ছবি : আপন দেশ
পোষ্য কোটার পুনর্বহালের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করেন শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারী মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, শাটডাউন কর্মসূচি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে জিম্মি করা হচ্ছে। বহু আগেই নিষ্পত্তি হওয়া পোষ্য কোটা ইস্যু আবার সামনে এনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে একটি ছাত্র সংগঠন তাদের মাদার সংগঠনের সহায়তায় নানা অজুহাত দাঁড় করিয়ে রাকসু নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। মূলত এ ধরনের পদক্ষেপের উদ্দেশ্য শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা এবং দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত নির্বাচন বানচাল করা ছাড়া আর কিছু নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত রাকসু নির্বাচন বানচাল করা ও শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একটি গোষ্ঠী পোষ্য কোটার মতো মীমাংসিত একটি ইস্যু সামনে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম অচল করে দিয়েছে। কতিপয় শিক্ষক তাদের রাজনৈতিক ব্যানারে সক্রিয় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তাদের উসকানিমূলক বক্তব্যে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করছে।
তিনি আরো বলেন, কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারীদের এ ধরনের শাটডাউন কর্মসূচি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তারা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে চাইছে, যদি আবারো ক্লাস, পরীক্ষা, লাইব্রেরি ও রাকসু নির্বাচনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম চালু করতে চাও, তবে অবশ্যই তাদের ‘পোষ্য কোটা’ মেনে নিতে হবে। এছাড়া একটি ছাত্র সংগঠন তাদের মাদার সংগঠনের সহায়তায় রাকসু নির্বাচন বানচাল করার ফন্দি আঁটছে। নানা অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রও অব্যাহত রেখেছে তারা।
আরও পড়ুন<<>>৬ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কিছু শর্তসাপেক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার নামে ফিরিয়ে দেয়া হয় পোষ্য কোটা। এ ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। কয়েকজন বসে পড়েন আমরণ অনশনে। এ সময় অসুস্থ হয়ে চারজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পোষ্য কোটাকে কেন্দ্র করে গত ২০ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উত্তেজনা বিরাজ করে ক্যাম্পাসে। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যদিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।
এদিকে ‘শিক্ষক লাঞ্ছনার’ বিচার নিশ্চিত ও প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার (পোষ্য কোটা) দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে এ কর্মসূচি পালন করছেন। এতে পাঠদানের পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে অবস্থান নেন তারা। মঙ্গলবার প্রশাসনের সঙ্গে সভা করেও সমাধান না হওয়ায় তারা এ কর্মবিরতি পালন করছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন।
এ সময় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব উপ-উপাচার্যকে লাঞ্ছনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এর আগেও নামধারী কিছু ছাত্র আমাদের সহকর্মীদের আটকে রেখেছিল। আমরা এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো আশ্বাস পাইনি। তাই আমাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপ-উপাচার্য আমাদের সঙ্গে বসেছিলেন। কিন্তু তারা আমাদের দাবির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। আমরা বুধবার আবার বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে কথা বলব। বুধবার আমাদের শাটডাউন বহাল আছে। পরবর্তী কর্মসূচি সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।
