
লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
ওয়ান ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থিতে তৎকালীন সরকারের রোষানলে পরে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হন তারেক রহমান। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য তাকে যেতে হয় যুক্তরাজ্যে। দীর্ঘ দিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি। তারপর দেশে ফেরার ইচ্ছে থাকলেও সম্ভব হয়নি ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের নানামুখী বাঁধার কারণে। ফলে লন্ডনেই থিতু হন তারেক রহমান। এরপর কেটে গেছে দেড় যুগ।
লম্বা এ সময়ে তার জীবনে ঘটেছে নানা ঘটনা। একমাত্র ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে হারিয়েছেন। মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনার রোষানলে পড়ে যেতে হয় কারাগারে। তখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে গুরু দায়িত্ব নিতে হয় তারেক রহমানকে।
মায়ের অবর্তমানে সেখান থেকে অত্যন্ত পরিচ্ছন্নভাবে দল পরিচালনা করেন তিনি। সে সঙ্গে নেতৃত্ব দেন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে। দীর্ঘ আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত বছরের জুলাই আগস্টে আসে সফলতা। সে সময় কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সব মত পথ এক হয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।
বাংলাদেশের মানুষ এখন ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচারমুক্ত। তারেক রহমানও প্রায় সবগুলো মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। কর্মী সমর্থক ও দেশবাসী তার ফেরার অপেক্ষা দিন গুনছেন। শিগগিরই হয়তো দেশে ফিরবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
লন্ডনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ সময়ে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত তারেক রহমান অনেক বদলে গেছেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। নিরাপত্তা নিয়ে নেই কোনো বাড়াবাড়ি। অত্যন্ত সাধারণ ভাবে চলাফেরা করেন তিনি। ব্যক্তিগত গাড়ি থাকা সত্বেও পাবলিক বাসে চলাফেরা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ যেন পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিচ্ছ্ববি।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারেক রহমানের বেশ কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি স্থানীয় বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে আছেন তারেক রহমান। তারপর বাস আসলে সেটিতে উঠে পড়েন তিনি। এরপর গন্তব্যে পৌঁছে সে বাস থেকে নামার দৃশ্যও ছবিতে উঠে এসেছে। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান হয়েও একজন সাধারণ যাত্রীর মতোই লোকাল বাসে উঠেছেন তারেক রহমান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ছবিগুলো ছড়িয়ে ব্যপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।
আরও পড়ুন<<>>নাগরিকদের কথা শুনে সরকার পরিচালনা করতে হবে: তারেক রহমান
জানা গেছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার (০১ আগস্ট) সকালে লন্ডনের শহরের উত্তরে এক নিরিবিলি বাসস্টপে অপেক্ষমাণ তারেক রহমান। হাতে মোবাইল, পরনে হালকা নীল শার্ট, খাকি রঙের প্যান্ট, আর পায়ে সাধারণ একজোড়া স্নিকার্স। তিনি বসে আছেন জনসাধারণের জন্য নির্ধারিত লাল বেঞ্চে। কিছুক্ষণ পরেই এসে থামে একটি লাল ডাবল-ডেকার বাস। মানুষজনের সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওঠে পড়েন সে বাসে—কোনো নিরাপত্তা রক্ষী, ঝলমলে প্রটোকল বা গাড়ির বহর নেই। একটি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও তার এ সাধারণ জীবনযাপন তাকে প্রশংসা এনে দিয়েছে।
জানা গেছে, ছবিগুলোর মধ্যে নিউ ভিক্টোরিয়া হসপিটাল বাসস্টপেজ থেকে তোলা একটি ছবিতে দেখা যায় তিনি সাধারণ যাত্রীর মতো লোকাল বাসের জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন, সময় কাটাচ্ছেন নিজের মোবাইল ফোনে কিছু একটা পড়ে। একটি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও তার গণপরিবহন ব্যবহারের এ দৃশ্য নেটিজেনদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ছবিগুলোর কমেন্টে দেখা যায়, অনেকেই দেখছেন এক ধরনের ‘অ্যান্টি-ভিআইপি’ রাজনীতির বার্তা হিসেবে। যেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নেতাদের জন্য আলাদা গেট, নিরাপত্তা বলয় ও বিলাসবহুল বাহনই নিয়ম—সেখানে একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা সাধারণ বাসে যাতায়াত করছেন, তা নিঃসন্দেহে এক ভিন্ন বার্তা বহন করে।
নেটিজেনরা বলছেন, এ ধরনের আচরণ শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার ব্যক্তিগত নম্রতার পরিচায়ক নয়, বরং এটা তার নেতৃত্বদানের দর্শনেরও প্রতিফলন—যেখানে রাষ্ট্রনায়ক ও জনগণের মাঝে কোনো প্রাচীর থাকে না।
ছবিগুলো শেয়ার করা হয়েছে বিএনপির ফেসবুক পেইজেও। সেখানে লেখা হয়েছে- সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত তারেক রহমান। যুক্তরাজ্যে বসবাসকালীন সময়ে কোনো ভিআইপি সুবিধা গ্রহণ না করে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলাচল করেন সাধারণ মানুষের মতোই।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার পর তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারেক রহমান প্রায় সব মামলায় অব্যাহতি পান।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।