Apan Desh | আপন দেশ

রাবি শিক্ষার্থী সায়মা মৃত্যুর তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

রাবি শিক্ষার্থী সায়মা মৃত্যুর তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ

ছবি: আপন দেশ

সুইমিংপুলে ডুবে মৃত্যুবরণ করা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের(রাবি) শিক্ষার্থী মোছা. সায়মা হোসেনের মৃত্যুর প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কমিটি। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। 

লিখিত তদন্ত রিপোর্ট সকলের সামনে তুলে ধরেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক উপ উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান। এসময় তিনি বলেন, সায়মা মৃত্যুর পরদিন থেকে ২১ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার, মেডিকেল ও সুইমিংপুলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ, লিখিত বক্তব্য ও অন্যান্য বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। 

তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, সায়মা সেদিন সাইকেল নিয়ে সুইমিংপুলে প্রবেশ করে তারপর সাইকেল রেখে রুমে যেয়ে পোশাক পরিবর্তন করে সাতারের জন্য নামে। এসময় তার সঙ্গে আরেকজন শিক্ষার্থীও নামে। তারা দুজন একইসঙ্গে সাতার শুরু করে। তবে তার সঙ্গে যে ছিলো সে একটু ফাস্ট ছিলো। সে এগিয়ে যায়।

সাঁতার শুরু করে ৪ টা ১২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে প্রথম লাইনেই সাঁতার কাটছিল ওয়ালের পাশে। তার পাশেই আরেকজন মেয়ে সাঁতার কাটছিলো। প্রায় ১মিনিট ঠিকভাবে সাঁতার কাটার পরেই সায়মা প্রবলেম ফেস করতে শুরু করে। সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় যে, তখন সে বার বার ডুব দিচ্ছিল এবং উঠছিল। তারপরই সে পানির নিচে তলিয়ে যায়। কিন্তু কেউ সেটা খেয়াল করে না। তার পাশে যে মেয়েটা সাতার কাটছিলো সে কয়েকবার এপাশ থেকে ওপাশে গেছে সাতার কেটে৷ সে তখনো খেয়াল করেনি। সায়মা বাদেও সেখানে ৫ জন সাতারু এবং ৩ জন প্রশিক্ষক ছিল। তাদের কারোর দৃষ্টিতেই আসেনি যে সায়মা ডুবে যাচ্ছে।

পাশের মেয়েটা সাঁতার কেটে উঠার পর সে লক্ষ করে যে তার পাশে সাঁতার কাটতে থাকা সায়মা পাশে নেই। তারপর সে যেয়ে তার ম্যাডামকে যেয়ে এ কথা বললে তারা ওয়াশরুমসহ সকল যায়গায় খুঁজে না পেলে তারপর একজন মেয়ে সায়মাকে পানির নিচে ডুবে থাকতে লক্ষ্য করে। এরপর রুনা লায়লা নামে একজন প্রশিক্ষক পানিতে ঝাপ দিয়ে সায়মাকে উঠাতে চেষ্টা করলেও তিনি উঠাতে পারেননি। এরপরে উপস্থিত আরও ২/৩ জন নামলেও সায়মাকে উঠাতে পারেনি তারা। সেখানে পানির গভীরতা প্রায় ৭ফুট ছিল যার কারণে তাকে তোলা সম্ভব হচ্ছিল না। এরপর বাইরে থেকে ডাকাডাকি করে আশপাশ থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী আসে। তাদের মধ্যে একজন পানিতে নেমে মাথার সাহায্য তাকে উপরে তুলে তারপর সবাই ধরাধরি করে তাকে উদ্ধার করা হয়। 
 
এরপর সেখান থেকে উদ্ধার রাবি মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যে ডাক্তার ছিলো তিনি জানান তখন তার পালস বিপি কিছু ছিল না। তবে সেখানে দক্ষ কর্মীর অভাবে অক্সিজেন দিতে প্রায় ১০ মিনিট বিলম্ব হয়। তারপর সেখান থেকে সায়মাকে রাজশাহী মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এ সময় অধ্যাপক ফরিদ বলেন, আমরা তার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি যে তার আগে থেকেই শ্বাসকষ্টের সমসয়া ছিল। সে ইনহেলার নিতো। তারপরেও কেন তাকে সাঁতারে অংশগ্রহন করতে দেইয়া হয় সেটার প্রশ্ন থেকেই যায়। একজন শিক্ষার্থী ডুবে যাওয়ার ২০ মিনিট পরেও কেউ কেন খেয়াল করলোনা এটার প্রশ্ন থেকেই যায়। 

তিনি আরও বলেন, তবে সাতার কাটার সময় যারা উপস্থিত ছিল বা মেডিকেলের ডাক্তারের কোনোরকম অবহেলা বা গাফিলতি আমরা লক্ষ্য করিনি। তার টের পাওয়ার পর যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। সবাই দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি করেছে। তবে মেডিকেল সেন্টারে দক্ষ নার্স বা কর্মচারী না থাকায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এছাড়া যে বিষয়টা বারবার সামনে আসছে যে প্রশিক্ষক সাতার পারে না। এটা সত্য নয়, তিনি সাতার পারেন। আমরা এখন পর্যন্ত এ তথ্যগুলো পেয়েছি বাকিটা চুড়ান্ত তদন্ত রিপোর্টে জানানো হবে।

এসময় সিনেট ভবনে উপস্থিত ছিলেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখার আলম মাসউদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান সহ বিভাগের শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাকসুর নবনির্বাচিত প্রতিনিধিরা।

এর আগে তদন্ত রিপোর্ট দিতে ৭২ ঘন্টা পার হওয়ার পরও রিপোর্ট না দেয়ার প্রতিবাদে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের প্রশাসন ভবনের সামনে টায়ার পুড়িয়েও বিক্ষোভ করতে দেখা যায়৷ 

আপন দেশ/এবি
 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়