
ছবি : আপন দেশ
বৃষ্টি-বর্ষার অজুহাতে কয়েক সপ্তাহ ধরেই কাঁচা বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি। ৬০-৮০ টকারা কাঁচা মরিচ পৌঁছে গিয়েছিল ৪০০ তে। বর্তমানে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাড়তি ব্রয়লার মুরগি ও পেঁয়াজের দাম। মৌসুমের শুরুতে চালের দাম বাড়লেও এখনো কমার লক্ষণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষদের। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টি ও বর্ষার কারণে বাজারের সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। যে কারণে সবজির দাম বাড়তি। পাইকারি বাজারে তুলনামূলক কম দাম থাকলেও এখান থেকে যারা নিয়ে গিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন ছোট খুচরা বাজারে বিক্রি করে তারা আরও বেশি দাম বাড়িয়ে দেয়। তবে বেশ কিছু সবজির মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। নতুন কোনো সবজি উঠলে, সরবরাহ বাড়লে আবারো সবজির দাম কমে আসবে।
এদিন সকালে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২০০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মৌসুমি বৃষ্টি শুরুর আগে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ কেনা যেত ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, বাজারে এখন দেশে উৎপাদিত কাঁচা মরিচের সরবরাহ কিছুটা কম। এ সুযোগে সরবরাহ বেড়েছে ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচা মরিচের। এটিও মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির দামও আগের তুলনায় বেশি। করলা, কাঁকরোল, বেগুন, বরবটিসহ অধিকাংশ সবজির কেজি এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকার আশপাশে। দেশি টমেটো এখন পাওয়া যায় না বললেই চলে। এ কারণে আমদানি করা টমেটোর দাম বেশি, প্রতি কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। তবে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু প্রভৃতি পণ্য আগের দামে স্থিতিশীল রয়েছে।
সাধারণ গুণগত মানের সবজির কেজি কিনতে খরচ হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এর নিচে শুধু পেঁপে (৪০ টাকা) ও আলু (৩০ টাকা) পাওয়া যাচ্ছে। লম্বা জাতের বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়, নতুন গোল বেগুন কিছুটা কম দামে, ৮০-৮৫ টাকা কেজিতে। করলার কেজি ৮০-৯০ টাকা, কচুরলতি ৭০-৮০ টাকা, কাঁকরোল ৭০-৮০ টাকা, বরবটি ৯০-১০০ টাকা, ঝিঙে ৮০-৯০ এবং চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। ঢেঁড়সের দাম ছিল মাসের শুরুতে ৩৫-৪০ টাকা, এখন তা পৌঁছেছে ৫৫-৬০ টাকায়। সবচেয়ে উদ্বেগজনক কাঁচা মরিচের দাম—এক কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়, যেখানে মাসের শুরুতে তা ছিল ৬০-১০০ টাকার মধ্যে।
বাজারে বেড়েছে মাছের দামও। ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০-২৬০০ টাকায়; যা আগে ছিল ২২০০ টাকা। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ২০০-৩০০ টাকার মতো। এছাড়া ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৭০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২২০০ টাকা ও দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩২০০ টাকায়। শুধু ইলিশ নয়, অন্যান্য মাছের দামও ক্রেতাদের ভোগাচ্ছে। প্রতিকেজি বোয়াল ৭৫০-৯০০ টাকা, কোরাল ৮৫০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকা, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, পাঙাশ ১৮০-২৩০, কৈ ২০০-২২০ এবং পাবদা ও শিং বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। আর চাষের ট্যাংরা প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, কাঁচকি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা ও মলা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিন বাজারে গিয়ে দেখা য়ায় ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঢাকায় গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সোনালি মুরগি গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি। সপ্তাহ দুয়েক আগে এ মুরগির কেজি ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। সে হিসাবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ২০ টাকা ও সোনালি মুরগির কেজিতে ২০-৩০ টাকা দাম বেড়েছে।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, পাইকারি বাজারে মুরগির সরবরাহ কিছুটা কমেছে। এ কারণে দাম বাড়তি। তবে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম আগের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে। বড় বাজারে এক ডজন ডিমের দাম এখন ১২০ টাকা; আর পাড়া-মহল্লায় তা ১২৫-১৩০ টাকা।
অন্যদিকে গরু ও খাসির মাংসের দামে তেমন পরিবর্তন নেই। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়, খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায়।
চালের বাজারও বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চাপের মধ্যে। মাস দেড়েক আগে বাজারে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছিল। এখনো সে দামেই বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে ডায়মন্ড, সাগর, মঞ্জুর প্রভৃতি ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৮০ টাকা ও মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের মিনিকেট ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের দাম এখন ৬০ টাকার ওপরে।
এমন পরিস্থিতিতে সীমিত আয়ের মানুষ খরচের চাপ আর সামাল দিতে পারছেন না। বাজারে আসা ক্রেতা নাইম হাসান বলেন, চালের দাম আকাশছোঁয়া হলেও সরকারের কোনো তদারকি চোখে পড়ে না। বাজারে প্রতিদিন নতুন চমক। বেতন তো এত বাড়ে না, ফলে ধার করে চলতে হচ্ছে। জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে গিয়ে এখন অসুখ-বিসুখ হলেও ওষুধ না খেয়ে সয়ে যেতে হয়।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।