
ছবি সংগৃহীত
ইহুদিবাদী ইসরায়েলি বর্বতায় অবরুদ্ধ গাজা এক মৃত্যুর উপত্যকায় পরিনত হয়েছে। সেখানে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সীমানা বন্ধ করে ত্রাণের গাড়ি আটকে রাখা হয়েছে। ফলে অপুষ্টি ও অনাহারে মারা যাচ্ছে শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘন্টায় ভূখণ্ডটিতে আরও অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে একের পর এক ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৯ জন ছিলেন খাদ্যসাহায্য নিতে আসা মানুষ। একই সঙ্গে অনাহারে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
বেশ কয়েকটি চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে এক ড্রোন হামলায় একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন। তারমধ্যে মধ্য গাজার সালাহউদ্দিন সড়কে খাদ্যসাহায্য বিতরণকেন্দ্রের কাছে অপেক্ষমাণ সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী গোলাবর্ষণ করলে আরও পাঁচজন নিহত হন। নেজারিম করিডোরের কাছে সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা এক ব্যক্তিও প্রাণ হারান।
গাজার আল-তুফাহ এলাকায় আল-জারকা অঞ্চলে একদল বাসিন্দাকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলায় দুইজন নিহত ও বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। একই দিনে গাজার সাবরা এলাকায় ড্রোন হামলায় চারজন নিহত হন। ওই এলাকার আরেকটি বাড়িতে হামলায় শিশুরাসহ আটজন প্রাণ হারান।
শহরের উত্তর-পশ্চিমের আল-শান্তি এলাকায় এক পরিবারের বাড়িতে হামলায় আরও চারজন নিহত হন। উত্তর গাজার জাবালিয়ায় ড্রোন হামলায় চারজন নিহত হন এবং গাজার সাবরা এলাকার আল-ইস্তিজাবা মসজিদের কাছে বিমান হামলায় তিনজনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন<<>>বাংলাদেশের গণতন্ত্রে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা কামনা ড. ফয়েজের
জাবালিয়ার আল-নাজলা এলাকায় সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে আরেক ড্রোন হামলায় আরও দুজন নিহত হয়েছেন।
গাজার শেখ রাদওয়ান এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্টে হামলায় একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। একই এলাকায় বারাকা শেখ রাদওয়ান অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত মানুষের একটি তাবুতে গোলাবর্ষণে এক শিশুর মৃত্যু হয় এবং তার মা আহত হন।
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে খাদ্যসাহায্যের অপেক্ষায় থাকা মানুষের ওপর বোমা বর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে আরও তিনজন নিহত ও অনেকে আহত হন বলে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
মধ্য গাজার ওয়াদি গাজা এলাকায় সাহায্যের জন্য অপেক্ষায় থাকা মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি সেনারা সাতজনকে হত্যা ও অন্তত ১৮ জনকে আহত করেছে। গাজার সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা গাজার সাবরা ও জাইতুন এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ ও গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও পুষ্টিহীনতায় আরও দুই ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অনাহারজনিত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭১ জনে, যার মধ্যে ১১২ জন শিশু।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬২ হাজার ১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সামরিক অভিযানে বিপর্যস্ত এ ঘেরাটোপে এখন দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।
গত নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতেও (আইসিজে) বিচার প্রক্রিয়া চলছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।