Apan Desh | আপন দেশ

বৃষ্টির অজুহাতে কাঁচা মরিচ-সবজি-মাছের বাজার ঊর্ধ্বমুখী 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৩০, ৩ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১৫:১৫, ৩ অক্টোবর ২০২৫

বৃষ্টির অজুহাতে কাঁচা মরিচ-সবজি-মাছের বাজার ঊর্ধ্বমুখী 

ছবি : আপন দেশ

গত কয়েক মাস ধরেই নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন ঝড়ছিল। কাঁচা বাজারে গিয়ে রীতিমত অসহায় অবস্থায় পড়তে হয় ভোক্তাদের। সে অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল ডিম। গরিবের প্রোটিন খ্যাত ডিমের দাম ৬০ টাকা হালিতে পৌঁছেছিল। তবে বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি মিলছিল। কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে টানা বৃষ্টি ও সরবরাহ ঘাটতির অজুহারে ফের ঊর্ধ্বমূখী সবজির বাজার। সঙ্গে যোগ হয়েছে মাছের বাড়তি দাম। 

টানা বৃষ্টিকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে বাড়িয়েছে সব ধরনের সবজির দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজি কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছে। বেড়েছে কাঁচা মরিচের দামও। অথচ খুচরা বাজারে সবজির কোনো সংকট নেই। পাশাপাশি খুচরা পর্যায়ে সাত দিনের ব্যবধানে ভোজ্যতেল ও মসুর ডালের দামও বাড়ানো হয়েছে। অসহনীয় মাছ-মাংসের দামও। ফলে এসব পণ্য কিনতে এসে ক্রেতাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। 

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (০৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া, দুর্গাপূজার ছুটির কারণে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আসছে না। এসব কিছুর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সবজি বাজারে।

এদিন রাজধানীর কমলাপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায় প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা, যা সাত দিন আগেও ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ৬০-৭০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ঝিঙা বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা, যা আগে ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সিম ২০০ টাকা, উস্তা ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০-১০০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। লম্বা বেগুন ১০০ টাকা এবং গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে।

এছাড়া প্রতি কেজি কচুমুখী ৫০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, কুমড়া ৪০-৫০ টাকা, শসার কেজি ৬০-৭০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে প্রতি পিস ফুলকপি ৫০ টাকা, জালি কুমড়া ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু কাঁচা পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পুঁইশাকের আঁটি ৪০ টাকা ও লালশাকের আঁটি ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। 

বাজারে আসা ক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা শুধু দাম বাড়াতেই জানেন। কিছু একটা শুনলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেন। পবিত্র রমজান মাসে যেখানে অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ছাড় দেন, সেখানে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা দাম আরও বাড়িয়ে দেন। তাহলে স্পষ্টই বোঝা যায়, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের মানসিকতা কেমন।

বাজারগুলোতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ২৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে। সপ্তাহের ব্যবধানে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা।

বিক্রেতা হারুণ বলেন, পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচের ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে। বৃষ্টিতে চাষিদের ফসল নষ্ট হয়েছে। শুনছি, ভারত থেকেও নাকি মরিচ আসা বন্ধ রয়েছে। তাই এই সংকট তৈরি হয়েছে। পাঁচ কেজি এখন কিনতে হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনতে পারতাম।

আরও পড়ুন<<>>নিত্যপণ্যে স্বস্তি ফেরেনি, তেল-মাছ-মুরগির দাম বাড়তি

মাছের বাজারও ঊর্ধ্বমূখী। এদিন বাজারে ইলিশের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০০ টাকার বেশি: ইলিশ ধরা শনিবার (৪ অক্টোবর) থেকে সরকারিভাব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ইলিশের স্বাভাবিক সরবরাহ থাকলেও বাজারে বেড়েছে ছোট-বড় সব ধরনের ইলিশের দাম। বড় ইলিশের দাম কেজিতে ৩০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং ৭০০ বা ৮০০ গ্রামের ইলিশ ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আকারে ছোট ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বাজারগুলোতে অন্যান্য মাছের মধ্যে চাষের রুইয়ের দাম বেড়ে আকারভেদে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, চাষের শিং প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়, দেশি শিং ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩৫ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, বড় কাতলা ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, চাষের কৈ ২২০ থেকে ২৩৫ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে ভোজ্যতেল ও ডালের দাম বেড়েছে। দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ব্র্যান্ড ভেদে ৩৮০-৩৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সাত দিন আগেও ৩৭৫-৩৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে পাম তেলের দামও। লিটারপ্রতি পাম তেল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ টাকা। যা আগে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সঙ্গে মাঝারি দানার প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। যা সাত দিন আগে সর্বনিম্ন ১১০ টাকায় পাওয়া গেছে।

এছাড়া ছোট দানার প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম গিয়ে ঠেকেছে ১৫০-১৬০ টাকা। যা এক মাস আগেও ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সেক্ষেত্রে মাসের ব্যবধানে এ পণ্যের দাম সর্বোচ্চ কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। আর বড় দানার মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা।

বাজার করতে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খবরে দেখেছি তেল কোম্পানিগুলো তেলের দাম বাড়াতে সরকারের কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু সরকার দাম বাড়ায়নি। তারপরও দোকানে এসে দেখি বিক্রেতারা তেলের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। সঙ্গে ডালের দামও বাড়ছে হু হু করে। দেখার যেন কেউ নেই।

বাজারে মাংস ও মুরগির দাম বাড়তি। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা, ব্রয়লার ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, দেশি ৬০০ থেকে ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা ও বকরি ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি হাঁস ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, রাজহাঁস ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা এবং চায়না হাঁস ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমাদের যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। সরকার পতনের পর চাঁদাবাজি কিছুটা কমেছিল। কিন্তু সেটা আবার সক্রিয় হয়েছে। বাজার তদারক সংস্থাগুলোর তদারকি আরও বাড়ানো উচিত।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়