
ছবি : আপন দেশ
গত বছরের জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক দিন পর থেকে বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন পেশার কর্মজীবিরা। প্রায় প্রতিদিনই কোনো নাকোনো দাবি নিয়ে রাজপথে নামেন তারা।
মাঝখানে কিছুটা কমলেও সম্প্রতি আবারও এ প্রবনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। নতুন দাবি নিয়ে দুই দিন ধরে রাজপথে নেমেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতেও দুদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি চলছে।
চলমান এসব আন্দোলনের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক যানজটে স্থবির হয়ে পড়ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী।
তিন দফা দাবিতে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে বুধবার (১৪ মে) রাতভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ৯টা পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল কাদির বলেন, ‘কাকরাইল মোড়ে শিক্ষার্থীরা কেউ বসে, কেউ শুয়ে অবস্থান করছেন। তাদের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে, এতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট।
এদিকে শিক্ষার্থীরা জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি মানা না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখান থেকে সরবেন না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রহিস উদ্দিন বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া অবধি আমারা এখানে অবস্থান নিবো। আমাদের শতাধিক শিক্ষার্থী সহ শিক্ষক, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়। এর বিচার চাই। উপর থেকে এ বিষয়ে এখনও আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। আমাদের দাবি পূরণ হবে তারপর এখান থেকে যাব।
অপরদিকে বুধবার (১৪ মে) দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সামনে থেকে সড়ক অবরোধ শেষে সড়ক ছাড়লেও বৃহস্পতিবার (১৫ মে) আবারও সড়কে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। ফলে সকাল ৮টা থেকেই শুরু হয়েছে যানজট।
সরেজমিনে ও বিভিন্ন সড়কে খোজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর মহাখালী, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, তেজগাঁও, মগবাজার, মালিবাগ, পল্টন, শাহবাগ, কাকরাইল মোড়, গুলিস্তান, মতিঝিলজুড়ে কোথাও তীব্র যানজট আবার কোথাও গাড়ির চাপ অনেক। অনেক স্থানের যাত্রীদের গণপরিবহন থেকে নেমে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হেঁটে যেতে দেখা যায়।
ব্যাংকার সেলিম হোসেন বলেন, রাজধানীতে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চলছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো মানুষের ভোগান্তির শেষ হবে না।
ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার মানেই বাড়তি চাপ। এদিন এমনিতেই সড়কে তীব্র চাপ তৈরি হয়। তারমধ্যে আজও গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্থানে সড়কে যান চলাচল বন্ধ। এ কারণে সড়কে সকাল থেকেই চাপ। সে চাপ অধিকাংশ স্থানে যানজট তৈরি করেছে। অফিসগামীযাত্রী, পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় বিভিন্ন পয়েন্টে ডাইভারশন করা হয়েছে। গুলিস্তান মতিঝিল গন্তব্য হলে নীলক্ষেত নিউমার্কেট সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ জানান তিনি।
ট্রাফিক পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলামোটর-হেয়ার রোড দিয়ে ডাইভারশন করা হয়েছে। কাকরাইলের সড়ক ক্লিয়ার করতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা শুনছেন না বরং তাদের সংখ্যা বাড়ছে। যানজট ভোগান্তিতে পড়া নগরবাসীকে বিকল্প সড়ক ও ডাইভারশন মেনে চলাচল অনুরোধ করা হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়—আগারগাঁও, মহাখালী, উড়োজাহাজ ক্রসিং, বিজয় সরণি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মালিবাগ, কাকরাইল, গুলিস্তান ও মতিঝিলজুড়ে কোথাও তীব্র যানজট, কোথাও গাড়ির অতিরিক্ত চাপ দেখা গেছে। অনেক যাত্রীকে বাস ছেড়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
ঢাকা মেডিকেলের উদ্দেশে বের হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলে যাচ্ছি। যানজটে বাস থেমে থাকায় গুগল ম্যাপে রাস্তাঘাট দেখে সিএনজিতে উঠতে বাধ্য হয়েছি।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।