর হয়। একই দিন থেকে ‘বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০২৩’ কার্যকর ঘোষণা করেছে সরকার। সরকারের এমন উদ্যোগ দুগ্ধ শিল্পকে আরো উন্নত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিশেষে সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ডেইরি শিল্প একটি শক্তিশালী ও টেকসই খাতে পরিণত হতে পারে। এর মাধ্যমে দেশের দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণ করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।