
শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এশিয়া কাপের সুপারে শুভ সূচনা বাংলাদেশের
গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে খেলা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছিল বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে হারিয়ে লঙ্কানরাই টাইগারদের উদ্ধার করেছিল। সে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রোমাঞ্চকর জয় দিয়ে সুপার ফোরে শুভ সূচনা করেছে লিটন দাসের দল। দুর্দান্ত এ জয়ে ফাইনালের পথে এগিয়ে থাকল লাল সবুজ দল।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শুরুতে যেভাবে দাপট দেখিয়ে খেলছিল বাংলাদেশ তাতে জয়টা অনায়াসেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ ওভারে ও তার আগের ওভারে মিলিয়ে দ্রুত ৩ উইকেট হারালে জমে ওঠে ম্যাচ। ১৮.৩ ওভারের আগে পর্যন্ত স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ১৫৯। হৃদয় ওই ওভারে ৫৮ রানে থামতেই শেষ ওভারে জাকের (৯), মেহেদীর (০) বিদায়ে ১৬৮ রানে ৬ উইকেট হারালে জন্ম নেয় নড়বড়ে পরিস্থিতির।
মনের কোনে উঁকি দিচ্ছিল ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হেরে যাওয়া সে ম্যাচের কথা। তখনও ২ বলে ১ রান চাই বাংলাদেশের। জিততে হলে যথেষ্ঠ, নাসুম আহমেদ এলেন, শামীম হোসেনের কথা শুনলেন। মাথা গরম না করে বল ব্যাটে লাগিয়েই ছুটলেন।
ভাগ্যও সঙ্গে ছিল, নয়তো শামীমের ছুটে পপিং ক্রিজে যাওয়ার আগেই শ্রীলঙ্কান ফিল্ডারের ছোঁড়া বল স্ট্যাম্প নাড়িয়ে দিতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি, ভাগ্য বাংলাদেশের সঙ্গেই ছিল। এশিয়া কাপের প্লে অফের প্রথম ম্যাচে ১ বল বাকি থাকতে জয় নিশ্চিত করলেন লিটন দাসরা। শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে এ পর্বে বাকি তিন দলের চেয়ে এগিয়ে থাকল বাংলাদেশ।
তবে এর আগে ভয় ধরিয়ে গেল শেষ ওভারের নাটক। তাতে ম্যাচ হারার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল পুরোদমে। শেষ ওভারে ১৬৯ রান করতে আর ৫ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। প্রথম বলেই চার মেরে সমীকরণ সহজ করে ফেলেন জাকের আলি। পরের বলেই ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হলেন। এক বল ডট দিয়ে পরের বলে ক্রিজ ছেড়ে আবারও বড় শটের লোভে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন শেখ মেহেদী হাসান।
তখনও ২ বলে ১ রান দরকার বাংলাদেশের। নাসুম আর কোন ভুল না করে শামীমের ডাকে সাড়া দেন। ব্যাটে বল লাগিয়েই রান পূর্ণ করেন, ওদিকে শামীমও নিরাপদে পৌঁছে যাওয়ায় দুর্দান্ত রান তাড়া নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।
সবশেষ ১৪টি টি-টোয়েন্টিতে রান তাড়ায় মাত্র একটিতে সফল হয়েছিল বাংলাদেশ। তাও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। এবার “বাঘের” শিকার “সিংহ”। এ নিয়ে এশিয়া কাপে ১৯ বারের দেখায় লঙ্কানদের বিপক্ষে চতুর্থ জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। এশিয়া কাপ ফাইনালের পথে যা বাংলাদেশের জন্য বিশাল পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন<<>>ভারতকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় বাংলাদেশের
এ পথে এগিয়ে দিয়েছেন সাইফ হাসান ও তাওহিদ হৃদয়। দুজনের সাহসী ও ইনফর্ম ব্যাটিংয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ সহজ হয়েছে বাংলাদেশের। কৃতিত্বটা বেশি সাইফ হাসানের। লঙ্কানদের রান তাড়া করতে চাইলে শুরুর পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে হবে। তানজিদ তামিম প্রথম ওভারে ফিরলেও দমে যাননি সাইফ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা ইনিংসের চেয়েও সুন্দর ইনিংস খেলেছেন এদিন। পারফেক্ট টি-টোয়েন্টি। শুরু থেকেই আক্রমণ করে খেলে ৪৫ বলে ৪টি ছক্কা ও ২ চারে করেছেন ৬১ রান। দারুণ দুটি জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথ দেখিয়েছেন সাইফ। ১৬ বলে ৩ চারে ২৩ রান করা লিটনের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেছেন ৫৯ রান। তৃতীয় উইকেটে হৃদয়ের সঙ্গে যোগ করলেন ৫৪। টি-টোয়েন্টিতে এটি সাইফের দ্বিতীয় ফিফটি। অসাধারণ এ ইনিংস তাকে এনে দেয় ম্যাচ সেরার পুরষ্কার।
দুটি কার্যকর জুটিতে বাংলাদেশের জয় পরিষ্কার হয়ে ওঠে। শেষদিকে তাওহিদ হৃদয় দলকে জয়ের বন্দরের কাছে নিয়ে ব্যর্থ হন পাড়ে তুলতে। ৩৭ বলে ২ ছক্কা ও ৪ চারে তার ৫৮ রানও বেশ কর্যকর ছিল। ২০২৪ এ ভারতের বিপক্ষে করা টি-টোয়েন্টির পর ১৫ ইনিংস বিরতি শেষে হৃদয়ের ব্যাটে ফিফটির দেখা মিলল।
মাত্র ১২ বলে ১৪ রান করা শামীম হোসেনের ইনিংসটি ভুললে চলবে না। ছোট ইনিংস হলেও হৃদয়ের সঙ্গে জয়সূচক ৪৫ রানের জুটিতে দারুণ অবদান রেখেছেন শামীম।
ম্যাচ শেষে ভারতীয় ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার প্রশংসা করছিলেন বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য রান তাড়ার। একটি বড় জুটি নয়, ছোট ছোট একাধিক জুটি কীভাবে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেয় সে উদাহরণ টানছিলেন বাংলাদেশের ইনিংসটি নিয়ে।
গত কয়েক সিরিজ ধরেই বাংলাদেশের রান তাড়া দেখার অপেক্ষায় ছিল ক্রিকেটপ্রেমীরা। বেশ কয়েক সিরিজে আগে বোলিং নিয়ে বিপক্ষকে কম রানে আটকানোর পরিকল্পনায় জিতে এসেছে বাংলাদেশ। নিজেদের ব্যাটিং সামর্থ্য দেখিয়ে এবার রান তাড়ায় জয় দেখিয়ে দিলেন লিটনরা।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।