Apan Desh | আপন দেশ

এস আলমের অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন 

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ৬ অক্টোবর ২০২৫

এস আলমের অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন 

ছবি: আপন দেশ

ব্যাংক খাত থেকে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে এস আলমের বিরুদ্ধে। এস আলম কর্তৃক অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিতে ইসলামী ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারস ফোরাম বিক্ষোভ করছে।

সোমবার (০৬ অক্টোবর) তারা রাজধানীর দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। একই সঙ্গে ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরামও দেশজুড়ে আন্দোলন করছে। তারা ইসলামী ব্যাংকের প্রতিটি শাখার সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছে।

সমাবেশে বক্তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অপসারণের আহবান জানান। তারা বলেন, এসব অদক্ষ কর্মকর্তা ব্যাংককে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে অবৈধ কর্মকর্তাদের অপসারণ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হবে। শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকরা এ আন্দোলন শুরু করবেন।

প্রধান কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অনেকে বক্তব্য দেন। এদের মধ্যে ছিলেন মো. মোহতাছিম বিল্লাহ, হাফিজুর রহমান, ইমাম হোসাইন, মাহমুদুল হাসান, এটিএম সিরাজুল হক, ড. হারুনুর রশিদ, মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও মো. রতন।

আরও পড়ুন>>>স্বাভাবিক হচ্ছে কাঁচা মরিচের বাজার

এই মানববন্ধনে আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন যোগ দেয়। এদের মধ্যে ছিল- ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরাম, সচেতন ব্যবসায়ী ফোরাম, ইসলামী ব্যাংক প্রাক্তন ব্যাংকার পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী চাকুরী প্রত্যাশী পরিষদ, সচেতন পেশাজীবী গ্রুপ, ইসলামী ব্যাংক সিবিএ, সচেতন ব্যাংকার সমাজ।

বক্তারা এস আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, এস আলম ২০১৭ সালে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ইসলামী ব্যাংক দখল করেন। তারা ব্যাংক থেকে বৈধ মালিকদের ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দেন। বিদেশী শেয়ারহোল্ডারদেরও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিতাড়ন করা হয়।

বক্তারা আরও বলেন, ব্যাংক নিজের কব্জায় নিয়ে এস আলম ইচ্ছামত নিয়োগ দিয়েছেন। এসব নিয়োগের মাধ্যমে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা আয় করেছেন। তিনি কোনো রকম বিজ্ঞাপন ছাড়াই লোক নিয়োগ দিয়েছেন। বেশিরভাগ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার লোকজনকে। এর ফলে ব্যাংকের চমৎকার কর্মপরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। গ্রাহক সেবাও উন্নত হচ্ছে না। এসব অবৈধ কর্মকর্তার জন্য ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতি বছর এদের পেছনে ১৫০০ কোটি টাকার উপরে খরচ হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক মানবতা দেখিয়ে এতদিন এসব কর্মকর্তাদের চাকরিতে রেখেছিল। অবৈধ কর্মকর্তাদের বৈধ করার উদ্যোগ নেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তারা যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার আয়োজন করে।

ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অমান্য করেন অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা। তারা পরীক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। বক্তারা এ কাজকে ‘কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বড় ধরণের বিদ্রোহ’ বলে উল্লেখ করেন। এমন বিদ্রোহীদের ব্যাংকে বহাল রাখার কোনো বৈধ পথ খোলা নেই।

বক্তারা দ্রুত এ কর্মকর্তাদের অপসারণের আহবান জানান। তারা সারা দেশ থেকে মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নিয়োগের দাবি তোলেন।

তারা বলেন, অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের অপসারণ মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়। কারণ, ৬৩টি জেলার মানুষকে বঞ্চিত করে শুধু পটিয়া ও চট্টগ্রামের লোকদের রাতের আঁধারে চাকরি দেয়া হয়েছিল। এতে দেশের সাধারণ মানুষের মানবাধিকার লংঘন হয়েছিল। এ অপসারণের মাধ্যমে গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডাররা ব্যাংককে মাফিয়াদের হাত থেকে রক্ষা করবেন।

বক্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এস আলম ইসলামী ব্যাংক দখলের পর (২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত) চট্টগ্রামে ৭২২৪ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এর মধ্যে শুধু পটিয়া উপজেলারই ৪৫০০ জনের বেশি লোক রয়েছে। সারা দেশের চাকরিপ্রার্থীরা এভাবে বঞ্চিত হয়েছেন। এর ফলে ব্যাংকের শৃঙ্খলা চরমভাবে ভেঙে পড়েছে।

বক্তারা আরও জানান, এস আলম পুরোনো কর্মীদের ভয় দেখিয়েছেন। তিনি নিজ উপজেলার লোক নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন। ২০২৪ সালের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকের দেড় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জোর করে অবসরে পাঠানো হয়। অনেককে বরখাস্ত করা হয়।

নূরুল হক নামে একজন ড্রাইভার তার অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি বলেন, এইচআরের একজন প্রতিনিধি তাকে পদত্যাগপত্র জমা দিতে বলেন। বলা হয়, পদত্যাগ না করলে তিনি সার্ভিস বেনিফিট পাবেন না। বাধ্য হয়ে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। খলিল, আব্দুর রহমান, আব্দুল মোমিন ও দেলোয়ারসহ কয়েকশ নিম্নপদস্থ কর্মচারী এভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ড্রাইভার, মেসেঞ্জার ও ক্লিনারসহ বেশ কিছু নির্বাহীও জোরপূর্বক অবসরে যান। তাদের সবার চাকরির বয়স আরও পাঁচ বছর বাকি ছিল। তিনি জানান, এস আলমের পিএস আকিজ উদ্দিন পটিয়া উপজেলা থেকে লোক নিয়োগের জন্য এ কাজগুলো করেছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাহীও তার অভিজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, এস আলমের কথামতো ভুয়া বিনিয়োগের ফাইলে সাক্ষর না দেয়ায় বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন নির্বাহীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের হাতে হাতকড়া পরিয়ে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হয়। পরে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়।

উল্লেখ্য, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবৈধ কর্মকর্তাদের যোগ্যতা মূল্যায়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র মাধ্যমে একটি পরীক্ষা নেয়। পরীক্ষাটি ছিল ২৭ সেপ্টেম্বর। ওই দিন ৫৩৮৫ জন কর্মকর্তাকে মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নিতে বলা হয়। এদের মধ্যে ৪৯৭১ জন পরীক্ষায় অংশ নিতে অস্বীকার করেন। মাত্র ৪১৪ জন কর্মকর্তা পরীক্ষায় অংশ নেন।

যারা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, ব্যাংক তাদের ওএসডি (OSD) করেছে। এছাড়াও বিদ্রোহী ৪০০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত তাদের অপারেশনাল কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়