ছবি : আপন দেশ
জুলাই জাতীয় সনদকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে ফের উত্তাপ। অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে আদৌ সনদ বাস্তবায়নের এখতিয়ার আছে কি না- এ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দুই ভিন্ন সুর তুললেও উদ্দেশ্য এক- অনিশ্চয়তা তৈরি করা এবং নিজেদের রাজনৈতিক বাজার সচল রাখা।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএনপি যেখানে সংবিধানগত প্রশ্ন তুলছে, সেখানে অনেকের চোখে ‘ঘুম ভাঙা’ জামায়াত হঠাৎ নৈতিক বোধের ঠিকাদার সেজেছে- এ দৃশ্য নিজেই রাজনৈতিক রসিকতা তৈরি করছে।
বিএনপি বলছে ‘ক্ষমতা নেই’- গণভোট অযৌক্তিক
বনে শেয়ালের চিকিৎসা আর রাজনীতিতে ‘হঠাৎ আইনের খাতির’—দুটোরই মিল আছে, মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশ জারির ক্ষমতা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। তার দাবি, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং এটি অগণতান্ত্রিক। কিছু বিষয় সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলেও অভিযোগ দলটির।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, কমিশনের আলোচনায় ভিন্নমতের জায়গা উপেক্ষা করে একতরফা সিদ্ধান্তের চেষ্টা চলছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের উদ্যোগ জাতিকে বিভক্ত করবে বলেও তার আশঙ্কা।
বিএনপির সুর এবার তুলনামূলক ভারসাম্যমূলক; অন্তত নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিশ্বাস অটুট রাখার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। তবে দলটি মনে করিয়ে দিয়েছে- গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক নির্দেশ চাপিয়ে দেয়া হলে জনগণ মানবে না। বিএনপিও চুপ করে থাকবে না।
জামায়াতের ‘তীব্র আবেদন’, নাকি তাড়াহুড়া?
এদিকে রাজধানীর মগবাজারে আলফালাহ মিলনায়তনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের নাটকীয় ভাষায় দাবি করেন-শুক্রবারের (৩১ অক্টোবর) মধ্যেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ দিতে হবে। তিনি বলেন, দেরি হলে ‘জনগণ সরকারের ওপর আস্থা হারাবে’।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্বাধীনতাবিরোধী অতীতের দায়ে ঘনঘোর সংকটে থাকা জামায়াতের হঠাৎ ‘জনমত পাহারাদার’ হয়ে ওঠা কিছুটা হাস্যরসের জন্ম দেয়। বহুজন মনে করছেন, রাজনৈতিক মাঠে হারানো অবস্থান ফিরে পেতে দলটি এখন সনদের দোহাই দিয়ে ‘সততার শিক্ষক’ সাজার চেষ্টা করছে।
তাদের দাবি যত জোরালো, সমালোচনাও তত প্রবল- এ সনদ তাড়াহুড়ো করে বাস্তবায়ন হলে কি রাষ্ট্রীয় কাঠামো বদলাবে, নাকি তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দরজা খানিকটা খুলবে- এ প্রশ্ন জনমনে রয়ে গেছে।
কেন কাল? কেন তড়িঘড়ি?
সনদটি বাস্তবায়নের গতির প্রশ্নে কেউ বলছে বৈধতা চাই, কেউ বলছে আজই চাই। কিন্তু গণআন্দোলনের ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব- স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন। বাস্তবায়নের গতিবিধি নিয়ে তাড়াহুড়ো যত বাড়ছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ ততই।
জুলাই সনদ কি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের রোডম্যাপ, নাকি কিছু দলের সুযোগসন্ধানী টিকিট- এ নিয়ে বিভাজন স্পষ্ট। বিএনপি আইনের প্রশ্ন তুলছে, জামায়াত আবেগের। যদিও জনমতের বড় অংশ জানতে চায়- নির্বাচন স্বচ্ছ করার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করাই কি প্রথম কাজ নয়?
এ মুহূর্তে বড় ছবি পরিষ্কার- দেশ জানতে চায় বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, আর দলগুলো চাইছে নিজেদের সুবিধাজনক ফরমুলা। একদিকে সতর্ক বিএনপি, অন্যদিকে তড়িঘড়ি জামায়াত-দুই রাজনীতি মিলিয়ে দেশের মানুষ ভাবছে, জুলাই সনদ কি সত্যিই গণতন্ত্রের ‘কাল’ নির্ধারণ করবে, নাকি রাজনৈতিক নাটকের পরবর্তী অঙ্ক শুধু?
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































