
সৌদি প্রবাসী মনির হোসেন, তার স্ত্রী স্বপ্না ও ছেলে নাঈম হোসেন।
মনির হোসেন (৪৫। সৌদি আরবপ্রবাসী একজন বাংলাদেশি। প্রায় ২৭ বছর ধরে প্রবাসে থেকে কষ্টার্জিত অর্থে কেরানীগঞ্জে দুটি বাড়ি, আবাসন ও দূরপাল্লার বাসের ব্যবসাসহ গড়ে তোলেন বেশ কিছু সহায়-সম্পত্তি। একমাত্র প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসার জন্য ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিলেন তিনি। ঢাকায় চিকিৎসার জন্য এসে হোটেলে থাকা অবস্থায় খাবারে বিষক্রিয়া হয়ে স্ত্রী ও ছেলেসহ মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামের বাসিন্দা মনির হোসেন, স্ত্রী স্বপ্না ও ১৮ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈমকে নিয়ে ঢাকার আদ্ব-দীন হাসপাতালে ছেলের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে আসেন। ২৮ জুন (শনিবার) হাসপাতালে এলেও সিরিয়াল না পাওয়ায় চিকিৎসা করাতে না পেরে রাতে মগবাজারের ‘সুইট স্লিপ’ আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেন।
সেদিন রাত ১০টার দিকে পাশের ভর্তা-ভাত হোটেল থেকে খাবার এনে খান তারা। খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই অসুস্থবোধ করতে শুরু করেন, বমি করতে থাকেন। রাতেই তাদের আদ্ব-দীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ২৯ জুন রোববার সকালে স্ত্রী স্বপ্না, কিছুক্ষণ পর ছেলে নাঈম ও দুপুরে মনির নিজেও মারা যান।
এ মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে গভীর রহস্য। পরিবারের সদস্যদের দাবি, খাবারে বিষক্রিয়া ছিল। তারা মনে করছেন, মনিরের সম্পত্তির প্রতি লোভ থেকেই পরিকল্পিতভাবে খাবারে বিষ মেশানো হয়ে থাকতে পারে।
সন্দেহভাজন রয়েছে, এক. মনিরের চাচাতো চাচা রফিক বিকেলের খাবার এনেছিলেন। সেখানে কোনো ‘স্লো পয়জনিং’ ছিল কি না। কারণ কেরানীগঞ্জে মনিরের যে দুটি বাড়ি রয়েছে সেখানে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন রফিক। সম্পত্তির ওপর তার লোভ হতে পারে।
দুই. রাতে মনির নিজেই হোটেল থেকে খাবার এনে খেয়েছিলেন। হোটেলের কেউ খাবারে বিষক্রিয়া মিশিয়েছিল কি না?
তিন. সন্ধ্যা থেকে খাবার খাওয়ার আগ পর্যন্ত মনির হোটেলের বাইরে কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করেন। তারা কোনোভাবে এ মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত কি না। অর্থাৎ তাদের সঙ্গে মনিরের কোনো লেনদেন ছিল কি না। এসব প্রশ্নের উত্তর মিললে স্ত্রী-সন্তানসহ মনিরের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচিত হবে।
পুলিশের রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক জানান, প্রাথমিকভাবে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর বিষয়টি স্পষ্ট হলেও কে, কখন, কিভাবে ও কেন বিষ মেশালো—সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম জানিয়েছেন, আবাসিক হোটেল ও খাবার সরবরাহকারী হোটেল ঘিরে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল কললিস্ট পর্যালোচনা চলছে। রফিকের পরিবারসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
মনিরের চাচাতো ভাই জাকির জানান, তাদের পরিবার মনিরের সম্পত্তির পরিমাণ সম্পর্কে কিছু জানতেন না। এমনকি মনিরের বৃদ্ধ মা-বাবাও সম্পত্তির বিষয়ে অবগত ছিলেন না। শুধুমাত্র মনির, তার স্ত্রী ও কেয়ারটেকার রফিক জানতেন এসব বিষয়ে। ফলে রফিকের ভূমিকাকে ঘিরে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।
মনির ছিলেন গ্রামবাসীর কাছে পরিচিত একজন দানশীল মানুষ। নিয়মিত দেশে আসতেন ও গ্রামের দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করতেন। তার স্ত্রীও গরিবদের সহায়তায় সক্রিয় ছিলেন।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।