Apan Desh | আপন দেশ

কুমারখালীতে ‘গাজী কালু-চম্পাবতী’ মেলায় জামায়াতের হামলা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৫৮, ২৩ মে ২০২৫

আপডেট: ১৯:০৪, ২৩ মে ২০২৫

কুমারখালীতে ‘গাজী কালু-চম্পাবতী’ মেলায় জামায়াতের হামলা

ছবি সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ‘গাজী কালু-চম্পাবতী’ মেলা বন্ধ করেছে জামায়াত। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলায় হামলা-ভাঙচুর, সংঘর্ষে, লুটতরাজ হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। সংঘাত এড়াতে প্রশাসন মেলাটি বন্ধ করে দিয়েছে।

বিএনপি এ ঘটনার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করলেও দলটি সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। 

আর কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ শুক্রবার (২৩ মে) বলেন, শত বছর ধরে চলে আসা এ গ্রামীণ মেলা শুরুর আগে থেকেই একটা উত্তেজনা ছিল। ফলে সেখানে মেলা করার প্রশাসনিক কোনো অনুমোদন ছিল না। সে কারণে মেলা বসানো নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তার জেরে সংঘর্ষে কয়েকজন আহতও হয়। তবে এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকে অভিযোগ পাইনি। 

কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা চাপাইগাছি বাজারে মঙ্গলবার (২০ মে) সন্ধ্যায় হামলা-ভাঙচুরের পর উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ‘গাজী কালু-চম্পাবতী মেলা’ বন্ধ করে দেয়া হয় বলে জানান কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ।

আরও পড়ুন<<>> দ্বীনের পথে কাউকে পরওয়া করা যাবে না: জামায়াত আমীর

আহতদের মধ্যে জামায়াতের নেতা জগন্নাথপুর ইউনিয়ন উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও মহেন্দ্রপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান, কুদ্দুস প্রামাণিক (৭০), শহিদুলের ছেলে তুহিন হোসেন, আক্কাস আলীর ছেলে জিহাদ হোসেন, শুকচাঁদের ছেলে জামাত আলী, জালালের ছেলে ইউনুস আলীর নাম জানা গেছে। তারা কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

অন্যদিকে আহত বিএনপি সমর্থকরা হলেন- খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান, বাঁখই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক টিপু সুলতান, গফুর শেখের ছেলে সুকুর শেখ, আজিজলের ছেলে শরীফ, আসাকুর রহমান। তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরের মত এবারও স্থানীয়দের উদ্যোগে ‘গাজী কালু-চম্পাবতী’ মেলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু শুরু থেকেই মাদক, জুয়া ও অশ্লীলতার অভিযোগ এনে মেলার বিরোধিতা করেন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় প্রশাসনের অনুমতি না পেয়েও ১৭ মে মেলা শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের মত এবারও বেশকিছু দোকানপাট বসে। প্রতিদিন জারি-সারি-বাউল গান হয়। আশপাশের সাধারণ মানুষের আনোগোনায় মেলাটি জমজমাট হয়ে ওঠে। জারি-সারি গান সাত দিন ধরে চললেও মেলাটি ১৫ থেকে ২০ দিন চলে।

এর মধ্যেই মঙ্গলবার বিকেল থেকে এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক কবিরুল ইসলাম বলেন, মেলা শুরুর আগে অশ্লীলতার অভিযোগ তুলে জামায়াতের নেতাকর্মীরা মেলার বিপক্ষে অবস্থান নেন। বিরোধের কারণে প্রশাসনিক অনুমোদন পায়নি মেলা কর্তৃপক্ষ। তা সত্ত্বেও স্থানীয় বিএনপির সমর্থকরা মেলা বসানোর পক্ষে অবস্থান নেন। তারপরই দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল।

আরও পড়ুন<<>> হান্নান মাসউদকে ‘শোকজ নোটিশ’ এনসিপির

হোগলা চাপাইগাছি বাজারের একজন ব্যবসায়ীর অভিযোগ, জামায়াত-শিবিরের কয়েকশ নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। অন্তত ৩০টি দোকানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট চালানো হয়েছে। লুটতরাজ হয়েছে। এসব ঘটনার ভিডিও আপনারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখতে পাবেন।

অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল রহমান বলেন, মেলায় জুয়ার আসর বসানো হয়। সেজন্য প্রশাসন অনুমতি দেননি। তবু বিএনপির নেতাকর্মী ও মেলা কমিটি মেলার আয়োজন করে।

তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, আমরা মেলার বিষয় জানতে গেলে প্রতিপক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমি এবং উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আফজাল হোসাইনসহ অনেকেই আহত হয়েছি।

মেলার পক্ষের লোক খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান বলেন, জামায়াতের শত শত লোক আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।

আরও পড়ুন<<>> কৃষক দল নেতাকে গুলি করে হত্যা

অনুমতি না থাকার পরও মেলার আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর আগেও মেলা বন্ধের জন্য জামায়াতের লোকজন নানাভাবে চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনি। এবার তাদের সঙ্গে অনেকে আছে। তাই মনে করেছে, মেলা বন্ধ করবে। প্রশাসনের কাছে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। এটা শত বছর ধরে চলছে। আমাদের কাছে এ গ্রামীণ মেলাটা করার চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা করেছি।

স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী বৃদ্ধ নাদের শেখ বলেন, শত বছর ধরে এ মেলা হয়ে আসছে। এবারই দ্যাখলাম এ মেলায় দুইপক্ষের দাবড়া-দাবড়ি। জামায়াতের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে কোমর বাঁইধি লাগিছিল। আতঙ্কে ভয়ে সবাই দোকানপাট ফ্যালা থুয়ে পালায় গিছিলো। পরে সবাই দুকানে আইসি দ্যাখে সব মালামাল লুটপাট হয়ে গেছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আফজাল হোসাইন বলেন, ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় জামায়াতের নেতাকর্মীদের উপর মেলা কমিটির লোকজন হামলা হামলা ও মারধর করেছে।

এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়