
কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন সৈকতে কুকুরের দল।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। আজ সেখানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ক্ষুধার কান্না। শুধু মানুষের নয়—ক্ষুধায় কাঁদছে কুকুর, বিড়াল, কাক। খাদ্যাভাব এতটাই প্রকট যে, সৈকতের বালিতে ঝিনুকের উজ্জ্বলতা থেকেও বেশি ঝলসে উঠছে মানুষের অসহায়তা। অথচ আমাদের কাছে দ্বীপটি এখনো “পর্যটনের স্বর্গ” নামে পরিচিত—নির্বাক ছবি, সাজানো ক্যাম্পেইন, আর মিডিয়ার মেকআপে।
দ্বীপের এ বাস্তবতা দেশবাসীর দৃষ্টির আড়ালে রাখা হচ্ছে। কেন স্থানীয়দের ছাড়া কাউকে দ্বীপে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না? এমনকি আত্মীয়-বন্ধু বা সাংবাদিকদেরও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার লিখিত অনুমতি নিতে হচ্ছে কেন?
গত বছর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আসা হুমকির অজুহাতে দ্বীপে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। আজও বহাল সে নিষেধাজ্ঞা। আত্মীয়-বন্ধু, এমনকি সাংবাদিকরাও ঢুকতে পারছেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া। যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে ঢেকে রাখা হচ্ছে এ দুর্দশার পর্দা। প্রশ্ন জাগে—এখনও কি সে হুমকি আছে? নাকি বাস্তবতাকে আড়াল করাই আসল উদ্দেশ্য?
জাহাজ বন্ধ, ট্রলার ঠেকিয়ে রাখা। পর্যটক নেই, ব্যবসা নেই, উপার্জন নেই। সেন্ট মার্টিন যেন এক মৃত্যুপুরীর নাম—যেখানে টিকে থাকার যুদ্ধটা এখন আর শুধু মানুষের নয়, প্রাণীদেরও। কুকুর, বিড়াল, এমনকি কাক—সবাই খুঁজছে খাবার। না পেয়ে হামলা করছে কাছিম, এমনকি মানুষকেও।
প্রায় ৫০০ পরিবার দ্বীপ ছেড়ে টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। কারো হাতে ক্যামেরা, কেউ চালাচ্ছে অটোরিকশা, কেউ করুণ চোখে তাকিয়ে আছে সৈকতের পর্যটকদের দিকে। আর যারা রয়ে গেছেন? দিনে দুই বেলা খাওয়া তাদের কাছে স্বপ্ন। শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি শুধু খাবার আর অর্থাভাবে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, গত ঈদে পুরনো কাপড়েই ঈদ হয়েছে আমাদের। নতুন জামার তো প্রশ্নই ওঠে না। এবার কোরবানিতে ২০ শতাংশ মানুষও কোরবানি দিতে পারবে না।
সরকারের ‘পরিকল্পনা’ ছিল, ‘আলোচনা’ ছিল, ‘প্রতিশ্রুতি’ও ছিল—কিন্তু বাস্তবায়ন? শূন্য। মানুষ আজ মাটির চুলায় কেয়া গাছ পুড়িয়ে রান্না করছে। পরিবেশের জন্য তা ধ্বংসাত্মক হলেও ক্ষুধার কাছে এসব যুক্তি ব্যর্থ। কাছিমের ডিম আজ রক্ষা পাচ্ছে না কুকুরের থাবা থেকে। পরিবেশ রক্ষার নামে যখন প্রবেশ বন্ধ, তখন কীভাবে বাঁচবে প্রাণ?
দ্বীপবাসীর শেষ দাবি: মিষ্টি কথা নয়, কাজ চাই, না হলে ভাত দিন!
সরকারের কাছে তাদের দাবি, অবিলম্বে কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক। দ্বীপে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে প্রকৃত চিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা হোক।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।