
প্রতীকী ছবি
আজকের যুগে নিজেকে ব্যস্ত মনে করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কর্মজীবনের চাপ, পারিবারিক দায়িত্ব আর সামাজিক দায়বদ্ধতা—সবকিছু সামলাতে গিয়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের জন্য সময় বের করতে পারি না। ব্যস্ততার এ অজুহাতে কোরআন তিলাওয়াত থেকে দূরে সরে যাওয়া কি উচিত? আসুন, এ ব্যস্ততার ফাঁকেই কোরআন খতম করার কিছু সহজ কৌশল জেনে নিই।
কোরআন তিলাওয়াতের ফজিলত
কোরআন তিলাওয়াত শুধু একটি ইবাদত নয়, এটি আমাদের মন ও আত্মাকে প্রশান্ত করে। যখন আমরা হতাশ বা সবকিছু এলোমেলো মনে হয়, তখন কোরআন তিলাওয়াত বা এর অডিও শুনলে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব হয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে, তার জন্য এর সওয়াব আছে। আর সওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসাবে। আমি বলি না যে আলিফ-লাম-মিম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ x মিম একটি হরফ। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৯১০)
এ হাদীস থেকে বোঝা যায়, কোরআন তিলাওয়াতের প্রতিটি অক্ষরই কতটা মূল্যবান। যারা কোরআন পড়তে জানেন, তারা সত্যিই সৌভাগ্যবান, কারণ তারা সরাসরি সৃষ্টিকর্তার বাণী পাঠ করতে পারেন।
কোরআন খতমের সঠিক সময়
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তিন দিনের কম সময়ে কোরআন খতম করে, সে বুঝতে পারে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,০৫৪)। অন্যদিকে, আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) প্রতি সাত দিনে কোরআন খতম করতেন। এটি প্রমাণ করে যে, বুঝে-শুনে ধীরে সুস্থে কোরআন পড়াই সর্বোত্তম।
রমজানে অনেকেই কোরআন খতম করেন। কিন্তু রমজানের বাইরেও যদি আমরা নিয়মিত এ অভ্যাস ধরে রাখতে পারি, তবে আমাদের জীবন আরও বরকতময় হবে। এর জন্য প্রয়োজন শুধু একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা x দৃঢ় সংকল্প।
ব্যস্ততায় কোরআন খতমের সহজ উপায়
বছরে অন্তত একবার কোরআন খতম করাও সম্ভব, যদি আমরা প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়ার অভ্যাস করি। কোরআন ৩০ পারা x প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠা। এর সহজ হিসাব হলো, প্রতিদিন মাত্র দুই পৃষ্ঠা করে পড়লে ৩০০ দিনে এক খতম সম্পন্ন হয়। আর প্রতিদিন পাঁচ পৃষ্ঠা পড়লে বছরে দুবার খতম করা সম্ভব। এটি কঠিন কোনো কাজ নয়, মাত্র ১৫-২০ মিনিট সময় বের করলেই হয়।
১. অফিসে যাতায়াতের সময়: আমাদের অনেকে বাস, রিকশা বা গাড়িতে অফিসে যাই। এ সময়টা আমরা অযথা ফেসবুক স্ক্রল করে বা শর্টস দেখে নষ্ট করি। এর পরিবর্তে যদি ১৫-২০ মিনিট কোরআন তিলাওয়াত বা এর অডিও শোনা হয়, তাহলে সহজেই কয়েকটি পৃষ্ঠা পড়া হয়ে যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কারো ইসলামের সৌন্দর্য এটাই যে সে অপ্রয়োজনীয় বিষয় ত্যাগ করে। (তিরমিজি, হাদিস: ২৩১৮)
২. দুপুরের খাবারের বিরতি: অফিসের দুপুরের খাবারের বিরতি প্রায় এক ঘণ্টা থাকে। এর থেকে মাত্র ১০ মিনিট সময় আলাদা করে কোরআনের জন্য রাখলে তা আমাদের কাজে বরকত এনে দিতে পারে। জোহরের নামাজের পর এ সুযোগটি কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রতিদিন এভাবে কয়েকটি পৃষ্ঠা পড়া কঠিন নয়।
৩. ঘুমানোর আগে: রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অনেকেই ফোনে দীর্ঘ সময় কাটান। এ সময়টুকুতে যদি আপনি সুরা মুলক তিলাওয়াত করেন, যেমনটি রাসুলুল্লাহ (সা.) করতেন, তাহলে এর সাথে আরও একটি পৃষ্ঠা যোগ করে পড়তে পারেন। এতে আপনার কোরআন খতমের গতি আরও বাড়বে।
৪. ভোরের বরকতময় সময়: ফজরের পরের সময়টি খুবই বরকতময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার উম্মতের জন্য দোয়া করেছেন, হে আল্লাহ, আমার উম্মতের সকালকে বরকতময় করুন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৬০৬)
যারা ভোরে উঠতে পারেন, তাদের জন্য এটি একটি সোনালি সুযোগ। মাত্র ১০-২০ মিনিট সময় ব্যয় করে ২ থেকে ৫ পৃষ্ঠা কোরআন তিলাওয়াত করা সম্ভব।
প্রযুক্তির ব্যবহার
কোরআন খতমের এ পরিকল্পনাকে আরও সহজ করতে আপনি কিছু মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। যেমন: 'কোরআন কম্প্যানিয়ন' বা 'তারতীল' (Tarteel)। এ অ্যাপগুলো আপনার প্রতিদিনের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে সাহায্য করবে। যারা কোরআন শিখছেন, তাদের জন্য অডিও তিলাওয়াত শুনে মিলিয়ে পড়ার সুযোগও আছে।
সময় ও সুস্থতার কদর
হাদিসে এসেছে, দুই নিয়ামত আছে, যার বিষয়ে অনেক মানুষ প্রতারিত—সুস্থতা ও অবসর। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪১২)
আসুন, আমরা আমাদের মূল্যবান সময়কে কাজে লাগাই। ব্যস্ততা কখনো কমে না, বরং আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা সময়কে কীভাবে কাজে লাগাব। নিয়মিত অল্প অল্প করে তিলাওয়াত করার অভ্যাস গড়ে তুললে ইনশাআল্লাহ একদিন আমরা পুরো কোরআন খতম করতে পারব। শুধু প্রয়োজন একটুখানি পরিকল্পনা আর একটি দৃঢ় সংকল্প।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।