
আলাউদ্দিন নাসিম-আ.জ.ম. নাছির ও শাহাদাত হোসেন সেলিম।
চট্টগ্রাম বন্দরের সিন্ডিকেট, দলবদলের রাজনীতি আর কোটি কোটি টাকার লুট- সবখানেই জড়িত ধনকুবের শাহাদাত হোসেন সেলিম। ছাত্রদল থেকে শুরু করে বিএনপি, এলডিপি, আবার আওয়ামী ঘনিষ্ঠতা- সবখানেই তার পদচারণা। বিএনপির শরিক ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র হয়েও গোপনে কাজ করেছেন আওয়ামী শেল্টারে থেকে। আলাউদ্দিন নাসিম-আ.জ.ম. নাছিরদের সঙ্গে তার যৌথ ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য এখনো দুদকের অগোচরে নিরাপদ।
যেটুকু উল্লেখ করা হয়েছে তা জানেন প্রায় সবাই। কিন্তু এর অন্তরালে শাহাদাত হোসেন সেলিম চট্টগ্রাম পোর্ট কেন্দ্রিক গড়ে তুলেছিলেন অপ্ররোদ্ধ চক্র। সে চক্রের সামনের সারিতে ছিলেন পলাতক শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাছিম,তার ভাই জালাল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির। এরা পরস্পরের ব্যবসায়িক পার্টনার।
সেলিম বিএনপির ঘরে ঢুকে সংগ্রহ করতেন তথ্য আর পার্টনারদের মাধ্যমে তা পাচার করতেন শেখ হাসিনার কাছে। প্রতিবেশী ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাকে ‘র’ বিএনপির আগাম পরিকল্পনার তথ্য যারা সরবরাহ করতেন এ চক্র অন্যতম। ৫ আগস্টের পর সেলিম বাদে অন্যরা পলাতক। ‘ক্ষমতায় যারা সামনে তারা’-এ ছিল তাদের প্রতিশ্রুতি। সেমতেই বর্তমানে তাদের ব্যবসাবাণিজ্য দেখভাল করছেন শাহাদাত হোসেন সেলিম।
গত নির্বাচনগুলোতে অংশ না নিতে পারলেও সমর্থিত ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে নির্দেশনা ছিল সেলিমের। যা নিয়ে তার নির্বাচনী আসনে (লক্ষীপুর-১ রামগঞ্জ) বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিভেদ ঘটে। কারণ তিনি এলডিপির হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করেছিলেন। নিজেদের সাচ্চা লোককে প্রার্থী না করায় ক্ষোভ ছিল বিএনপিতে। এর কারণে বিএনপির সঙ্গে জোট থাকলেও নেতাকর্মীদের খবর রাখতেন না। ফের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেলিম।
সোর্সের মতে, আগামী সংসদ নির্বাচনে শাহাদাত হোসেন সেলিমকে সার্বিক সমর্থন দিবে লুটেরা নাছিম-আজমরা। সেলিমকে ধানের শীষে মনোনয়ন না দেয়া হলেও স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচনে লড়াই করবেন। ওই চক্রের সিগন্যালেই সেলিমের ভোটবাক্সে ব্যালট ফেলবেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী-সমর্থকরা।
চক্রের সম্পর্ক ও সম্পদের বর্ণনা
নাছির-আজমদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। দুদকসূত্রে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্রে দেখা যায়, শাহাদাত হোসেন সেলিম শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাছিম,তার ভাই জালাল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও আ’লীগ নেতা আ জ ম নাছিরের ব্যবসায়িক পার্টনার। ‘এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিস লিমিটেড’ নামে তাদের একটি যৌথ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পুরো আওয়ামী লীগ আমলজুড়ে শাহাদাত হোসেন সেলিম আওয়ামী লীগের সন্দেহাতীত শেল্টারে থেকে একচেটিয়া বন্দর থেকে দু’হাতে লুটেছেন অর্থ। অন্যদিকে বিএনপির জোটসঙ্গী হয়ে করেছেন আওয়ামী লীগের লোক দেখানো বিরোধিতা।
দুদক সূত্র জানায়, এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম পোর্টে একচেটিয়া কাজ বাগিয়ে নিতো আলাউদ্দিন নাছিম-শাহাদাত হোসেন সেলিমচক্র। আওয়ামী রাজনীতিক, ব্যবসায়ী অলিগার্করা একাকার হয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন সরকারের শত শত কোটি টাকা। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রাম পোর্টে বন্দর ব্যবসায় একচেটিয়া সুবিধা নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সকল মালিক বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে অবৈধ সুবিধাভোগী সিন্ডিকেট তৈরি, দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। আলাউদ্দিন নাছিম-শাহাদাত হোসেন সেলিম-আ জ ম নাছির গংদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগে বলা হয়েছে,ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার তৎকালিন প্রটোকল অফিসার ও সহকারি একান্ত সচিব আলাউদ্দিন নাসিম ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের নামে, পরিবারের নামে এবং তার ঘনিষ্ট ব্যবসায়িক পার্টনারদের নামে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। কানাডায় অর্থ পাচার করেছেন। দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে ফেনী-১ আসন (পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী) থেকে এমপি হয়েছেন।
আরও পড়ুন<<>> বিএনপির ঘরে আওয়ামী টাইম বোমা শাহাদাত সেলিম
আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের গুলশানে রয়েছে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল বাড়ি। এ বাড়ির তথ্য তিনি নির্বাচনী হলফনামায় গোপন করেছেন। তিনি বিদ্যুৎ কোম্পানির লাইসেন্স করে দেয়ার কথা বলে একাধিক ব্যবসায়ী, শিল্পপতির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা গ্রহণ করেছেন। দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মামলা করলেও তার ব্যবসায়িক পার্টনার শাহাদাত হোসেন সেলিমের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
দুদক সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আলাউদ্দিন নাসিমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এ প্রক্রিয়ায় গত বছর ১২ ডিসেম্বর আলাউদ্দিন নাসিম ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। আলাউদ্দিন নাসিমের ভাই জালাল উদ্দিন চৌধুরী চলতেন ভাইয়ের জোরে। তিনিও নানা তদবির বাণিজ্যসহ নামে স্ত্রী ফারজানা ওয়াহিদ খান এবং আত্মীয়-স্বজনদের নামে-বেনামে অর্জন করেছেন শত শত কোটি টাকা। জালালউদ্দিন চৌধুরী এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থাকলেও দুদক অদ্যাবধি তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করেনি।
আরও পড়ুন <<>> ন্যাশনাল লাইফের তদন্তে দুদক: ২১শ’ অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেন, ৭১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ-পাচার
গত ১৯ মার্চ আলাউদ্দিন নাসিম এবং তার স্ত্রী ডা: জাহানারা আরাজুর বিরুদ্ধে পৃথক ২টি মামলা দায়ের করে দুদক। সংস্থাটির নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আব্দুল্লাহ আল নোমান বাদী হয়ে ফেনীর জজ আদালতে মামলা দু’টি দায়ের করেন। এজাহারে আলাউদ্দিন নাসিমের বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি ৫২ লাখ ১৭ হাজার ৭৫৭ টাকা এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৪৭ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। মামলার আগে অভিযোগ অনুসন্ধান করেন নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফারুক আহমেদ ও সহকারি পরিচালক আব্দুল্লাহ আল নোমান।
এজাহারের তথ্য মতে, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ১৯৮৬ সালে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি ২৩ বছর পর ২০০৯ সালে যুগ্ম সচিবের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আলাউদ্দিন নাসিম ২০২৪ সালে ফেনী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি হন। পরে তিনি ফেনী, চট্টগ্রাম, পিরোজপুর, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মোট ১২৬টি দলিলের মাধ্যমে পাঁচটি ফ্ল্যাট, দুটি প্লটসহ মোট ৩৯ কোটি ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৬০৫ টাকার স্থাবর সম্পত্তি কেনেন। তার নামে ১৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৮ কোটি ২৫ লাখ ৪৮ হাজার ১০৮ টাকা জমা রয়েছে।
আরেকটি মামলায় তার স্ত্রী ডা: জাহানারা আরজুর নামে ফ্ল্যাট, প্লট ও জমিসহ মোট ১২ কোটি ৪৭ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ডা: জাহানারা আরজু ফেনীর পরশুরাম উপজেলার গুথুমা এলাকার মো: আবু তাহের চৌধুরীর কন্যা। তিনি বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
আলাউদ্দিন নাসিমের ব্যবসায়িক পার্টনার চট্টগ্রামের সাবেক আওয়ামী মেয়র আ.জ.ম. নাছির। নাছিরের দুর্নীতি বহুমাত্রিক। নাছির এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদক ইতোমধ্যেই অনুসন্ধান শুরু করেছে। আলাউদ্দিন নাসিম এবং আ.জ.ম.নাছিরসহ কয়েকজনের যৌথ মালিকানায় একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ‘এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিস লিমিটেড’ (রেজি নং-চ-১১৮১৫), এভারেস্টে’র টিআইএন : ৪৭৮৬৭২৩৩৯৩২। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের একচেটিয়া কাজ নিয়ে কোটি কোটি টাকা লুট করেন। তবে নাছিরের বিরুদ্ধে এখন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) অভ্যন্তরে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগের অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক।
আ জ ম নাছির একাধারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। প্রতিষ্ঠানটির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন শাহাবুদ্দিন মো: জাহাঙ্গীর, জিমনেশিয়াম পরিচালনার জন্য সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমনের বিরুদ্ধে দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর সহকারি পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় এর মধ্যে সিজেকেএস কার্যালয়ের পরিদর্শন করে ১৪টি বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। আলাউদ্দিন নাছিম, তার স্ত্রী এবং ট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে দুদক আইনি ব্যবস্থা নিলেও তাদের কালো টাকার বিশাল একটি অংশ রয়ে গেছে ব্যবসায়িক পার্টনার ও ঘনিষ্ট বন্ধু শাহাদাত হোসেন সেলিমের কাছে। অথচ তার, ভাই,স্ত্রী-সন্তান তথা পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুদক অদ্যাবধি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ‘এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিস লিমিটেড’ নামক তাদের যে যৌথ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি (রেজি নং-চ-১১৮১৫) রয়েছে, এটির অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করলেই বেরিয়ে আসবে বিপুল সন্দেহজনক লেনদেন, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের তথ্য। ‘এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিস লিমিটেড’র ঠিকানা: ‘সাবের প্লাজা,’ ১৬১, স্ট্রান্ড রোড,বারিক বিল্ডিং, চট্টগ্রাম।
যৌথ মূলধন কোম্পানিতে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় রয়েছেন, শাহাদাত হোসেন, তার ভাই মোহাম্মদ শহীদ হোসেন, মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন। মোহাম্মদ শাফায়াত হোসেন, শাহ আবরার ফাইয়াজ শাহাদাতের পুত্র। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং আ’লীগের চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম. নাছিরউদ্দিন, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর (আলাউদ্দিন নাছিম) ভাই চট্টগ্রাম আওয়ামীলীগ নেতা জামালউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। আ.জ,ম নাছিরের ই-টিআইএন নং-০১৮১২৭৪৩৫০০১০, ঠিকানা : হোসেন চেম্বার, ( দোতলা) নর্থ-ওয়েস্ট, ১০৫ আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা-মর্মে উল্লেখ রয়েছে। তবে শাহাদাত হোসেন সেলিমের পিতা-আলী হোসেন মিয়া, মাতা: সালেহা বেগম। শাহাদাত হোসেনের টিআইএন নং-৩৮৬৪৬৫১৪৮৩০। এনআইডি : ৫১১৬৫৪৭১৫৭৯৪৯, ঠিকানা : ১৬১, স্ট্রান্ড রোড, বারিক বিল্ডিং ,চট্টগ্রাম। জন্ম তারিখ : ৩১/১২/১৯৫৯ খ্রি:-মর্মে উল্লেখ রয়েছে।
‘এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম পোর্টে একচেটিয়া কাজ বাগিয়ে নিতো এ সংঘবদ্ধ চক্র। আওয়ামী রাজনীতিক, ব্যবসায়ী অলিগার্করা একত্রিত হয়ে গোপন সম্পর্ক স্থাপন করে হাতিয়ে নিয়েছেন সরকারের শত শত কোটি টাকা। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রাম পোর্টে বন্দর ব্যবসায় একচেটিয়া সুবিধা নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সকল মালিক বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে অবৈধ সুবিধাভোগী সিন্ডিকেট তৈরি, দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত।
দুই দশকের বেশি সময় আগে এম এইচ চৌধুরী লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হয়ে বন্দরের ব্যবসায় যুক্ত হন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির। বিগত ওয়ান-ইলেভেন সরকার আমলে প্রতিষ্ঠানটি সমঝোতার মাধ্যমে বন্দরে একটি জেটি পরিচালনার কার্যাদেশ নেয়। পরে দরপত্রের মাধ্যমে টানা ১৭ বছর ধরে একটি জেটি পরিচালনা করে আসছেন নাছির। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠনের পর আ জ ম নাছির উদ্দীনের নিয়ন্ত্রণে আসে কনটেইনার জেটি পরিচালনায় যুক্ত হয় আরেকটি প্রতিষ্ঠান। ‘মেসার্স বশির আহমেদ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। কৌশলে তখন এ প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় নিজের স্ত্রী শিরিন আকতারকে যুক্ত করেন আ জ ম নাছির। বশির আহমেদের বড় ভাইয়ের পুত্র নুররুজ্জামানকে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করেন আ জ ম নাছির।
গত ৫ আগস্টের পর নাছির আত্মগোপনে গেলেও এখন প্রকাশ্যে চুটিয়ে বন্দর ব্যবসা করছে তার ভাই সালাহউদ্দিন। তিনি এখন ‘মেসার্স বশির আহমেদ লিমিটেড’র বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দুদক তাকেও স্পর্শ করেনি। প্রথমে শাহাদাত হোসেনদের মালিকানায় ছিল প্রতিষ্ঠান ‘এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজ লি:’। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে ‘এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিসেস লিমিটেড’ নামে কোম্পানিতে রূপান্তর করেন শাহাদাত। সুবিধাবাদী চরিত্রের সেলিম এবং ভাইয়েরা যখন যে দল ক্ষমতায় সেই দলের সঙ্গেই ঘনিষ্টতা তৈরি করেন। সে পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে হাসিনার জমানায় ব্যবসার নামে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
আ’লীগের শেল্টার নিতে শাহাদাত হোসেন সেলিম অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত করেন আ জ ম নাছির উদ্দীন, শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা ও পরে ফেনী-১ আসনের তৎকালিন এমপি আলাউদ্দিন নাসিম ও তার ভাই জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে। পরে নাছির ও নাছিম শেয়ার ছেড়ে দেন। কিন্তু ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখেন নাছিমের ভাই জালালউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও তার স্ত্রী ফারজানা ওয়াহিদ খানের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম পোর্টে বার্থ অপারেটর, শিপ হ্যান্ডেলিং অপরারেটরস ও টার্মিনাল অপারেটরস হিসেবে বিগত দেড় দশকে ব্যপক মাত্রায় সুবিধা নেয় এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিসেস লি:’। অথচ আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী শ্রেণিভুক্ত শাহাদাত হোসেন সেলিম, তার স্ত্রী এবং ভাই এবং পুত্রদের বিরুদ্ধে দুদক অদ্যাবধি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আকতার হোসেন দাবি করেছেন, ‘ব্যবস্থা নেয়া হয়নি—এ কথা সত্য নয়, প্রক্রিয়া চলছে।’ কিন্তু মাঠের বাস্তবতায় প্রশ্ন থেকেই যায় নাসিম-নাছিরদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তখনো কেন অক্ষত থাকছেন ব্যবসায়িক পার্টনার শাহাদাত হোসেন সেলিম?
এ প্রসঙ্গে শাহাদাত হোসেন সেলিম এ প্রতিবেদককে বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো নেতার সঙ্গে আমার কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই। টিন-এনআইডি হয়তো ভুল কিছু দিয়ে রেখেছে। ওগুলো আমার না।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।