
ছবি: সংগৃহীত
সিনেমা দেখার আগে মনে হালকা আঘাত পেলাম। জানলাম, সিনেমা নাকি পাইরেসি হয়েছে। কোটি টাকার সিনেমা, দর্শক হলে না গিয়ে কেনো মোবাইলে ফ্রি দেখবেন? তাহলে কি স্বার্থকতা বড় পর্দায় সিনেমা দেখার।
আর কারা করে এ পাইরেসি? যাই হোক এসব দেখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সিনেমাসংশ্লিষ্ট লোকেরা তো আছেন। তারাই না হয় বিষয়গুলো কঠোরভাবে দেখবেন।
এবার যাই সিনেমা দেখার প্রসঙ্গে। পরিবারসহ মোট ১০ জনের একটা টিম গেলাম মিরপুর সনি সিনেপ্লেক্সে। ভাবলাম, যেহেতু পাইরেসি হয়েছে দর্শক মনে হয় খুব একটা হবে না। তবে সিনেমা হলে প্রবেশমুখে দেখলাম উল্টোচিত্র। ১ নম্বর থিয়েটারে চলছিল শাকিব খান, জয়া আহসান, সাবিলা নূর অভিনীত ও রায়হান রাফি পরিচালিত ‘তাণ্ডব’।
পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া সিনেমা নিয়ে শুরু থেকেই চলছিল তুমুল আলোচনা। সিনেমাটি নিয়ে দর্শক রিভিউও শুরু থেকে ছিল বেশ ভালো। দারুণ সব অভিনেতা অভিনেত্রীকে একসাথে এই সিনেমায় যুক্ত করেছেন পরিচালক রায়হান রাফি। সাথে সাবিলা নূর এর শাকিবের সাথে ছিল দারুণ রসায়ন ।
অন্যদিকে, চমক হিসেবে এ সিনেমায় ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো ও সিয়াম আহমেদ।
পরাণ’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘তুফান’ থেকে ‘তাণ্ডব’-টানা চার বছর ধরে ঈদুল আজহায় সিনেমা নিয়ে আসছেন রায়হান রাফী, সবই আলোচিত। গত বছর আলোচিত তুফান-এর পর এবার তাণ্ডব নিয়ে হাজির হন এবার শাকিব–রায়হান জুটি।
এবার আসা যাক গল্পে। ‘চ্যানেল বাংলা’ টেলিভিশন চ্যানেলে আবহাওয়ার খবর পড়ছিলেন এক সাংবাদিক। এরপর শুরু হয় একজন মন্ত্রীর (ডা. এজাজ) সঙ্গে সাক্ষাৎকার। এর মধ্যেই ভেসে আসে গোলাগুলির শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাঙ্কি মাস্ক পরা একদল মানুষ চ্যানেলটির সব কর্মীকে জিম্মি করে ফেলে। মুখোশধারীদের দলনেতা স্বাধীন (শাকিব খান) লাইভ চলাকালীন গুলি করে বসেন সেই মন্ত্রীকে। এরপর মুখোশ খুলে ক্যামেরার সামনে বলে ওঠেন, ‘লেটস বিগিন দ্য শো... (চলুন, শো শুরু করা যাক)।’
আর এভাবেই চমক দিয়ে শুরু হয় ‘তাণ্ডব’। এরপর জানা যায়, স্বাধীন ছেলেটি আসলে স্বাধীন না, তার আসল নাম মিখাইল (শীর্ষ সন্ত্রাসী) । এ ঘটনায় নড়ে ওঠে প্রশাসন। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ, স্পেশাল ‘সোয়াট’ সবাই দ্রুত পরিস্থিতি সমাধান করতে ছুটে যায়। একের পর এক ঘটনার ফ্ল্যাশব্যাক। আর চমক। ভয়েস ডেলিভারিতে অন্য এক শাকিব খান। যেন নিজেকে ভেঙে চমকে দিয়েছেন তিনি।
দর্শকরা পুরো সিনেমাজুড়ে তার এবং জয়া আহসানের দৃশ্যগুলো দারুণ ইনজয় করেছেন। অনেক সময় তো মনেই হয়েছে যে, এ সিনেমায় মূল চরিত্রে আসলে তারা দুজনই।
সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান। ‘প্রিয়তমা’, ‘রাজকুমার’, ‘তুফান’, ‘দরদ’, ‘বরবাদ’-এর পর এ ছবিতেও ভিন্ন চরিত্র আর ভিন্ন লুকে এবং সংলাপে আবারো চমকে দিয়েছেন শাকিব খান। সাংবাদিক সায়রার চরিত্রে জয়া আহসান দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। সাবেক আইজিপি চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিম, ধর্মমন্ত্রীর চরিত্রে আফজাল হোসেন, টেলিভিশন চ্যানেলটির মালিক হিসেবে ছিলেন গাজী রাকায়েত হোসেন এবং সোয়াট টিমের প্রধান হিসেবে পর্দায় উপস্থিতি কম থাকলেও এফ এস নাঈম বেশ ভালো অভিনয় করেছেন।
রায়হান রাফীর সিনেমায় দেখা যায়, ওয়ান টেক শট। ‘সুড়ঙ্গ’তে সুড়ঙ্গর ভেতরে ওয়ান টেক শট, ‘তুফান’-এ হাসপাতালের ওয়ান টেক শট অনেক দর্শকেরই মনে থাকার কথা। এ ছবিতেও বিরতির ঠিক আগে চ্যানেলের ভেতরে একটি ওয়ান টেক শট আছে, আরেকটি আছে আয়রন সেল থেকে পালানোর সময়। এ দৃশ্যগুলোর জন্য রায়হান রাফি এবং ক্যামেরায় তাহসিনকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। সাথে যারা লাইট, সেটে কাজ করেছেন তাদেরও ধন্যবাদ প্রাপ্য।
শাকিব খানের প্রেমিকা নিশাতের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাবিলা নূর। এ ছবি দিয়েই বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকা হিসেবে তার অভিষেক হলো। শাকিবের সঙ্গে সাবিলার রসায়ন ভালোই জমেছিল; তবে পর্দায় দুজনের একসাথে উপস্থিতি নেহাতই কম। হয়ত কাহিনীর জন্য এমনটি হয়েছে। পরিচালক এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
সবচেয়ে কম সময় পর্দায় এসেও হাততালি পেয়েছেন আফরান নিশো ও সিয়াম আহমেদ। বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলের চরিত্রে সিয়াম আহমেদ দুর্দান্ত করেছেন। আফরান নিশো পর্দায় ফিরে এসেছেন সুড়ঙ্গ সিনেমার মাসুদ হয়ে, হাতে ট্যাটু ছিল, সেখানে লেখা ময়না। তা দেখে অনেক দর্শকের সুড়ঙ্গ সিনেমার ময়নার কথা আবার মনে পড়েছিল, খানিকটা সময় পার জানা যায়।
তুফান-এর শেষে যেমন সিকুয়েলের ইঙ্গিত আছে, এ সিনেমাতেও সেটা আছে। আর সে সিকুয়ালে হয়ত স্বাধীনের (শাকিব খান) সঙ্গে মাসুদের (আফরান নিশো) টক্কর হবে। দেখা যাক কি হয় সামনে!
সবশেষে গানের অংশের কথা বলতে হয়। ‘বরবাদ’-এর পর এ ছবির আবহসংগীতে কাজ করেন আরাফাত মহসীন । এবার তান্ডব সিনেমার আবহসংগীত নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলতেই হয়। আবারও নিজেকে প্রমাণ করেছেন তরুণ এই সংগীত পরিচালক। ‘লিচুর বাগানে’ ও ‘তোমাকে ভালোবেসে যেতে চাই’ যেন ছবিতে হঠাৎ করে চলে আসে, তবে গান দুটি অনেক দর্শক পছন্দ করেছেন।
এছাড়া রবিউল ইসলাম জীবনের লেখা ও মহসীনের গাওয়া ‘খবর দে’ গান পুরো সিনেমায় শুরু থেকে সৃষ্টি করে টানটান উত্তেজনা। তাই এ গানটিকেও পছন্দের তালিকায় রেখেছেন দর্শকরা।
সিনেমার দ্বিতীয় ভাগ, আর শেষের ১০ মিনিট দর্শকেরা বহুদিন মনে রাখবে। কারণ এই অল্প সময়ে ছিল চমকের পর চমক। এটাই এ সিনেমার মূল শক্তি। যা দেখে পরিচালককে বলতেই হবে দারুণ। তাণ্ডবের দৌড় শেষ হয়নি।
একনজরে....
সিনেমা: ‘তাণ্ডব’
ধরন: অ্যাকশন, থ্রিলার
রানটাইম: ২ ঘণ্টা ৯ মিনিট
পরিচালক: রায়হান রাফী
চিত্রনাট্যকার: রায়হান রাফী ও আদনান আদিব খান
অভিনয়: শাকিব খান, সাবিলা নূর, জয়া আহসান, আফজাল হোসেন, শহীদুজ্জামান সেলিম, গাজী রাকায়াত।
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।