
ছবি : আপন দেশ
বন্যা, বৃষ্টি ও সরবারহ ঘাটতির অজুহাতে গত কয়েকমাস ধরেই অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। বিশেষ করে ক্রেতাদের ভোগাচ্ছে সবজির দাম। এমন অস্বস্তিকর পরিস্তিতির মধ্যেই হুট করে বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। আবার পূজা সামনে রেখে মাছ ও মুরগির দাম চরমে পৌঁছে গেছে। এতে আরও বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর)) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিন রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে গিয়ে দেখা যায় চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজি। দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীরা টানা বৃষ্টি, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, পথে পথে চাঁদাবাজি ও উৎপাদন ঘাটতিসহ নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। তবে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে সবজির কোনো ঘাটতি নেই।
মূলত চাঁদাবাজি, কমিশন বাণিজ্য ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে সবজির দাম চড়া। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর চাঁদা তোলার ক্ষেত্র শুধু হাতবদল হয়েছে। পাইকারি আড়তে অবৈধ ‘কমিশন বাণিজ্য’ আগের মতোই পুরোদমে চলছে।
দেশে সবজির বড় উৎস বগুড়া, খুলনা, যশোর, পাবনা, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া। এসব এলাকার আড়ত থেকে সবজি নিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ঢাকায় আসেন। কৃষক সবজি বিক্রি করার পর ভোক্তার ব্যাগে ওঠার আগে ব্যাপারী, আড়তদার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীসহ চার থেকে পাঁচ স্তরে মধ্যস্বত্বভোগীরা কয়েক দফা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে ভোক্তা বেশি দামে কিনলেও মাঠের কৃষক পাচ্ছেন সর্বশেষ দামের তিন-চার ভাগের এক ভাগ। মাঠে ঠকছেন কৃষক আর বাজারে ভোক্তা।
রাজধানীর মুগদা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মানভেদে প্রতি কেজি ধুন্দল ৫০-৬০ টাকা, শসা ৫০-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, ঝিঙে ৬০-৮০ টাকা, কহি ৫০-৬০ টাকা, আলু ২৫-৩০ টাকা, আমড়া ৬০ টাকা ও কচুর মুখি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি করলা ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৭০-৮০ টাকা, টমেটো ১২০-১৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মূলা ৮০ টাকা, পটোল ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, বেগুন ৮০-১০০ টাকা ও কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। আর প্রতি পিস লাউ ৬০-৭০ টাকা ও চালকুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
পূজা সামনে রেখে মাছের বাজারে অস্বস্তি বেড়েছে। মাছের দাম কেজিপ্রতি ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন বাজারে মাঝারি ইলিশ কেজিপ্রতি ২,৩০০-২,৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশের দাম ১,৭০০-১,৮০০ টাকা। সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ছোট আকারের ইলিশ, যা ৪-৫টি মিলে এক কেজি হয়, দাম ৭০০ টাকা। অন্য মাছের মধ্যে রুই কেজিপ্রতি ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, পাঙাশ ২২০-২৫০ টাকা, পাবদা ৪০০-৪৫০ টাকা, বাইলা ৮৫০ টাকা, টেংরা ৮০০ টাকা ও চিংড়ি কেজিপ্রতি ১,০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন<<>>নিত্যপণ্যের বাজারে সুখবর নেই, কমেছে চালের দাম
একই কারণে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বয়লার মুরগি। সোনালি মুরগিও ২৬০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০ টাকায় উঠেছে। বিক্রেতারা জানান, বাজারে চাহিদা বেড়েছে, সরবরাহ তুলনামূলক কম। দুর্গাপূজা সামনে, তাই দাম আরও বাড়তে পারে।
সম্প্রতি বাদামি ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৫০ টাকায় উঠলেও এখন কমে ১৪০ টাকায় নেমেছে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, বাড়তি দাম দ্রুত কার্যকর হয়, কিন্তু কমতে সময় নেয়।
তবে গরুর মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের মতই বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খাসির মাংসে চড়া দাম দেখা গিয়েছে। প্রকারভেদে কেজিপ্রতি ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, খাসির জোগান কম থাকায় দাম কমার সুযোগ নেই।
গত সপ্তাহে সয়াবিন তেলে দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব সরকার মেনে নেয়নি। সে কারণে এখন বাজারে তৈরি হয়েছে এ অস্থিরতা। বাজারে বেড়েছে খোলা সয়াবিন ও সুপার পাম অয়েলের দাম। গত তিন-চার দিনের ব্যবধানে এই দুই ধরনের তেলের দাম বেড়েছে লিটারে পাঁচ টাকার মতো।
এখন খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭২ টাকা। আর সুপার পাম অয়েলের লিটার বিক্রি হয়েছে ১৫৫ টাকা ১৬০ টাকা দরে। চার দিন আগেও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ১৬৯ এবং পাম অয়েলের দাম ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
চালের বাজারে গিয়ে দেখা যায় প্রতিকেজি নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকায়। যা আগে ৯০-৯২ টাকা ছিল। অন্যদিকে, মোটা পায়জাম ও স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, যা কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা কমেছে। তবে মিনিকেট চাল আগের দামেই ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাল বিক্রেতা আল আমিন বলেন, ভারত থেকে প্রচুর চাল আসছে, তাই দাম কমছে। তবে দেশি যেগুলো মিনিকেট আছে, সেগুলো আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। আমদানি আরও বাড়লে দাম আরও কমতে পারে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।