
ছবি : আপন দেশ
ঝালকাঠি জেলার অন্যতম কৃষি প্রধান জনপদ কাঁঠালিয়া উপজেলার ৬টি ইউপির ফসলের মাঠে এখন সোনালি ধানের ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাওআংশিক আধপাকা থাকলেও প্রায় মাঠেই এখন ধান পেকে সোনালি রূপ ধারণ করেছে।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আশানুরূপ বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কয়েক বছরের ব্যবধানে এবার রোপা আমন নিয়ে শংকায় ছিল কৃষক। তবে শেষের দিকে কয়েক দফা বৃষ্টিপাত ও সবশেষে ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি মিলিয়ে আশা নিরাশার দোলাচলে সকল বৈরিতা কাটিয়ে আমনের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা কিছুটা ক্ষতির কথা জানালেও এমটিই জানালেন কাঁঠালিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ।
আবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় উঁচু নিচু সব জায়গাতেই প্রায় ধান চাষ করা হয়েছে। উপজেলার আমুয়া, চেঁচরী রামপুর, ইউপির প্রতি বছরই কিছু না কিছু আমন ধান বিনষ্ট হতো। তবে সেই অনুপাতে এবার বিপর্যয় অনেকটাই কম বলে জানান উপজেলার দক্ষিণ চেঁচরী গ্রামের কৃষক মো. আছাদুল ফরাজি।
ফসলের মাঠজুড়ে বাতাসে দুলছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন আমন ধান। পোকার আক্রমণ আর নানা রোগবালাইয়ের পরও এবার আমনের বাম্পার ফলনের সুবাস পাচ্ছেন কৃষকরা। ঝালকঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার কৃষক পরিবারে এখন ধানের মৌ মৌ গন্ধ। মাঠে মাঠে আনন্দে ধান কাটছে চাষিরা। আমনের বাম্পার ফলন আর নবান্নের আনন্দে আজ বাংলার মাঠ-ঘাট ভরে উঠেছে সোলালি ফলন। কাঁঠালিয়ার মাঠে ঘাটে পাকা ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। কৃষাণ-কৃষাণীরা মনে বইছে আনন্দের বন্যা।
উপজেলা জুড়ে আমন ধানের বাম্পার ফসলে আবারো বাঁধ-ভাঙা আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছে কৃষাণ-কৃষাণীরা। দিগন্তজুড়ে সোনালি ফসলের মনোরম দৃশ্য এখন গোটা উপজেলা জুড়ে। ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। ফসল কাটার মহোৎসবে ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছেন এখানকার কৃষকরা। শীতের সকাল থেকে পড়ন্ত বেলা পর্যন্ত মাঠে-মাঠে ফসল কর্তনের চিরাচারিত দৃশ্য দেখা যাচ্ছে গ্রামজুড়ে।
একদিকে কৃষকরা ধান কেটে বাড়ির আঙ্গিনায় জড়ো করছেন। অপরদিকে গরু বা মাড়াই মেশিন দিয়ে একই সঙ্গে মাড়াই কাজ সম্পন্ন করে নিচ্ছেন কৃষকরা। মাড়াই শেষে বাতাসে ধান উড়িয়ে বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করে গোলায় তোলার কাজে এখানে কৃষাণীরা ব্যস্ত সময় কাটছে। চলছে উপজেলার গ্রামে-গ্রামে ও মাঠের পর মাঠ সোনালি ফসল ঘরে তোলার মহাউৎসব। বাতাসে ছড়ানো আমনের মৌ মৌ গন্ধ আর কৃষাণ-কৃষাণীদের ফসল ঘরে তোলার কর্ম ব্যস্ততা এখানে এক অন্যরকম আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় উপজেলার বিভিন্ন ইউপিতে এবার ১১ হাজার ২৩ হেক্টর রোপা আমনে লক্ষ্যমাত্রা অটুট আছে।
কাঁঠালিয়া উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বশির জানান, এবার উফসি জাতের ধান ১ হাজার ৯০২ হেক্টর রোপন করায় ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমে এসেছে। নিচু এলাকাতে এই উফসি জাতের ধান চাষ উত্তম। তবে এখন কৃষকরা উদগ্রীব ধানের মূল্য নিয়ে। সব বাঁধা কাটিয়ে ভালো ফলন হলেও ধান কাটা মাড়ার শুরুর মুখেই ধানের বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় এলাকার কৃষকেরা অনেকটা হতাশাবোধ করছে।
শতাধিক মধ্যবিত্ত কৃষকেরা জানায় রোপা আমন ধানের ওপর নির্ভর করে মৌসুমি সবজি রোপণসহ বিভিন্ন রবিশষ্য চাষাবাদ করার লক্ষ্য রয়েছে। ধানের বাজার মূল্য পড়ে গেলে মধ্যবিত্ত কৃষকদের এ লক্ষ্য পূরণ হবে না। কৃষকেরা সরকারের কাছে ধানের নায্য মূল্য দাবি করেন।
কাঁঠালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান বিন ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা স্বত্ত্বেও রোপা আমন ধান চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ধানের ফলনও হয়েছে ভালো।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের স্বনির্ভরতার সবচেয়ে বড় অর্জন এই ধান। তাই ধান চাষাবাদে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। গত বছরের তুলনায় এ বছর লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে কৃষকেরা আশানুরুপ ফলন গোলায় তুলতে পারবে।
আপন দেশ/এআই/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।